নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পক্ষ থেকে উম্মতের ১২ হাজার কুরবানী করার ঐতিহাসিক অকাট্য দলীল (১)
, ২০ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২০ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুজূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পক্ষ থেকে উম্মতের কুরবানী করার বিষয়ে দুইটি আপত্তি সমাজে দেখে যায়। ১ম আপত্তি- এ বিষয়ে সহীহ কোন বর্ণনা নেই, যা আছে দুর্বল। ২য় আপত্তি- এ ধরনের আমল পরবর্তী যুগে কেউ করেছেন তার কোন প্রমাণ কোন কিতাবে নেই। আমরা দুইটি আপত্তির স্পষ্ট খ-ন করবো, ইনশাআল্লাহ!
ইমাম হাকীম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে সহীহ সনদসহ বর্ণনা করেন,
عَنْ حَنَشٍ، قَالَ: ضَحَّى عَلِيٌّ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ بِكَبْشَيْنِ كَبْشٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وكبشٍ عَنْ نَفْسِهِ وَقَالَ: أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي أَبَدًا " هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ، "
[التعليق - من تلخيص الذهبي]٧٥٥٦ صحيح
হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আলী আলাইহিস সালাম দুটি দুম্বা কুরবানী করতেন। একটি দুম্বা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে করতেন। আরেকটি দুম্বা তিনি উনার নিজের পক্ষ থেকে করতেন। তিনি (হযরত আলী আলাইহিস সালাম) বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে আদেশ মুবারক করেছেন আমি যেন উনার তরফ থেকে কুরবানী মুবারক করি। আর আমি সর্বদা উনার তরফ থেকে কুরবানী মুবারক করে থাকি। ”
ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এই হাদীছ শরীফ খানা ছহীহ যদিও ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বর্ণনা করেননি।
ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীছ শরীফের তাহকীক করে উল্লেখ করেন, এই হাদীছ শরীফখানা ছহীহ।
(মুসতাদরাক আলা সাহিহাইন ৪র্থ খন্ড ২৫৫ পৃষ্ঠা; হাদীছ শরীফ নম্বর ৭৫৫৬; প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বাইরূত-লেবানন)
হাফিজুল হাদীছ হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘ইত্তেহাফুল মুহাররাতি’ কিতাবের ১১তম খন্ড ৩৬৮ পৃষ্ঠার ১৪২১৩ নং হাদীছ শরীফে ভিন্ন ভিন্ন দুইখানা সনদে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, এবং এর সনদ (কলেবর বৃদ্ধির কারনে একই বিষয়ের পূনরাবৃত্তি করা হলো না) বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ করেন-
وَقَالَ: صَحِيحُ الإِسْنَادِ
হাদীছ শরীফখানার সনদ ছহীহ বা বিশুদ্ধ। ”
সূতরাং প্রমাণ হলো উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ।
এবার আমরা দেখবো হাবীবুল্লাহ হূযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান পক্ষ থেকে কেউ কুরবানী করেছেন এর ইতিহাস আছে কিনা!
