পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে বণী ইস্রাইল আমলে এক ঘটনা ঘটে যায়, যেটা মুত্তাফাকুন আলাইহি বুখারী, মুসলীম শরীফে রয়েছে। অন্যন্য হাদীস শরীফে রেওয়ায়েত রয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন। সেটা নানাভাবে বর্ণিত রয়েছে।
অন্যান্য হাদীস শরীফে রেওয়ায়েত রয়েছে তিন বন্ধু ছিল। তারা সফরে গিয়েছিল। সফর থেকে ফিরার সময় রাস্তায় বৃষ্টি বাদল ঝড়-তুফান, শুরু হয়ে যায় তা থেকে বাঁচার জন্য গাছ-পালা ভেঙ্গে যাতে তারা আহত না হয় বা কষ্ট না পায় সে জন্য তারা একটা গুহাতে প্রবেশ করল। উদ্দেশ্য ছিল ঝড় তুফান, বৃষ্টি সেরে গেলে সেখান থেকে বের হয়ে প্রত্যেকেই বাড়িতে চলে যাবে।
কিন্তু দেখা গেল, সে বৃষ্টি-ঝড় এবং তুফান প্রবল আকার ধারণ করলো যার কারণে দেখা গেল একটা পাথর গড়াতে গড়াতে সে গুহার মুখে এসে গুহার মুখটাকে আটকিয়ে দিলো। এমনভাবে আটকালো যে, কোন মানুষের পক্ষে সে পাথর সরিয়ে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়। কারণ পাথরটি ছিল খুব বড় আকারের।
তখন তারা তিন জন মনে মনে চিন্তা করলো, নিশ্চয় এটা কঠিন এক পরীক্ষা এবং সমস্যা। কি করে এখান থেকে নাযাত পাওয়া যেতে পারে। পর্যাক্রমে ঝড় তুফানও বৃষ্টি হয়ে শেষ হয়ে গেল অর্থাৎ সবকিছু স্বাভাবিক আকার ধারণ করলো। তখন বের হওয়ার জন্য তারা চেষ্টা-কোশেশ করছিল। কিন্তু পাথর এতো বড় আকারের ছিল তাদের পক্ষে সেটাকে ঠেলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বের হওয়া সম্ভব ছিলো না।
তখন প্রত্যেকে মিলে ফিকির করলো কি করে পাথরটাকে সরানো যেতে পারে। তারা পরস্পর চিন্তা করলো এবং ভাবলো, এখন করারতো কিছু নেই। আচ্ছা আমাদের প্রত্যেকের জীবনের যে নেক কাজগুলো রয়েছে, এবং যে নেক কাজগুলি খালেছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য আমরা দোয়া করি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে, হয়তো মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা কবুল করে আমাদের নাযাত দিতে পারেন ইত্যাদি।
তারা পরস্পর আলোচনা করলো। আলোচনার এক প্রসঙ্গে তারা সবাই একমত হলো যে, তাহলে আমাদের জীবনের যা আমল রয়েছে, যা খালিছভাবে আল্লাহ পাক উনার জন্য করা হয়েছিল, সেটার উছীলা দিয়ে আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দোয়া করি। হয়তো মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে ক্ষমা করে নাযাত দিতে পারেন।
তখন তারা প্রত্যেকেই যমীনে হাঁটু রেখে অর্থাৎ অর্ধ অবনত মস্তকে করুন স্বরে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কাকুতি-মিনতি করা শুরু করলো। প্রত্যেকে তাদের জীবনের মূল ইবাদত যেটা ছিল, যা তারা খালিছভাবে আল্লাহ পাক উনার জন্য করেছিল, তার উছীলা দিয়ে দোয়া করতে লাগলো।
প্রথম যে ব্যক্তি, সে বললো, আয় মহান আল্লাহ পাক! জীবনে অ নেক কাজ করেছি- ভাল-মন্দ, ভুলত্রুটি, শুদ্ধ-অশুদ্ধ আপনার জন্য, গাইরুল্লাহর জন্য অনেক কিছুই করেছি। তবে একটা আমল আমার মনে হয়, আমি খাছভাবে আপনার জন্য ই করেছিলাম। সেটা হচ্ছে, আমার একটা কর্মচারী ছিল অর্থাৎ আমি একটা লোককে কাজে নিয়োগ করেছিলাম! সে আমার কাজ করেছিল। কাজ যখন সমাধা হয়ে গিয়েছিল, তখন আমি তার পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য, তার যা প্রাপ্য ছিল, সেটা আমি তাকে পেশ করলাম। কিন্তু সে লোকটা তার চাইতে বেশী দাবী করলো। আমি তাকে বললাম যে দেখ, আমি যা দিয়েছি, এটাই তোমার জন্য হক্ব এবং ইনসাফ এর চাইতে বেশী দাবী করাটা তোমার জন্য সঠিক হবে না।
লোকটা গোস্বা করে পয়সা গ্রহণ না করে চলে গেল। তখন আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, তার এ পয়সাটা দিয়ে তা হলে কি করা যেতে পারে!
