পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
(রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার ওয়াজ শরীফ থেকে সংকলিত)
, ১ জুমাদ্বাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৫ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ০৮ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) মহিলাদের পাতা
(ধারাবাহিক)
দ্বিতীয় ব্যক্তি দোয়া করলো যে, মহান আল্লাহ পাক! আমার জীবনে আমি তারই অনুরূপ অনেক কাজ করেছি, ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ; কোনটা আপনার জন্য করেছি, কোনটা গাইরুল্লাহ’র জন্য করেছি, অনেক কাজ করেছি। কিন্তু একটা কাজ মনে হয় আমি করেছি, খালিছ আপনার জন্যই করেছি।
সেটা হচ্ছে, আমার একটা নিয়ম ছিল, এখানো সে নিয়মটা রয়েছে। যে আমার একটা নিয়ম ছিল, এখানে সে নিয়মটা রয়েছে। যে আমার অনেক বকরী রয়েছে। প্রতিদিন রাত্রে আমি সেই বকরীগুলি দোহন করি। অর্থাৎ দুধ দোহায়ে সেই দুধ নিয়ে প্রথম আমার পিতা-মাতাকে পান করায়ে এরপর আমার সন্তানদেরকে আমি পান করাতাম।
কিন্তু একদিন কোন এক কাজের কারণে আমি আটকে যাই, যার জন্য আমার বাসায় পৌঁছতে দেরী হয়ে যায়। আমি তাড়াহুড়া করে বাড়ীতে গিয়ে দুধ দোহায়ে দুধের পাত্র নিয়ে যখন আমার পিতা-মাতার সামনে গিয়ে পৌঁছলাম তখন দেখলাম উনারা ঘুমিয়ে গিয়েছেন। এখন উনাদেরকে সজাগ করা সঠিক হবে কিনা, সেটা আমি চিন্তা করতে লাগলাম। কিন্তু আমার হাতে দুধের পাত্র। এদিকে আমার যারা সন্তান ছিল, তারা দুধ পান করার জন্য, খাদ্য খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিল।
তখন আমি চিন্তাতে ছিলাম, আমি এখন কি করবো? বাচ্চাদেরকে খাওয়াব, না আমি আমার পিতা-মাতা উনাদেরকে সজাগ করবো!
এভাবে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সকাল পর্যন্ত। সকাল হওয়ার পর আমার মাতা-পিতাকে আমি খাওয়ালাম, পান করালাম, তারপর সন্তানদেরকে আমি দিলাম। মহান আল্লাহ পাক! কমপক্ষে এ কাজটা আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য, আপনার রেজামন্দীর জন্য করেছিলাম। যেহেতু আমি আমার পিতা-মাতার খেদমত করেছি, সেই উছীলাতে আমাদের পাথরটা একটু সরিয়ে দিন। দেখা গেল তার দোয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাথরটা কিছু সরে গেল। এখনো কিছুটা বাকী রয়েছে, বের হওয়ার জন্য আর একটু রাস্তার দরকার রয়েছে।
তৃতীয় ব্যক্তি সে দোয়া করলো- মহান আল্লাহ পাক! আমার অবস্থা তাদেরই অনুরূপ তার ব্যতিক্রম নয়। আমি অনেক ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ, নেক-বদ, গাইরুল্লাহ’র জন্য অনেক আমল করেছি। তবে একটা আমল মনে হচ্ছে আমি আপনার জন্য খাছ ও খালিছভাবে করেছিলাম সেটা হলো, আমার এক আত্মীয়া ছিলেন, চাচাতো বোন, আকার-আকৃতি, ছুরত-সীরতে সে দেখতে উত্তম ছিল। উদ্দেশ্য আমার খারাপ ছিল। খারাপ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য অনেক কোশেশ আমি করেছি, সে রাজী হয়নি।
