মহিলাদের পাতা
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ০১ মে, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
مَلْعُونٌ مَنْ عَاقَ لِوَالِدَيْهِ لَعَنَ اللهُ مَنْ عَاقَ لِوَالِدَيْهِ
ঐ ব্যক্তি লানতপ্রাপ্ত, ঐ ব্যক্তির উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত, যে তার পিতা-মাতার সহিত অসৎ আচরণ, অসৎ ব্যবহার করে থাকে। ঐ ব্যক্তির প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত, সে লানতপ্রাপ্ত, সে মালউন, (مَلْعُونٌ) যে তার পিতা-মাতার সহিত অসৎ আচরণ, অসৎ ব্যবহার করে। সে লা’নতপ্রাপ্ত, সে মালউনের অন্তর্ভুক্ত।
যেটা হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে-
أَعْظَمُ النَّاسِ حَقًّا عَلَى الْمَرْأَةِ زَوْجُهَا وَأَعْظَمُ النَّاسِ حَقًّا عَلَى الرَّجُلِ أُمُّهُ
মেয়েদের উপরে সবচাইতে বেশী হক্ব হচ্ছে, সবচাইতে বেশী হক্ব হচ্ছে স্বামীর।
أَعْظَمُ النَّاسِ حَقًّا عَلَى الرَّجُلِ أُمُّهُ
আর কোন পুরুষের উপরে সবচাইতে বেশী হক্ব হচ্ছে তার মায়ের। মেয়েদের জন্য স্বামী, ছেলেদের জন্য মা, সবচাইতে বেশী হক্বদার।
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন এক ব্যক্তি আসলেন-
أِنَّ رَجُلاً قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ لِى مَالاً وَوَلَدًا وَإِنَّ أَبِي يُرِيدُ أَنْ يَجْتَاحَ مَالِي
এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- إِنَّ لِى مَالاً وَوَلَدًا
যে, আমার অনেক সম্পদ রয়েছে এবং অনেক সন্তানও রয়েছে- وَإِنَّ أَبِي يُرِيدُ
কিন্তু আমার পিতা أَنْ يَجْتَاحَ مَالِي আমার সম্পদ বেশী বেশী খরচ করতে চান। এখন আমি কি করবো? ‘আমার অনেক সন্তান রয়েছে, অনেক মালও রয়েছে, তো আমার পিতা চাচ্ছেন আমার সম্পদ বেশী বেশী খরচ করার জন্য। এখন আমি কি করবো?
فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنْتَ وَمَالُكَ لِأَبِيكَ.
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘হে সন্তান, তুমি মনে রেখ, তুমি এবং তোমার মাল-সম্পদ সবই তোমার পিতার। তোমার পিতার ইখতিয়ার রয়েছে, তোমার সম্পদ থেকে ইচ্ছামত ব্যয় করার। কাজেই সেখানে তোমার চু-চেরা, কিল ও কাল করার অর্থাৎ কিছু বলার কোন অধিকার নেই। তোমার পিতা যদি খরচ করতে চান, ব্যয় করতে চান, তবে উনার সে অধিকার রয়েছে। তুমি এবং তোমার সন্তান, তোমার মাল-সম্পদ, সবই তোমার পিতার। কাজেই তোমার পিতার খরচ করার হক্ব রয়েছে। বাধা দেয়ার অধিকার তোমার নেই। হ্যাঁ, যদি শরীয়তের খেলাফ হয়, শরীয়তসম্মত না হয় তাহলে সেটা অবশ্যই বলা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, উনি উনার মায়ের খুব অনুগত ছিলেন। সবসময় উনার মায়ের কথা মোতাবেক উনি কাজ করতেন।
কিন্তু উনি যখন দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন, দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পর উনার মা উনাকে বললেন- হে ছেলে, তুমি তো আমার কথা ছাড়া কোন কাজ করোনি এ পর্যন্ত। কিন্তু তুমি আমার অনুমতি ছাড়া কি করে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলে? এটা কেমন হলো। ”
উনি বললেন, ‘হে আমার মা, যেহেতু আমি হক্ব দ্বীন এবং হক্ব মত পেয়েছি, মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়েছি, সেহেতু আমি ঈমান গ্রহণ করেছি, দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি। আপনি আমার একাজে বাধা দিবেন না। ’
তখন উনার মা বললেন যে দেখ, তুমি যদি দ্বীন ইসলাম ত্যাগ না করো, আমি খাদ্য খাবনা। আমি না খেয়ে মারা যাবো, সারা জীবন আরব দেশের লোকেরা তোমাকে বলবে, তুমি তোমার মায়ের হত্যাকারী। তুমি তোমার মাকে হত্যা করেছো। এখনও তোমার সময় রয়েছে, তুমি দ্বীন ইসলাম ছেড়ে দাও।
এ কথা বলে উনার মা একদিন, একরাত্র না খেয়ে থাকলেন। এরপরও আরো কয়েকদিন একাধারে না খেয়ে থাকলেন।
উনি শেষ পর্যন্ত বললেন যে, হে আমার মা, আপনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি একশতটা জান দেন, আপনি একটা একটা করে একশতটা জানও যদি বিসর্জন দেন, আমাকে দ্বীন ইসলাম ছাড়ার জন্য, আমি কিন্তু ছাড়বো না। আপনার জান দিতে পারবেন, কিন্তু আমার দ্বীন ইসলাম, আমি ছাড়বো না। এটা কখনও সম্ভব নয়। তখন উনার মা খাওয়া শুরু করলেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন-
وَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا
সন্তানরা পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করবে।
وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا
যদি পিতা-মাতা তোমাকে অর্থাৎ সন্তানকে আমার সাথে কাউকে শরীক করতে বলে যে বিষয়ে তোমার ইলিম নেই তাহলে তাদেরকে অনুসরণ করা যাবে না অর্থাৎ তাদের কথা মানা যাবে না।
(পবিত্র সূরা আনকাবুত : আয়াত শরীফ ৮)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (২)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (৯)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৩)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












