ইসলামী শরীয়ত উনার আলোকে পর্দার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
, ০২রা শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৫ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَقَرْنَ فِىْ بُيُوْتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْـجَاهِلِيَّةِ الْاُوْلٰى ۖ
অর্থ : (হে মহিলা উনারা!) তোমরা তোমাদের ঘরের মধ্যে পর্দার সাথে অবস্থান করো, জাহিলিয়াত যুগের মেয়েদের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করোনা। (পবিত্র সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৩৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ الْـمَرْاَةَ عَوْرَةٌ فَاِذَا خَرَجَتْ اِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহিলারা পর্দায় থাকবে। যখনই তারা বেপর্দাভাবে বাইরে বের হয়, শয়তান তখন উঁকি-ঝুকি দেয় (তাদের দ্বারা পাপ কাজ সংগঠিত করার জন্য)। নাঊযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে,
عَنْ حَضْرَتِ الْـحَسَنِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مُرْسَلًا قَالَ بَلَغَنِىْ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَعَنَ اللهُ النَّاظِرَ وَالْـمَنْظُوْرَ اِلَيْهِ.
অর্থ : হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসালসূত্রে বর্ণনা করেন। আমার কাছে (হাদীছ শরীফ) পৌঁছেছে যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দেখনেওয়ালা আর দেখানেওয়ালী উভয়ের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লানত। নাঊযুবিল্লাহ! (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
ওয়াক্বিয়া : ১
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়, একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসা আলাইহাস সালাম ও হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাদেরকেসহ বসা ছিলেন। এমন সময় ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আসতে লাগলেন, যিনি চোখে দেখতে পেতেন না। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনারা ভেতরে চলে যান। তখন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি তো চোখে দেখেন না। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তিনি আপনাদের দেখছেন না সত্যিই আপনারা কি উনাকে দেখবেন না?”
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, পুরুষদের জন্য গাইরে মাহরাম মহিলাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেরূপ কবীরা গুণাহ্, তদ্রƒপ মহিলাদের জন্যও গাইরে মাহরাম পুরুষের দিকে দৃষ্টি দেয়া কবীরা গুণাহ্।
ওয়াক্বিয়া : ২
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একদিন উনার আওলাদ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’ আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলেন। এমন সময় উনার একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ মনে পড়ে যায় এবং সাথে সাথে তিনি দৌড় দেন।
যেহেতু তিনি সাধারণ লোকের চেয়ে বেশ লম্বা ছিলেন, সেহেতু দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় দরজার চৌকাঠে উনার কপাল মুবারক লেগে কপাল মুবারক ফেটে যায়, তিনি এ অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ হাজির হলেন।
উনার কপাল মুবারক থেকে দর দর করে রক্ত পড়তে লাগলো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! কে আপনার মাথায় আঘাত করলো?”
তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আরবের বুকে এমন কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি, যে ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মাথায় আঘাত করতে পারে। তবে আপনার একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ আমার মাথায় আঘাত করেছে। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে ফারূক্বে আ’যম আলাইহি সালাম! কোন সেই হাদীছ শরীফ? যে পবিত্র হাদীছ শরীফ আপনার মাথা মুবারক-এ আঘাত করেছে।
তখন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আপনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
لَايَـخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِاِمْرَاَةٍ اِلَّا كَانَ ثَالِثُهُمَا الشَّيْطَانُ.
অর্থ : কোন গাইরে মাহরাম পুরুষ যেন কোন গাইরে মাহরাম মহিলাদের সাথে নিরিবিলিতে একত্রিত না হয়, কেননা তখন তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।
যেহেতু আমি আমার আওলাদ হযরত উম্মুল মু’মিনীন আর রবিয়া’ আলাইহাস সালাম উনার সাথে বসা ছিলাম। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দৌড় দিয়ে দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় চৌকাঠে কপাল মুবারক-এ লেগে কপাল মুবারক ফেটে যায়। সুবহানাল্লাহ!
এ ঘটনা থেকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পর্দার কতখানি গুরুত্ব দিতেন তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। আর এ পর্দার গুরুত্বের কারণেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের ঘরে নামায পড়া সর্বোত্তম ও অধিক ফযীলতপূর্ণ বলে উৎসাহ প্রদান করেন। আর তাই দেখা যায় পর্দা ফরয হওয়ার পূর্বে মহিলা উনারা যেভাবে মসজিদে যেতেন, পর্দা ফরয হওয়ার পর ক্রমেই তা কমতে থাকে।
-আল্লামা মুফতী শুয়াইব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (২)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