শেষ পর্যন্ত আমি একশত দিনারের (সে যামানায় অনেক টাকা) পরিবর্তে তাকে রাজী করিয়েছিলাম। অনেক কষ্ট করে টাকা-পয়সা অর্থাৎ একশত দিনার সংগ্রহ করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেটা তাকে দিয়ে রাজী করিয়ে যখন আমি আমার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে যাবো, নিরিবিলি ঘরে গিয়ে পৌঁছলাম, তখন সেই মেয়েটা বলেছিল, হে ব্যক্তি! তুমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আমার মান-ইজ্জত, সম্মন নষ্ট করো না।
এটা বলার সাথে সাথে আমার হুঁশ ফিরে আসলো, আমি সেখান থেকে আসলাম আমার একশত দিনারের মোহ ত্যাগ করে, সেটা তার কাছে রেখেই আমি চলে আসলাম। আর সে পয়সা আনিনি, সে পাপ থেকে আমি ফিরে আসলাম, আর সে পাপও আমি করিনি। শুধুমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্যই আমি সেটা করেছিলাম মহান আল্লাহ পাক! আপনি এই নেক কাজের উছীলায় কমপক্ষে আমাকে অর্থাৎ আমাদের পাথরকে সরিয়ে দিন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পাথরটা পুরাপুরি সরিয়ে দিলেন। তারা বের হয়ে আসলো। এখন এখানে ফিকিরের বিষয়- এ হাদীছ শরীফ থেকে অনেক মাসয়ালাই অনেকে বলে থাকেন।
এক নাম্বার মাসয়ালা হলো, নেক কাজের উছীলা দিয়ে দোয়া করা জায়েয রয়েছে, এটা পূর্ববর্তী যামানা থেকে জারি হয়ে আসছে। এরপর যারা ফরয নামাযের পর মুনাজাত পাঠের বিরোধী, তারা এখান থেকে দলীল দিয়ে থাকে মুনাজাত সবসময় আলাদা আলাদা করতে হবে। মূলতঃ উপরোক্ত ঘটনায়, তাদের এ কথার কোন মিল নেই। এটা হচ্ছে তাদের ব্যক্তিগত মুনাজাত, ব্যক্তিগত দোয়া করার বিষয়।
আরেকটা কথা হলো, যারা বলে থাকে বর্তমানে প্রভিডেন্ড ফান্ডের সুদের টাকাটা জায়েয তারা দলিল হিসাবে এটা পেশ করে থাকে, সেই লোকটা তার শ্রমিক, তার কাছে বা নিকটে যে টাকা রেখে গিয়েছিল, সেটা সে যখন বাড়িয়ে সে যখন দিলো, সেটা যদি জায়েয হয় তাহলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বাড়তি টাকা কেন জায়েয হবে না? মুলতঃ সেটা ছিল হালাল আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের বাড়তি টাকা হচ্ছে হারাম। কারণ উক্ত মালিক তার শ্রমিকের শ্রমের বিনিময়ে পাওনা টাকা দিয়ে ব্যবসা করে লাভ হওয়ার কারণে লাভসহ শ্রমিককে ফিরিয়ে দিয়েছে। যদি এখানে ব্যবসায় লোকসান হতো, তথাপিও মালিকের উপর ফরয ছিল শ্রমিককে তার শ্রমের বিনিময়ে পাওনা টাকা দিয়ে দেয়া। শ্রমিক তার পাওনা টাকাটা হস্তগত করার পূর্বেই মালিক সেটা দিয়ে ব্যবসা করেছিল। আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের বাড়তি টাকা হচ্ছে সুদ। কারণ প্রভিডেন্ট ফান্ডের চাঁদা দাতার হস্তগত হওয়ার পর তার থেকে সরকার টাকা গ্রহণ করে সে টাকা সুদে খাটিয়ে সুদের এক অংশ সরকার গ্রহণ করে আরেক অংশ চাঁদাদাতাকে দেয়। কাজেই এটা সম্পূর্ণ হারাম। আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের চাঁদাদাতাকে কখনো লোকসানের সম্মুখীন হতে হয় না।
এখানে যেটা বলার মূল বিষয়, সেটা হচ্ছে এই লোকটা তার পিতা-মাতার সাথে কৃত নেক কাজের উছিলা দিয়ে দোয়া করেছে। সে দোয়াতে মহান আল্লাহ পাক তিনি পাথরটা সরিয়ে দিয়েছেন। আরো অন্যন্যরাও নেক কাজের উছিলা দিয়ে দোয়া করেছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