কিতাবে অনেক রেওয়ায়েত রয়েছে, তার মধ্যে একটা রেওয়ায়েত হচ্ছে, সে পয়সাটা দিয়ে একটা পশু কিনেছিল। কোন রেওয়ায়েতে সে যমীনে কিছু ধান বপন করেছিলো ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎসে ব্যক্তি সে পয়সাটা দিয়ে ব্যবসায় খাটিয়েছিল, খাটানোর পর পর্যায়ক্রমে দেখা গেল যে পয়সা বেড়ে অনেক হয়ে গেল এবং কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায়, সে ব্যবসার পয়সা দিয়ে গোলামও কিনেছিল।
বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সেই শ্রমিক, সে আমার কাছে এসে তার পাওনা ছিল, তুমি যেটা নির্দিষ্ট করেছিল, সেটাই আমাকে দিয়ে দাও। তখন আমি খুব চিন্তাতে পড়ে গেলাম। এখন তাকে কি করা যেতে পারে?
তার পাওনা মাত্র সামান্য কিছু পয়সা। কিন্তু আজকে সেই পয়সা দিয়ে ব্যবসার মোহ, ধন-দৌলতের মোহ, দুনিয়ার মোহ সব ত্যাগ করে তাকে বললাম যে, এই যে পশুগুলি দেখছো, এই গোলাম, এগুলি সব তোমার।
সে আমার দিকে তাকিয়েব ললো এখানে তুমি আমার কাছে ঠাট্টা করতেছ?
আমি বললাম আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি কিন্তু তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করতেছি না? তোমারই, এটা প্রাপ্য। তোমারই পয়সা দিয়ে আমি ব্যবসা করেছি, বৃদ্ধি হয়ে এ সম্পদ হয়েছে, এখন তুমি এটা নিয়ে যেতে পার।
সেই শ্রমিক খুশি হয়ে সেই পশু এবং গোলামসহ সেটা নিয়ে গেল।
হে মহান আল্লাহ পাক! আমি খালিছভাবে আপনার সন্তুষ্টির জন্য, রেজামন্দীর জন্য শুধু এই কাজটা করেছিলাম, অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতো, তাহলে আমি শুধুমাত্র তার পয়সাটা দিয়ে তাকে বিদায় করতে পারতাম। আমার এই নেক কাজের উছীলায় কমপক্ষে আমাদের পাথরটা কিছু সরিয়ে দিন। তার দোয়া শেষ করা মাত্রই দেখা গেল, মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত পাথরটা আপসেআপ কিছুটা সরে গেল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মেয়েদের জন্য সবচাইতে উত্তম আমল হচ্ছে- ‘কোন পুরুষকে সে দেখবে না, কোন পুরুষও তাকে দেখবে না’
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল দানশীলতা মুবারক (৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
০৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ফুহূশ বা অশ্লীলতার পরিণতি ও তার প্রতিকার
০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বদ নযর বা কুদৃষ্টি এবং তার শরয়ী আহকাম (৩)
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হাশরের ময়দানে যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেককেই দিতে হবে
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি কিভাবে এত ফযিলত-মর্যাদা লাভ করেছেন যে সবার থেকে অগ্রগামী হয়েছেন! (২)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি কিভাবে এত ফযিলত-মর্যাদা লাভ করেছেন যে সবার থেকে অগ্রগামী হয়েছেন! (২)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












