গাফলতি বা অসাবধানতা ও তার প্রতিকার
, ১৫ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১১ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৪ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যে ব্যক্তি পারলৌকিক সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত রয়েছে, বুঝতে হবে যে, সৌভাগ্যের পথে সে ব্যক্তি আদৌ চলেনি। না চলার কারণ অনুসন্ধান করলে জানা যাবে যে, সে ব্যক্তি সৌভাগ্যের পথ চিনতেই পারেনি অথবা চিনতে পেরেছিলো বটে, কিন্তু চলতে পারেনি। চিনেও চলতে না পারার কারণ অনুসন্ধান করলে বুঝা যাবে যে, প্রবৃত্তির কবলে বন্দী হয়ে পড়েছিলো। কুপ্রবৃত্তির সাথে সংগ্রাম করে জয়ী হতে পারেনি। সুতরাং পারলৌকিক সৌভাগ্যের পথ চিনেও প্রবৃত্তি কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে দ্বীনি পথে চলতে অক্ষম হয়েছিলো। যারা পারলৌকিক পথ চিনতেই পারেনি, সেদিকে চলতে না পেরে সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত আছে। তাদের না জানা ও না চেনার কারণ তিনটি।
(১) কেউ কেউ সাংসারিক ভোগ বিলাসের মোহে মুগ্ধ হয়ে দ্বীনের দিক হতে সম্পূর্ণ গাফিল বা অনবহিত অবস্থায় কাল যাপন করে।
(২) কেউ বা গন্তব্য পথে গমন করে পথ ভুলে অন্য দিকে চলে যায়
(৩) কেউ বা সত্য অবলম্বন করে বটে, কিন্তু বিপরীত বুঝের কারণে সত্যপথ হারিয়ে উল্টা দিকে চলে যায়।
অসাবধানতা বা অজ্ঞতাজনিত কারণে যারা দ্বীনি পথে চলতে না পেরে সৌভাগ্য অর্জনে বঞ্চিত থাকে, তারা দুর্বল পথিকদের সাথে তুলনীয়। এদের এ পথে চলার যথেষ্ট ইচ্ছা থাকলেও পথ নিতান্ত দুর্গম, কোথাও পর্বত পরিমাণ উচ্চ, সেই উচ্চতার উপর আরোহন করা খুবই দুস্কর। কোথাও গভীর নিম্নভূমি- তা অতিক্রম করে যেতে পদস্খলন হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতদ্ভিন্ন পথিপার্শ্বে স্থানে স্থানে ডাকাতের ঘাঁটি রয়েছে, একটু সুযোগ পেলে পথিকের সর্বস্ব কেড়ে নিবে। পথিক নিতান্ত দুর্বল এই দুর্গম পথের বাধা-বিঘœ ও বিপদ-আপদ অতিক্রম করে গন্তব্য পথে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব।
দ্বীনি পথে পার্শ্বে যেসমস্ত বিপজ্জনক ঘাঁটি রয়েছে-যথা ধন-লিপ্সা, সম্মানপ্রীতি, কাম প্রবৃত্তি, ভোজন স্পৃহা প্রভৃতি। কোন কোন পথিক দ্বীনি পথে চলতে আরম্ভ করে কষ্টে হয়ত একটি ঘাঁটি অতিক্রম করে যেতে পারে। দ্বিতীয় ঘাঁটির নিকট পৌঁছতেই কু-প্রবৃত্তির শত্রুর হাতে বন্দী হয়ে পড়ে। কেউ বা দ্বিতীয় ঘাঁটিও বহু কষ্টে অতিক্রম করে যায় কিন্তু তৃতীয় ঘাঁটি অতিক্রম করতে পারে না। আবার কেউ তৃতীয় ঘাঁটিও পার হয়ে যায় কিন্তু চতুর্থ ঘাঁটিতে পৌঁছামাত্র শত্রুর হাতে বন্দী হয়ে পড়ে। যে পথিক দ্বীনি পথের সমস্ত বাধাগুলি পশ্চাতে ফেলে গন্তব্যস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে না পারবে, সে ব্যক্তি কখনো সৌভাগ্যের শান্তি নিকেতনে প্রবেশ করতে পারবে না।
অজ্ঞতাজনিত বা জ্ঞানের অভাবে যে দুর্ভাগ্য ও দুর্গতি দেখা যায়, তা তিন প্রকার।
(১) মোহ: এর অর্থ সংসারের ভোগ বিলাসের মোহে মত্ত হয়ে দ্বীনি পথ সম্বন্ধে অচেতন ও অমনোযোগী হয়ে পড়া এবং দ্বীনী কর্মে নিশ্চেষ্ট থাকা।
(২) গোমরাহী অর্থাৎ দিক ভুল হয়ে পথ হারিয়ে ফেলা।
(৩) বুদ্ধিবিভ্রম। যেমন স্বর্ণ ভ্রমে পিতল বা তামা এবং চিনি ভ্রমে লবন গ্রহন করা। এদের মর্মে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قل هل ننبئكم بالاخسرين اعمالا الذين ضل سعيهم فى الحيوة الدنيا وهم يحسبون انهم يحسنون صنعا.
