তাইয়াম্মুম করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
, ২০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পবিত্রতার গুরুত্ব অনেক। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই সকল লোকদেরকে মুহব্বত করেন; যারা উনার কাছে বেশি বেশি তওবা ইস্তিগফার করে, এবং যারা বেশি পাক-পবিত্র থাকে। ” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ: ২২২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ.
অর্থ: ‘পবিত্রতা অর্জন করা সম্মানিত ঈমান উনার অঙ্গ। ’ সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
আর এ জন্যেই ত্বহারাত সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ জানা এবং সে মুতাবিক আমল করা সকলের জন্য আবশ্যক। কেননা ত্বহারাত বা পবিত্রতা অর্জন করা ও পরিপাটি হওয়া সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। শারীরিক পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি তিনটি- (১) ওযূ (২) গোসল (৩) তাইয়াম্মুম। আর পবিত্রতা হাছিলের এই তিনটি পদ্ধতির অন্যতম হচ্ছে, “তাইয়াম্মুম”।
‘তাইয়াম্মুম’ (تَيَمُّمْ) শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো, ইচ্ছা করা, নিয়ত করা, মনস্থ করা।
সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায়, পবিত্রতার নিয়তে পবিত্র মাটির ওপর হাত মেরে চেহারা ও কনুই পর্যন্ত হাত মাসেহ করাকে তাইয়াম্মুম বলে।
তাইয়াম্মুম উনার বর্ণনা:
ওযূ বা গোসল করার প্রয়োজন হলে পানি পাওয়া না গেলে অথবা পানি আছে কিন্তু উহা ব্যবহার করলে কঠিন রোগ হওয়ার ভয় থাকলে অথবা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে অথবা কুয়া থেকে পানি উঠানোর প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র না থাকলে অথবা শত্রুর ভয় থাকলে অথবা পুকুর-নদী এক মাইল দূরবর্তীতে অবস্থিত ইত্যাদি কারণে ওযূ ও গোসলের পরিবর্তে তাইয়াম্মুম করতে হবে।
তাইয়াম্মুম উনার হুকুম নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট:
একবার এক সফরে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে ছিলেন। ঐতিহাসিক ইবনে সা’দের মতে এটা ছিল আল-মুরাইসী জিহাদ কালীন সফরের ঘটনা।
কাফেলা যখন জাতুল যাইশ অথবা আল-বায়দা নামক স্থানে পৌঁছে, তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত গলা মুবারক উনার হার মুবারক কোথাও পড়ে যায়। সাথে সাথে ব্যাপারটি তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করেন। সময়টি ছিল ভোর হওয়ার কাছাকাছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাফেলাকে এখানে অবস্থানের নির্দেশ মুবারক দেন এবং এক ব্যক্তিকে সেই হার মুবারকটি খোঁজার জন্য দ্রুত পাঠিয়ে দেন। ঘটনাক্রমে যেখানে তাঁবু গেড়েছিলেন, সেখানে বিন্দুমাত্র পানি ছিল না।
এদিকে ফজরের নামাযের সময় হয়ে গেল। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনিও এই ঘটনায় চিন্তিত হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরুল মুত্বমাইন্নাহ্ মুবারক (মহাসম্মানিত নাওমী শান মুবারক) থেকে জেগে সব অবহিত হন। এ সময় পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৪৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
মহান আল্লাহ পাক নির্দেশ মুবারক দেন যে, যদি পানি পাওয়া না যায় তবে পাক মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করে নিবে। তাইয়াম্মুমের হুকুম একটি পুরস্কার বিশেষ। যা এই উম্মতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ পাক তিনি ওযূ-গোসল প্রভৃতি পবিত্রতার জন্য এমন এক বস্তুকে পানির স্থলাভিষিক্ত করে দেন, যার প্রাপ্তি পানি অপেক্ষাও সহজ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ.
অর্থ: ‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ হাযত (ইস্তেঞ্জা) থেকে আসে অথবা তোমরা আহলিয়াদের সাথে একান্তে অবস্থান কর, অতঃপর যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তাইয়াম্মুম করো। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ করো। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ: ৪৩)
তাইয়াম্মুম উনার এই সহজ ব্যবস্থাটি পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে দেয়া হয়নি। এই পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হলে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনাকে সম্বোধন করে বললেন, আমার কলিজার টুকরা মেয়ে! আমার জানা ছিল না যে, আপনি এতখানী কল্যানময়ী। আপনার মহাসম্মানিত উছীলা মুবারকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম উম্মাহকে এতখানি বরকত ও আসানী দান করলেন! (মুসনাদ, সিয়ারু আলামিন নুবালা)
এরপর কাফেলা চলার জন্য যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার উটটি উঠানো হয়, সেই উটের নীচেই সেই মুবারক হারটি পাওয়া যায়। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে ইবনে কাছীর, সিয়ারু আলামিন নুবালা)
তাইয়াম্মুম সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘পূর্বের হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের চাইতে এই আখিরী উম্মতকে তিনটি বিষয়ে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাতার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাতারের মতো বানানো হয়েছে, সারা ভূখ-কে আমাদের জন্য সম্মানিত মসজিদ বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পানি না পাওয়া অবস্থায় মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানানো হয়েছে। ’ (বুখারী শরীফ)
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খুতবায় লাঠি ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মিম্বর শরীফে খুতবা দেওয়ার মহাসম্মানিত সুন্নতী তারতীব
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত খাছ সুন্নতী মিম্বর শরীফ উনার বর্ণনা
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ঘরে চন্দন কাঠ পোড়ানো এবং ধূপ জ্বালানো সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অর্ন্তভূক্ত
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মহাসম্মানিত সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের উদ্দেশ্যেই নিকাহ বা বিবাহ করতে হবে
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক হচ্ছে, বিবাহ-শাদী করা। যার দ্বারা রিযিক বৃদ্ধি পায়
১৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সুন্নতী তরীক্বায় বিবাহের মোহর
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বিবাহের পূর্বে বরকে ও কনেকে দেখার সম্মানিত শরয়ী অর্থাৎ মহাসম্মানিত সুন্নতী তরীক্বাহ
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বিবাহের ক্ষেত্রে কুফু বা সমকক্ষতা রক্ষা করা পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বিবাহের প্রস্তাব দেয়া এবং সম্মতি জ্ঞাপন করার মহাসম্মানিত সুন্নতী তরীক্বাহ
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (৩)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বিবাহ-শাদীর গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব (২)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