হযরত ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ ১৪তম খ- ৩৯৩ পৃষ্ঠায় একজন বিখ্যাত আলিমের জীবনী আলোচনা করেছেন। উনার নাম হচ্ছে-
السَّرَّاجُ مُحَمَّدُ بنُ إِسْحَاقَ بنِ إِبْرَاهِيْمَ بنِ مِهْرَانَ
আস সিরাজ মুহম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ইবনে মিহরান খুরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
উনার প্রসংঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন,
الإِمَامُ، الحَافِظُ، الثِّقَةُ، شَيْخُ الإِسْلَامِ، مُحَدِّثُ خُرَاسَانَ
ইমাম, হাফিজুল হাদীছ, ছিক্বাহ (বিশ্বস্ত) ,শায়খুল ইসলাম, খুরাসানের মুহাদ্দিছ।
উনার ছাত্রদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে-
حَدَّثَ عَنْهُ: البُخَارِيُّ، وَمُسْلِمٌ
উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা।
উনার সম্পর্কে হযরত আবু ইসহাক আল মুজাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
وَقَالَ أَبُو إِسْحَاقَ المُزَكِّي: كَانَ السَّرَّاجُ مُجَابَ الدَّعْوَةِ
হযরত সিরাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত ছিলেন। অর্থাৎ উনার সকল দোয়া কবুল হতো।
অর্থাৎ তিনি ছিলেন অনেক নির্ভরযোগ্য ইমাম ও আলেম সেই সাথে বড় মুহাদ্দিছ এবং একজন বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ। আর উনার ছাত্র ছিলেন ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মত ব্যক্তিত্বরা।
উনার জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন-
وَخَتَمتُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اثْنَيْ عَشَرَ أَلفَ خَتْمَةٍ، وَضَحَّيْتُ عَنْهُ اثْنَيْ عَشَرَ أَلْفَ أُضْحِيَةٍ
তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য বার (১২) হাজার বার পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করেছেন, এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে বার (১২) হাজার কুরবানী মুবারক দিয়েছেন।
قُلْتُ: دَلِيلُه حَدِيْثُ شَرِيْكٍ، عَنْ أَبِي الحَسْنَاءِ، عَنِ الحَكَمِ، عَنْ حَنَشٍ، قَالَ:
رَأَيْتُ عَلِيّاً - رَضِيَ اللهُ عَنْهُ - يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ، فَقُلْتُ لَهُ: مَا هَذَا؟
قَالَ: أَوْصَانِي رَسُوْلُ اللهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ
ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- এই বিষয়ের প্রমাণ (ইমাম সিরাজ যা করেছেন তার প্রমাণ) হলো হাদীছ শরীফখানা যা হযরত শারিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি আবিল হাসান থেকে , তিনি হাকাম থেকে, তিনি হযরত হানাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত আলি আলাইহিস সালাম উনাকে দুটি দুম্বা কুরবানী করতে দেখেছি। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কেন? তিনি জবাব মুবারক দিলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ওছিয়াত মুবারক করেছেন তাই আমি উনার সম্মানিত তরফ মুবারক থেকে কুরবানী করি।
ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এরপর একটু সামনে গিয়ে উল্লেখ করেন-
قَالَ مُحَمَّدُ بنُ أَحْمَدَ الدَّقَّاقُ: رَأَيْتُ السَّرَّاجَ يُضَحِّي كُلَّ أُسْبُوْعٍ أَوْ أُسْبُوْعَيْنِ أُضْحِيَةً عَنْ رَسُوْلِ اللهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - ثُمَّ يَصِيْحُ بِأَصْحَابِ الحَدِيْث، فَيَأْكُلُوْنَ
হযরত মুহম্মদ ইবনে আহমদ দাক্কাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন- আমি দেখেছি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান শানে হযরত সিরাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রতি সপ্তাহে কুরবানী করতেন অথবা দুই সপ্তাহ অন্তর কুরবানী করতেন। এর পর উনার হাদীছ শরীফ দরস গ্রহনকারী ছাত্রদের দাওয়াত করতেন এবং ঐসকল ছাত্র ও সঙ্গীরা আসতেন ও সেই কুরবানীর গোশত খেতেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৪তম খ- ৩৮৮-৩৯৪ পৃষ্ঠা; প্রকাশনা: মুয়াসাসাতুর রিসালা, বাইরূত, লেবানন)
সূতরাং আস সিরাজ মুহম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম ইবনে মিহরান খুরাসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত উচু মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি তিনি নিজেই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে বার হাজার কুববানী করেছেন এবং সেটা তিনি প্রতি সপ্তাহেই করে যেতেন। উনি উনার সঙ্গী সাথী ও ছাত্রদের দাওয়াত করে সেই কুরবানীর গোশত খাওয়াতেন। উনার ছাত্র ছিলেন ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা, উনারাও সেই দাওয়াতে অবশ্যই অংশগ্রহণ করতেন যা বলার অপেক্ষাই রাখে না।
-খাজা মুহম্মদ নুরুদ্দীন পলাশ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৭)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












