ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
কারো শেকায়েত বা দোষ বর্ণনা করা কঠিন গুনাহ
, ২৯ রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৩ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২২ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ০৬ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
সমাজে বহু লোক রয়েছে যারা অপরের শেকায়েত বা দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে বেড়ানোকে নিজেদের পেশায় পরিণত করে থাকে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত লোকেরা এই পেশায় লিপ্ত। এদের সম্মুখে রয়েছে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থ। পরকালের কিছুমাত্র চিন্তা থাকলেও তারা এ কাজ করতে পারতো না।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تَلْمِزُوا اَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوْا بِالْاَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوْقُ بَعْدَ الْاِيـْمَانِ ۚ وَمَن لَّـمْ يَتُبْ فَاُولٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ ◌
অর্থ : তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ ঈমান গ্রহণ করলে, তাকে মন্দ নামে সম্বোধন করা গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে, তারাই যালিম। (পবিত্র সূরা হুজুরাত : আয়াত শরীফ ১১)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোন লোক যদি কোন মুসলমানের শেকায়েত করার কারণে কোন লোকমা গ্রহণ করে তবে তাকেও মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামের আগুন থেকে অনুরূপ লোকমা আহার করাবেন। আর কোন মুসলমানের শেকায়েত করার কারণে যদি কাউকে কাপড় পরিধান করানো হয়, তবে মহান আল্লাহ পাক তিনিও তাকে জাহান্নামের আগুন দ্বারা তৎপরিমাণ কাপড় পরিধান করাবেন। (আবূ দাউদ শরীফ)
হযরত আবূ বারযাহ আসলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে লোক সকল! তোমরা যারা শুধুমাত্র মৌখিকভাবে মুসলমান হয়েছ, তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। তোমরা মুসলমানের গীবত করবেনা এবং তাদের দোষ ও ছিদ্রান্বেষণে লেগে থাকবে না। কেননা যারা মুসলমানের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণে লেগে থাকে, তাদের দোষ-ত্রুটির পিছনেও মহান আল্লাহ পাক তিনি লেগে থাকেন অর্থাৎ তিনি তাদের দোষ-ত্রুটিগুলো মানুষের কাছে প্রকাশ করে দেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যাদের দোষ-ত্রুটির পিছনে লাগেন, তারা ঘরের চৌহদ্দীর মধ্যে অবস্থান করলেও তিনি তাকে অপমানিত করে ছাড়েন। (আবূ দাউদ শরীফ)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে প্রতিভাত হয় যে, যারা মুসলমানের গীবত করে বেড়ায় এবং তাদের দোষত্রুটি অন্বেষণে লেগে থাকে প্রকৃতপক্ষে তারা মুসলমানেরই অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এই ধরনের কাজ একমাত্র মুনাফিকদের দ্বারাই প্রকাশ পেতে পারে, যারা মুখে ঈমান এনে মুসলমান পরিচয় দেয় কিন্তু আন্তরিকভাবে ঈমান আনেনি।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرِتْ اَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ مَالُهُ وَعِرْضُهُ وَدَمُهُ حَسْبُ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَـحْقِرَ اَخَاهُ الْمُسْلِمَ.
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, একজন মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের রক্ত, ধন-সম্পদ ও ইজ্জত-সম্মানে অবৈধ হস্তক্ষেপ করা হারাম। (মুসলিম শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিদায় হজ্জে আরাফার ময়দানে সমস্ত মুসলমানকে লক্ষ্য করে যে খুতবা দিয়েছিলেন সে খুতবায় তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন-
إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ بَيْنَكُمْ حَرَامٌ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا فِي شَهْرِكُمْ هَذَا فِي بَلَدِكُمْ هَذَا
অর্থ : তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের মান-ইজ্জতকে তোমাদের একে অপরের জন্যে অবৈধ হস্তক্ষেপ করাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে অর্থাৎ তোমরা কারো রক্তধারা প্রবাহিত করবে না, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করবে না এবং কারো ইজ্জত-সম্মান নষ্ট করবে না। আজকের এ দিনটি, এ মাসটি এবং এ শহরটি যেরূপ সম্মানিত; মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জতও অনুরূপ সম্মানিত। (তিরমিযী শরীফ)
বর্র্ণিত রয়েছে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একবার পবিত্র কা’বা ঘরের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, “আপনি কত বড় সম্মানিত এবং আপনার সম্মান কত শ্রেষ্ঠ ও উন্নত তবুও ইহা বাস্তব সত্য কথা যে, মু’মিন ব্যক্তির ইজ্জত ও সম্মান খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার নিকট আপনার ইজ্জত সম্মানের তুলনায় অনেক অনেক উন্নত ও মূল্যবান।
উল্লেখ্য, পবিত্র কা’বা শরীফ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার শিআর বা নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি অন্যতম নিদর্শন, যাকে সম্মান করা ফরয এবং অবমাননা করা কুফরী।
তাহলে মুসলমানদের ইজ্জত-হুরমত রক্ষা করার বিষয়টি কত গুরুত্ববহ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। মূলত পবিত্র কা’বা শরীফ উনার মতো মুসলমানের ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করাও ফরয। তাই মুসলমানের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করা, দোষারোপ করা, তাকে গালমন্দ করা, অন্যায়ভাবে ধমক দেয়া, অপবাদ দেয়া এ সবই হারাম ও কুফরী কাজের অন্তর্ভুক্ত। এসব মন্দ আচরণ বর্জন করে চলা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।
(সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












