প্রতিশ্রুতি থাকার পরও সেবাপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নেই সরকারের।
চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে দেশের সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে দরিদ্রের সংখ্যা। আরেকটি ৭৪ এর প্রেক্ষাপট সৃষ্টির আগেই সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
, ২৬ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ১৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মন্তব্য কলাম
দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, চিকিৎসা ইত্যাদি সেবা পণ্যের দফায় দফায় অগ্নি মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা পরিমাপ করা কঠিন। তবে এতটুকু নিশ্চিত করে বলা যায় যে, বাংলাদেশে বহু মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে। বাংলাদেশের বহু মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে। অনেক মানুষ তাদের ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দরিদ্র হয়ে গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণ জনগণের সংসার খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০%। লেখাপড়ার খরচ, বাসাভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল সবই বেড়েছে। তার উপর নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তো আকাশছোঁয়া। খারাপ মানুষ এবং অসৎ উপার্জনকারী ছাড়া সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। আর ব্যবসায়িক মন্দার অন্যতম প্রধান কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। একজন সবজি বিক্রেতা সবজি বিক্রি করে ভালো আয়-রোজগার করলেও অপরাপর সব খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি আয়েও তার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দোকান ভাড়া বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া বৃদ্ধি, কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি বেচাকেনা কমে যাওয়ায় তারা বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করেও আগের মতো লাভ করতে পারছে না বলে জানায়। এদের অনেকের আবার আয় বেড়েছে ঠিকই; কিন্তু ব্যয় তুলনামূলকভাবে অধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়তি আয়েও সংসার চলছে না। টিকে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে অনেকে বড় ব্যবসা ছেড়ে ছোট ব্যবসায় যাচ্ছে। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে মেসে উঠছে।
সেবাপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধনী আর দরিদ্রের ব্যবধান আরও প্রকট হচ্ছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়ছে দ্রুতগতিতে। নিম্নবিত্তরা সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় কিছু সুবিধা পেলেও বাড়তি ব্যয়ের চাপে পিষ্ট মধ্যবিত্তরা। এর ফলে কমছে জীবনযাত্রার মান। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে কোনমতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটার প্রতিফলন ঘটেনি। দেশে বেকার সমস্যা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তেমন কোন গতি দেখা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রয়ক্ষমতা কমছে। কিন্তু পণ্যমূল্য ও সেবার দাম বেড়েছে। বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা যায় গত ১ বছরে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় প্রায় ৩০% বেড়েছে।
এদিকে, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করছে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে কোনো বিশেষ চক্র এভাবে একটার পর একটা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু ভোক্তাদের অভিযোগ, দেশের পরিস্থিতি এমন যে সাধারণ গরিব মানুষের অধিক দামে পণ্যক্রয়ের কষ্ট বোঝার বা দেখার কেউ নেই। কোনো কিছুর উপরই যেন সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।
বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে প্রধানত দায়ী করা হয় সিন্ডিকেটকে। এই সিন্ডিকেট দেশের প্রতিটি দ্রব্যের খাত কব্জা করে রেখেছে। চিনি, চাল, তেল, লবণ এমন কোনো খাত নেই যেখানে এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম নেই। আর এই দৌরাত্ম এক দুই বছর নয় বরং কয়েক যুগ ধরে চলে আসছে। কিন্তু কোনো সরকারই ক্ষমতায় এসে এই সিন্ডিকেটদের নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। তাদের লাগাম টেনে ধরছে না। বর্তমান সরকারেরও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বস্তুত বাজার নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। দুর্বল বাজার মনিটরিং, অসৎ আমদানিকারক, উৎপাদক, পরিবেশক, সরবরাহকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, অকার্যকর টিসিবি, সর্বোপরি ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে আদৌ কোন সমন্বয় না থাকাও দ্রব্যমূল্যের দামবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। যে কারণে ভোক্তা ক্রেতাস্বার্থ অধিকার এবং সংরক্ষণ বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। দিনের পর দিন মূল্যবৃদ্ধির চক্রে পড়ে আর্থিকভাবে দৈন্য হয়ে যাচ্ছে জনগণ।
