মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَسْرَعُكُنَّ بِي لُحُوقًا أَطْوَلُكُنَّ يَدًا ، قَالَتْ : فَكُنَّ يَتَطَاوَلْنَ أَيُّهُنَّ أَطْوَلُ يَدًا ، قَالَتْ : فَكَانَ أَطْوَلَنَا يَدًا زَيْنَبُ لأَنَّهَا كَانَتْ تَعْمَلُ بِيَدِهَا وَتَتَصَدَّقُ.

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের মদ্যে যাঁর সম্মানিত ও পবিত্র হাত মুবারক লম্বা তিনি সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা পরস্পর হাত মুবারক মেপে দেখতেন যে, কার হাত মুবারক সবচেয়ে লম্বা। আমাদের মধ্যে লম্বা হাত মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি। কেননা, তিনি নিজ হাত মুবারক-এ কাজ করে, সেই অর্থ দান করতেন। ” সুবহানাল্লাহ! (ছহীহ্ ইবনে হিব্বান ৮/১০৮)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,

فكنا إذا اجتمعنا في بيت إحدانا بعد وفاة رسول اللَّه صلّى اللَّه عليه وسلّم نمدّ أيدينا في الجدار نتطاول، فلم نزل نفعل ذلك حتى توفيت اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ السَّابِعَةُ سَيِّدَتُنا حَضْرَتْ اَطْوَلُ يَدًا عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ)، وكانت امرأة قصيرة، ولم تكن بأطولنا، فعرفنا حينئذ أنّ النبيّ صلّى اللَّه عليه وسلّم إنما أراد طول اليد بالصدقة، وكانت زينب امرأة صناع اليدين، فكانت تدبغ وتخرز وتتصدق به في سبيل.

অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আমরা সবাই যখন আমাদের কোনো একজনের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ-এ একত্রিত হতাম, তখন আমরা সকলে আমাদের হাত মুবারক লম্বা করে দেয়ার সাথে লাগিয়ে মেপে দেখতাম যে, আমাদের মধ্যে কার হাত মুবারক সবচেয়ে লম্বা। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত আমরা এ রকম করতাম। তিনি তত বেশি লম্বা ছিলেন না এবং উনার সম্মানিত হাত মুবারকও আমাদের সকলের চেয়ে বেশি লম্বা ছিলো না। যখন তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক করলেন, তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাতের প্রশস্ততা (আত্বওয়ালু ইয়াদান) দ্বারা দান-ছদক্বাহ বুঝিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি হাতের কাজে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। তিনি দাবাগাত এবং সেলাই কাজ করে, অর্জিত সমস্ত অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিতেন। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবাহ্ ৮/১৫৪)

কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

مَا تَرَكَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ جَحْشٍ دِرْهَمًا وَلَا دِينَارًا كَانَتْ تَصَدَّقُ بِكُلِّ مَا قَدَرَتْ عَلَيْهِ وَكَانَتْ مَأْوَى الْمَسَاكِينِ

অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম তিনি যায়নাব বিনত জাহশ দিরহাম-দীনের কিছুই রেখে যাননি। কারণ উনার সম্মানিত হাত মুবারক-এ যা কিছু আসতো সমস্ত কিছুই দান করে দিতেন। তিনি ছিলেন ফক্বীর-মিসকীনদের আশ্রয়স্থল। ” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/১১৪)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

كان عطاء اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ السَّابِعَةُ سَيِّدَتُنا حَضْرَتْ اَطْوَلُ يَدًا عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ زَيْنَبُ عَلَيْهَا السَّلَامُ) اثني عشر ألفا لم تأخذه إلا عاما واحدا، فجعلت تقول: اللَّهمّ لا يدركني هذا المال من قابل فإنه فتنة، ثم قسمته في أهل رحمها وفي أهل الحاجة، فبلغ عمر، فقال: هذه امرأة يراد بها خير، فوقف عليها، وأرسل بالسلام، وقال: بلغني ما فرقت. فأرسل بألف درهم تستبقيها، فسلكت به ذلك المسلك.

