নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (১৬)
, ২৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২২ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২১ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ০৬ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
উমাইয়া বিন খ্বাল্ফের পরিণতি:
উমাইয়া বিন খ্বালফ। আবূ ছাফওয়ান যার উপনাম। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আরেক কাফির সরদার। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নানাভাবে কষ্ট দিতো এই মালঊনটা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যখনই দেখতো এই বজ্জাতটা তখনই কটূক্তি করতো, উনার শান মুবারকে বেয়াদবী করতো, উনাকে অভিশাপ দিতো। নাঊযুবিল্লাহ! তার এই নিকৃষ্ট কর্মকা-ের জন্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা হুমাযাহ শরীফ নাযিল করে বলেন-
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ
অর্থ: ধ্বংস প্রত্যেক এমন ব্যক্তির জন্য, যে সামনে এবং পিছনে লোকের নিন্দা করে। নাঊযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা হুমাযাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০১)
হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণিত রয়েছে। জাহিলী যুগ থেকেই হযরত সা’দ বিন মুআয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে উমাইয়া বিন খ্বাল্ফের বন্ধুত্ব ছিলো। (উমাইয়া বিন খ্বাল্ফ ছিলো পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসী। আর হযরত সা’দ বিন মুআয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসী। ) উমাইয়া বিন খ্বাল্ফ যখন পবিত্র মদীনা শরীফ যেতো তখন সে হযরত সা’দ বিন মুআয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট যেয়ে উঠতো। আর হযরত সা’দ বিন মুআয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফে আসতেন তখন উমাইয়ার বাড়িতে থাকতেন।
অতঃপর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে সম্মানিত হিজরত মুবারক করলেন, তখন হযরত সা’দ বিন মুআয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র উমরাহ করার উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কা শরীফে এসে উমাইয়ার ঘরে অবস্থান করলেন। তাকে বললেন, আমাকে এমন একটি নির্জন সময় বের করে দাও যাতে আমি নির্বিঘেœ পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করতে পারি। তাই একদিন দ্বিপ্রহরের সময় উনাকে নিয়ে সে পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করার উদ্দেশ্যে বের হলো। তখন উনাদের সাথে আবূ জাহিলের দেখা হয়ে গেলো।
আবূ জাহিল উমাইয়ার সাথে হযরত সা’দ বিন মুআয রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, হে আবূ ছাফওয়ান! তোমার সাথে উনি কে? তখন উমাইয়া বিন খ্বালফ জবাব দিলো উনি হচ্ছেন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। এটা শুনে আবূ জাহিল হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বললো, আমিতো দেখছি আপনি নির্ভয়ে, নিরাপদে পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছেন। অথচ আপনারা ধর্মত্যাগীদের আশ্রয় দান করেছেন, উনাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আপনি যদি আবূ ছাফওয়ান (উমাইয়ার) সাথে না থাকতেন, তাহলে নিরাপদে আপনার পরিবারের নিকট ফিরে যেতে পারতেন না।
হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবূ জাহিলের চেয়েও অধিক উচ্চস্বরে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! তুমি এতে যদি আমাকে বাধা দাও তাহলে আমিও এমন একটি ব্যাপারে তোমাকে বাধা দেবো যা তোমার জন্য এর চেয়েও ভীষণ কঠিন হবে। আর তা হলো, পবিত্র মদীনা শরীফ উনার উপকন্ঠ দিয়ে তোমার (ব্যবসা-বাণিজ্যের বৃহত্তম কেন্দ্র সিরিয়ার) যাতায়াতের রাস্তা (বন্ধ করে দেবো)।
তখন উমাইয়া উনাকে বললো, হে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এ উপত্যকার প্রধান সর্দার আবুল হাকামের (আবূ জাহিলের) সাথে এরূপ উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। তখন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে উমাইয়া! তুমি চুপ করো। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, তুমি মুসলমানদের হাতে মারা যাবে। এটা শুনে উমাইয়া জিজ্ঞাসা করলো, পবিত্র মক্কা শরীফে? হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তা জানি না।
কাট্টা কাফির উমাইয়া এতে অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। এরপর উমাইয়া বাড়িতে যেয়ে (তার আহলিয়াকে ডেকে) বললো, হে উম্মে ছাফওয়ান! হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার সম্পর্কে কি বলেছেন জানো? সে বললো, তিনি তোমাকে কি বলেছেন? উমাইয়া বললো, তিনি বলেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে জানিয়েছেন যে, মুসলমানগণ আমাকে হত্যা করবেন। তখন আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তা কি পবিত্র মক্কা শরীফে? তিনি বললেন, তা আমি জানি না। এরপর উমাইয়া বললো, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি কখনো পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বের হবো না।
কিন্তু পবিত্র বদর জিহাদের দিন সমাগত হলে আবূ জাহিল সর্বস্তরের জনসাধারণকে সদলবলে বের হওয়ার আহবান জানিয়ে বললো, তোমরা তোমাদের কাফেলা রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হও। উমাইয়া (পবিত্র মক্কা শরীফ ছেড়ে) বের হওয়াকে অপছন্দ করলে, আবূ জাহিল নিজে এসে তাকে বললো, হে আবূ ছাফওয়ান! তুমি এ উপত্যকার অধিবাসীদের নেতা, তাই লোকেরা যখন দেখবে (তুমি যুদ্ধ যাত্রায়) পেছনে রয়ে গেছো, তখন তারাও তোমার সাথে এ বলে পেছনেই থেকে যাবে। এ কথা বলে আবূ জাহিল তার সাথে পীড়াপীড়ি করতে থাকলে সে বললো, তুমি যেহেতু আমাকে বাধ্য করে ফেলেছো, তাই মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই আমি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার সবচাইতে ভালো উটটি ক্রয় করবো। (অসমাপ্ত)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৭)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