সমালোচক মহলের মতে, সরকার ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনা না করে সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করছে। এজন্য ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সবাই। অথচ অসৎ ব্যবসায়ীরা পণ্যমূল্য বাড়িয়েই চলছে। সরকার তাদের কিছুই করতে পারছে না। সরকার যদি সামান্য কঠোর হতো তাহলেই এই অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পণ্যমূল্যের দাম বাড়াতে পারতো না। পাশাপাশি, সরকার টিসিবির কার্যক্রম যদি সারাদেশে চালু করতে পারতো এবং পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারতো তাহলে তা বাজার নিয়ন্ত্রনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারতো। কিন্তু সরকারের টিসিবির কার্যক্রমও একপ্রকার ব্যর্থ।
এক কথায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এটি কঠোরভাবে সরকারের দমন করা উচিত। এখন কঠোর পদক্ষেপ না নেয়া হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আমরা মনে করি।
তাই সার্বিক পরিস্থিতির নিরীখে সরকার উচিত, সেবাপণ্যের দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা। নিত্যপণ্য, পানির দাম, তেলের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জন অসন্তোষ সৃষ্টি না করে জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্ভোগের মুখে না ফেলে এসবের দামে সমন্বয় নিয়ে আসা। প্রতিটি সেবাপণ্য খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করা, খাতগুলো যাতে লোকসানী হয়ে না যায় সে বিষয়ে বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
অভিজ্ঞমহল মনে করছে, এখনই সক্রিয় ও সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে জনগণের সামনে আরেকটি ৭৪ দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার যৌথভাবে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকরা লাভবান হলেও চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর দারিদ্রসীমায় চলে যাচ্ছে অর্ধকোটি মানুষ চিকিৎসার সরকারি ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে। তারপরও মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েই চলেছে। যার বড় একটি কারণ চিকিৎসকদের একটি অংশের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ সরকারকে সত্ত্বর ব্যবস্থা নিতে হবে।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
খাবারের নামে আমরা কী খাচ্ছি? ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা। ভেজাল দমনে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রক্ত নিয়ে বাণিজ্য- মেশানো হচ্ছে স্যালাইন, লবণ পবিত্র দ্বীন ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ব্যতীত রক্ষা নেই
২২ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তথাকথিত ইসলামী ব্যাংকগুলো আদৌ ইসলামী নয়। সুদবিহীন ব্যাংক নয়। দ্বীনদার, পরহেজগার মুসলমানের জন্য সুদবিহীন ইসলামী ব্যাংকের সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
২১ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গঃ জবরদখলে থাকা সরকারি সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, খাস জমি অথবা রেলওয়ের বেহাত জমি। পরিত্যক্ত জমির হিসাব ভূমি মন্ত্রণালয়ে নেই। উদ্ধারেও সক্রিয় ও জোরদার তৎপরতা নেই।
২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সবজি উৎপাদন ১২ বছরে ৭ গুন বাড়লেও বাড়ছেনা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন। উৎপাদন পর্যায়েই সবজিতে মিশছে ২০ গুন বিষাক্ত কীটনাশক। ক্যান্সার, প্যারালাইসিস, কিডনি রোগ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছেই।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ভূমি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় আইন-কানুন জানেনা দেশের সিংহভাগ মানুষ পাঠ্যপুস্তকে ভূমি বিষয়ক আইন ও নিয়মকানুন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
১৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষ সমৃদ্ধি অর্জনের নতুন সোপান। অশিক্ষিত-শিক্ষিত সব বেকারেরই ভাগ্য বদলের উছীলা।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শুধু অর্থনৈতিক উন্নতিই মুসলমানদের জন্য উন্নয়ন হিসেবে গৃহীত হতে পারেনা। আমরা মধ্যম আয়ের দেশ নয়; নিদেন পক্ষে মধ্যম ত্বাকওয়ার মুসলমানের দেশ চাই।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সংবিধান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিরোধী আপত্তিকর শব্দ প্রকাশের বিপরীতে মহান আল্লাহ পাক উনার ‘কুদরত’ ও ‘রহমত’ এ ছিফত মুবারক দ্বয়ের ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে
০৯ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি? তাহলে কী রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিত নয়- ছবি না তুলে, বেপর্দা না হয়ে দ্বীনদার মুসলমানরা যাতে সাংবিধানিক সুযোগ পায় সে অধিকার সংরক্ষিত করা। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা।
০৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)