অর্থ: “দ্বিতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার জন্য বাৎসরিক ১২ হাজার দিরহাম ভাতা নির্ধারণ করেন। কিন্তু তিনি কখনও তা গ্রহণ করেননি। একবার তিনি তা গ্রহণ করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোআ করেন,

اللَّهمّ لا يدركني هذا المال من قابل فإنه فتنة

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আগামীতে এই সম্পদ যেন আমাকে আর না পায়। এই সম্পদ হচ্ছে মানুষের জন্য পরীক্ষা। ”

তারপর তিনি দিরহামগুলো আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-মিসকীনদের মাঝে বণ্টন করে দেন। সুবহানাল্লাহ! এ সংবাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পৌঁছলে, তিনি বলেন,

هذه امرأة يراد بها خير

অর্থ: তিনি এমন একজন সুমহান ব্যক্তিত্বা মুবারক যে, উনার থেকে শুধু খায়ের-বরকতই আশা করা যায়। সুবহানাল্লাহ!

তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র হুজরা শরীফ উনার নিকট গিয়ে উনার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সালাম পেশ করেন। তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, আপনি যে সমস্ত সম্পদ বণ্টন করে দিয়েছেন, সে সংবাদ আমার কাছে পৌঁছেছে। তারপর তিনি উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এক হাজার দিরহাম পাঠান উনার খরচের জন্য। তিনি সেগুলিও পূর্বের ন্যায় দান করে দেন। ” সুবহানাল্লাহ! (শরহুয যারক্বানী ৪/৪১৫, ইবনে সা’দ)

কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি হযরত বারযাহ্ বিনতে রফি’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন (বাৎসরিক) হাদিয়া বের করা হলো, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার জন্য নির্ধারিত সম্মানিত হাদিয়া মুবারক পাঠান। যখন উনার সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম নিকট পেশ করা হলো, তখন তিনি বলেন- ‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত করুন! এই বণ্টিত সম্পদ আমার থেকেও অধিক হক্বদার হচ্ছেন সম্মানিত মুসলমান উনারা। উনারা বললেন, এর পুরাটাই আপনার জন্য। তিনি বলেন, সুবহানাল্লাহ! (মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও পবিত্র এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আমরাও পবিত্র। ) আর তিনি দিরহামগুলো কাপড় দ্বারা ঢেকে ফেললেন এবং বললেন, দিরহামগুলো ঢেলে দাও এবং তার উপর কাপড় রাখো। অত:পর আমাকে বললেন, আপনার হাত প্রবেশ করিয়ে এক মুষ্টি পরিমাণ গ্রহণ করে তা নিয়ে ওমুক, ওমুক গোত্রের উনার নিকটাত্মীয় এবং ইয়াতীমদের নিকট যান যতক্ষণ পর্যন্ত কাপড়ের নিচে কিছু বাকি থাকে। তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাবি‘য়াহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত বারযাহ্ বিনতে রফে’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার মহাসম্মানিত শান-মান মুবারক প্রকাশ করে দিন! মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এটার মধ্যে আমাদের হক্ব রয়েছে। তখন তিনি বলেন, কাপড়ের নিচে যা আছে, তা আপনাদের জন্য। অত:পর আমরা কাপড়ের নিচে ৮৫ দিরহাম পেলাম। তারপর সম্মানিত দো‘য়া মুবারক করেন,

اللَّهُمَّ لاَ يُدْرِكُنِي عَطَاءٌ لِعُمَرَ بَعْدَ عَامِي هَذَا فَمَاتَتْ

‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! এই বছরের পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার (বাৎসরিক) হাদিয়া যেন আমাকে না পায়। অত:পর তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। ” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/১০৯)



-আল্লামা ছিদ্দীকুর রহমান।