ঐতিহাসিক ইয়ারমুকের জিহাদ মুবারক:
ঐতিহাসিক ইয়ারমুকের সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ মাত্র ৩৫ হাজার সম্মানিত বীর মুজাহিদ উনারা পরাজিত করলেন ২ লাখ কাফির সৈন্যকে (১)
, ১১ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ২৭ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) আইন ও জিহাদ
রোমান সৈন্যদের একদল কানাতীরের নেতৃত্বে লাজিকিয়ার পথ ধরে এগুতে আরম্ভ করলো। আরেকদল জার্জিরের নেতৃত্বে জাদাতুল উজমার এবং সাওমীনের পথ ধরে এগুতে থাকলো। আরেকদল কাওরীনের নেতৃত্বে হালাব ও হামাতের পথ ধরে এগুতে থাকলো। আরেকদল দীরজানের নেতৃত্বে আওয়াসিমের পথ ধরে এগুতে থাকলো। মাহান তার নেতৃত্বাধীন সৈন্যদের নিয়ে সবার পিছনে চললো। জাবালা বিন আইহাম গসসান, লাখম, ও জুযাম গোত্রের আরব খ্রিস্টানদের নিয়ে সবার আগেই রওয়ানা হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নিকট খ্রিস্টানদের ব্যাপক প্রস্তুতির সংবাদ প্রেরণ করা হলে তিনি সম্মানিত মুসলমান উনাদের প্রধান সেনাপতি হযরত আবূ উবাইদা ইবনে র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার নাম মুবারক-এ মর্মস্পর্শী ভাষায় একখানা পত্র মুবারক লিখলেন এবং কাসেদকে বললেন, আপনি নিজে যেয়ে সৈন্যগণ উনাদের প্রত্যেক কাতারে কাতারে আমার এই পত্র মুবারক পাঠ করে শুনাবেন এবং মুখে বলবেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আপনাদেরকে সালাম মুবারক জানিয়েছেন এবং বলেছেন- ‘হে সম্মানিত মুসলমানগণ! আপনারা বীরবিক্রমে শত্রুদের সম্মুখীন হোন এবং সর্বশক্তি দিয়ে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করে তাদেরকে চরম শিক্ষা দিয়ে দিন। আমি সুনিশ্চিত যে আপনারাই বিজয়ী হবেন’। ” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক যথাযথ পালন করা হলো। সম্মানিত মুজাহিদগণ উনাদের মধ্যে আরো কঠিনভাবে জজবা বৃদ্ধি পেলো। সুবহানাল্লাহ!
খ্রিস্টানরা ২ লাখ সৈন্য নিয়ে জিহাদের ময়দানে উপস্থিত হলো। তারা মোট চব্বিশ সারিতে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হলো। তাদের মধ্যে ৩০ হাজার সৈন্য পায়ে বেড়ী লাগিয়ে এসেছিলো, যেন পালাবার কোনো সুযোগ না থাকে। সম্মানিত মুসলমান উনাদের সৈন্য সংখ্যা ছিলো মোট ৩৫ হাজার। এক বর্ণনা মতে সম্মানিত মুসলমান উনাদের মধ্যে এক হাজার জন ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের অন্তুর্ভুক্ত এবং উনাদের মধ্যে ১০০ জন ছিলেন সরাসরি বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার শুরুতে বিশালকায় এক পাদ্রী বূহ্য হতে বের হয়ে সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে মল্লযুদ্ধের জন্য আহ্বান করলো। তখন হযরত কায়েস ইবনে হুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি একটি কবিতা শরীফ পাঠ করতে করতে এমন ক্ষিপ্রগতিতে পাদ্রীর দিকে অগ্রসর হলেন যে, পাদ্রী অস্ত্র পর্যন্ত ঠিক করতে পারলো না। তিনি একদম পাদ্রীর মস্তকে তরবারী দিয়ে প্রচ- আঘাত করলেন। এক আঘাতেই তার খ-িত দেহ ঘোড়ার উপর থেকে লুটিয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে সম্মানিত মুসলমানগণ উনারা আকাশ-বাতাস কাপিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সম্মানিত তাকবীর মুবারক দিতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘সূচনা উত্তমভাবে হয়েছে, এখন সম্মুখে আমাদের সুনিশ্চিত বিজয়। ’ সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার এক পর্যায়ে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সৈন্য উনাদেরকে এই কথা মুবারক বললেন যে, ‘আপনাদের মধ্যে কে আছেন, যিনি সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার উপর বায়াত গ্রহণ করবেন?
উনার সম্মানিত আহবান মুবারক-এ সাড়া দিলেন উনার সম্মানিত চাচা হযরত হারিস ইবন হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, হযরত দিরার ইবনে আযওয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং আরো চার শত মুসলিম সৈনিক। উনারা তুমুলভাবে জিহাদ করে খ্রিস্টনাদেরকে কচুকাটা করে দিলেন।
এই ইয়ারমুকের ময়দানেই ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেল হযরত হারিস ইবন হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে এবং হযরত আইয়্যাশ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে। পিপাসায় কাতর হযরত হারিস ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি পানি চাইলেন। যখন উনাকে পানি দেওয়া হলো, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি তখন উনার দিকে তাকালেন। হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার চাহনী দেখে হযরত হারিস ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি পানি পান না করে ইশারয় বললেন, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে পানি দেয়ার জন্য। পানির পাত্রটি যখন হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার কাছে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন হযরত আইয়্যাশ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার দিকে তাকালেন। তা দেখে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনিও ইশারায় বললেন, হযরত আইয়্যাশ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে পানি দেয়ার জন্য। হযরত আইয়্যাশ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার কাছে পানির পাত্রটি যখন নিয়ে যাওয়া হলো, দেখা গেল- তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর পাত্রটি হাতে নিয়ে একে একে উনার অপর দুই সাথী উনাদের কাছে নেয়া হলো, ততক্ষণে উনারাও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
-মুহাদ্দিস মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আবয়াদ্ব ইবনে হাম্মাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিকদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (৪)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০০)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিক্বদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (১)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৮)
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












