ইলমে তাছাউফ
কামিল শায়েখ উনার ছোহবত মুবারকের গুরুত্ব ও ফযীলত (৫)
, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ
ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে মাযহাব ও তরীক্বার ইমাম উনাদের কওল শরীফ:
হযরত শেখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি:
ছোহবত মুবারক উনার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বুযূর্গ কবি হযরত শেখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন উনার কিতাবের মধ্যে-
پسر نوح بابداں بنشست+ خاندان نبوتش گم شد
سگ اصحاب کھف روزے چند+ پئے نیگاں گرفت مردم شد
অর্থ: “হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ছেলে কেনান খারাপ লোকদের ছোহবতে থাকায় নুবুওওয়াতী খান্দানের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামী হলো। আর আছহাবে কাহাফ উনাদের কুকুর নেককারদের ছোহবতে থাকার কারণে মানুষের ছূরতে জান্নাতী হবে। ” সুবহানাল্লাহ! (গুলিস্তাঁ)
অর্থাৎ হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ছেলে কেনান কাফিরদের ছোহবতে থাকার কারণে নুবুওওয়াতী খান্দান হারিয়ে ফেললো। শেষ পর্যন্ত ঈমানও হারালো। অথচ সে জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনার সন্তান। নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও কাফিরদের ছোহবতে থাকার কারণে নুবুওওয়াতী খান্দান হারিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গেলো।
আর সেই আছহাবে কাহাফ উনাদের কুকুর যে আছহাবে কাহাফ উনাদের বর্ণনা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। উনাদের সাত জনের সাথে একটা কুকুর ছিলো। যেটাকে উনারা নিতে প্রথমে রাজি ছিলেন না, শেষ পর্যন্ত উনাদের মধ্যে যিনি মূল ছিলেন, উনার কথায় কুকুরটাকে নেয়া হয়েছিলো উনাদের পাহারা দেয়ার জন্য, আপদ-বিপদে কাজে লাগানোর জন্য। সে কুকুরটা উনাদের সাথে ছিলো, এখনো রয়েছে। বিশিষ্ট বুযূর্গ হযরত শেখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একথার ব্যাখ্যায় লিখেছেন, আছহাবে কাহাফ উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নেককার উম্মত। সেই আছহাবে কাহাফ উনাদের কুকুরটা উনাদের ছোহবতে থাকার কারণে মানুষ হয়ে গেছে অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন বনী ইসরাঈলের সেই মরদুদ দরবেশ বালআম বিন বাউরা যে জাহান্নামী হবে তার ছূরতে কুকুরটা জান্নাতে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
এজন্য বলা হয়- صحبت صالح ترا صالح کند অর্থাৎ নেককারদের ছোহবতে থাকলে নেককার হওয়া যায়। আর বদ লোকের নিকটে গেলে বদকার হতে হয়।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথা স্পষ্টই প্রতীয়মান যে, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহওয়ালা হতে হলে বা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মুহব্বত-মা’রিফাত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে হলে তাকে অবশ্যই অবশ্যই একজন হক্কানী-রব্বানী আল্লাহওয়ালা উনার নিকট বাইয়াত হয়ে উনার ছোহবত ইখতিয়ার করতে হবে। তবেই মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা সম্ভব হবে। রহমত মুবারক লাভ করা সহজ এবং সম্ভব হবে। সুবহানাল্লাহ!
ছোহবত (সংসর্গ) ক্রিয়া করে:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ جُحَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سَائِلِ الْعُلَمَاءَ وَخَالِلِ الْـحُكَمَاءَ وَجَالِسِ الْكُبَرَاءَ.
অর্থ: হযরত আবূ জুহাইফাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আলিম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করো (তাহলে সমস্ত বিষয় সমাধান পাবে), প্রজ্ঞাবান উনাদের সাথে মুহব্বত রাখো (তাহলে তোমার বিচক্ষণতা বৃদ্ধি পাবে) এবং বৃদ্ধদের সাথে উঠা-বসা করো (তাহলে বেশী বেশী পরকালের কথা স্মরণ হবে। )” (কানযুল উম্মাল, মুস্তাদরাকে হাকিম)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার নবী ও রসূল হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ওহী মুবারক করেছিলেন যে, “হে আমার নবী, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম! কয়েক প্রকার লোকের ছোহবত ইখতিয়ার করলে কয়েক প্রকার তাছীর পয়দা হয়ে থাকে।
(১) আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত ও মা’রিফাত পয়দা হয় এবং দুনিয়া বা গইরুল্লাহ’র মুহব্বত দূর হয়।
(২) যাহিরী আলিমদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে ইলিম বৃদ্ধি হয় কিন্তু হাক্বীক্বতে পৌঁছা যায় না। অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফাত মুবারক হাছিল হয় না।
(৩) হাকীম বা অভিজ্ঞদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে প্রত্যেক বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়ছালা পাওয়া যায়।
(৪) বৃদ্ধদের ছোহবত ইখতিয়ার করলে চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দুনিয়াবী অভিজ্ঞতা পয়দা হয়।
(৫) রাজা-বাদশাহদের ছোহবতে গেলে অহঙ্কার পয়দা হয়।
(৬) আমীর-উমরাহদের ছোহবতে গেলে দুুনিয়ার প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি পায়।
(৭) সম্পদশালীদের ছোহবতে গেলে ধন-সম্পদের প্রতি লোভ পয়দা হয়।
(৮) স্ত্রীলোকদের ছোহবতে গেলে কামভাব বৃদ্ধি হয়।
(৯) বাচ্চা বা শিশুদের ছোহবতে গেলে খেল-তামাশার প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি হয়। ”
এজন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلصُّحْبَةُ مُتَأَثِّرَةٌ
অর্থ: “ছোহবত ক্রিয়া করে। ” (চলবে)
-মুহম্মদ হুসাইন নাফে’।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