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের বিষয় সংবাদ দিবো? যারা আমলের দিক থেকে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত, যাদের পার্থিব জীবনের সব চেষ্টাই বিফল হয়ে গেছে। অথচ তাদের ধারণা যে, তারা উত্তম কাজ করছে। (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩, ১০৪)
মূলত: মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য ইহলোক হতেই নিজের আত্মাকে সৎ বা নেক কাজে ও সৎগুণে সুশোভিত করে নেয়া আবশ্যক। সৎকাজ ও সৎগুণ হতে বঞ্চিত আত্মা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবারে পৌঁছতে পারে না। দুনিয়াতে যারা সৎকাজ ভ্রমে বহু চেষ্টা ও পরিশ্রম পূর্বক অপকর্ম করেছে এবং সৎকাজ করেছে ভেবে মনে করে বেশ আনন্দ অনুভব করেছে, তারা যখন পরলোকে গিয়ে দেখবে যে, সমস্তই তাদের ধারণার বিপরীত, তাদের সমস্ত পরিশ্রমই ব্যর্থ হয়েছে, তখন তাদের অনুতাপ ও দুঃখের পরিসীমা থাকবে না।
কাজেই, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য লাভ করতে ইচ্ছুক, তাদের কর্তব্য হচ্ছে সর্বপ্রথম সৎকার্যগুলিকে যথাযথভাবে চিনে নিয়ে স্বীয় শায়েখ-মুর্শিদ ক্বিবলা উনার শরণাপন্ন হয়ে উনার উপদেশানুযায়ী কাজ করা।
যা হোক, মানুষের যাবতীয় দুর্ভোগের মূল কারণ অজ্ঞতা অর্থাৎ না জানা, এই অজ্ঞতাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। সেই ত্রিবিধ অজ্ঞতার বিশুদ্ধ পরিচয় অবগত হয়ে উহাদের চিকিৎসা ও প্রতিকার একান্ত কর্তব্য।
স্মরণীয় যে, অধিকাংশ মানুষই মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে অজ্ঞ ও অচেতন রয়েছে। এই অজ্ঞতা ও অচেতনতার কারণ পারলৌকিক কর্তব্যে নিশ্চেষ্ট হয়ে সংসারের মোহে মত্ত থাকা ব্যতীত আর কিছুই নয়। শতকরা নিরানব্বই জন মানুষেরই এই অবস্থা। পরলোকের ভয় ও বিভীষিকা সম্বন্ধে মানুষ কোন সংবাদ রাখে না বলেই এরূপ অচেতন ও মোহমুগ্ধ রয়েছে। পরকালের অবস্থা সম্বন্ধে পরিষ্কার জ্ঞান থাকলে কেউই পারলৌকিক কর্তব্যে ত্রুটি করে পাপ কার্যে মগ্ন থাকতে সাহস করতো না। (২৩৮তম মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খরচ করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (১)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিজাতীয় বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে হারাম-নাজায়িয
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৬)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












