পবিত্র কুরআন শরীফ-হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যেভাবে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ অর্থাৎ পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে (৩য় পর্ব)
, ১৮ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৪ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৭ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্যে তাশরীফ মুবারক এনেছেন মহান নছীহত মুবারক দানকারী, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যাধিসমূহ শিফা মুবারক দানকারী, কুল-কায়িনাতের মহান হিদায়েত মুবারক দানকারী ও খাছভাবে ঈমানদারদের জন্য, আমভাবে সমস্ত কায়িনাতের জন্য মহান রহমত মুবারক দানকারী। হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত ফদ্বল বা অনুগ্রহ মুবারক ও সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন; সেজন্য তারা যেনো সম্মানিত ঈদ উদযাপন তথা খুশি মুবারক প্রকাশ করে। এই খুশি মুবারক প্রকাশ বা ঈদ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭-৫৮)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত ‘রহমত’ শব্দ মুবারক উনার তাফসীরে পৃথিবী বিখ্যাত সব তাফসীরের কিতাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথাই বলা হয়েছে। যেমন- বিখ্যাত মুফাসসির, সমগ্র মাদরাসায় যার তাফসীর পড়ানো হয়, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাজুল মানতেকীন ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এ আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে এখানে মহান আল্লাহ পাক উনার ‘অনুগ্রহ’ বলতে ‘ইলম’ বুঝানো হয়েছে। আর ‘রহমত’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ উনাকে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তো আপনাকে তামাম আলমের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক স্বরূপ প্রেরণ করেছি।” (তাফসীরে দূররুল মানছূর, তাফসীরে রূহুল মা’য়ানী, তাফসীরে কবীর)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে।
সুতরাং অর্থ দাঁড়াচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ এবং রহমত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের কারণে খুশি বা ঈদ পালন করো।
আবার মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “আমি আপনাকে তামাম আলমের জন্যে সম্মানিত রহমত মুবারক স্বরূপই প্রেরণ করেছি।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৭)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে- “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে তামাম আলমের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে পাঠিয়েছেন।” (ত্ববারানী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিরকাত শরীফ, দালায়িলুন নুবুওওয়াত লি আবু নুয়াইম)
অর্থাৎ সমগ্র জগতের রহমত হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। উনাকে সম্মানিত রহমত মুবারক হিসাবে প্রেরণ করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “তারপরেও তোমরা তা থেকে ফিরে গেছো। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত যদি তোমাদের উপর না থাকতো, তবে অবশ্যই তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে কিতাবে উল্লেখ করা হয়- “আর হাদীছ শরীফ উনার ভিত্তিতে আযাব অবতীর্ণ না হওয়াটা যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই বরকত। কাজেই কোন কোন তাফসীরকারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আর্বিভাবকেই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত ও করুণা বলে বিশ্লেষণ করেছেন।” (তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় উনাদের তাফসীরের মাধ্যমে সুস্পষ্ট যে, ‘রহমত’ হচ্ছেন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুতরাং, মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে পবিত্র ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করা ফরয। যা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দলীল দ্বারাই প্রমাণিত।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ১৫ নং পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ৩৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ উনার ৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা বালাদ শরীফ উনার ৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র ইজমা-ক্বিয়াস শরীফ দ্বারাই বিলাদত, মীলাদ ইত্যাদি শব্দ মুবারক প্রমাণিত। হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষ্যে খুশির দিন বা ঈদের দিন সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি যেহেতু পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ১৫ ও ৩৩ নং পবিত্র আয়াত শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ইঊনুস শরীফ উনার ৫৭ ও ৫৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ করতে বলেছেন। তাই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভিত্তি তো অবশ্যই আছেই বরং তা ফরয হিসেবে সাব্যস্ত।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোন মেছাল নেই
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (২৯)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












