সুওয়াল-জাওয়াব:
প্রসঙ্গ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা বিশেষ শান মুবারক “ছায়া ছিলো না” সম্পর্কে বাতিলদের বক্তব্য খন্ড
, ০৭ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০১ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
সুওয়াল:
যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মাধ্যমে বিশ্ববাসী অবগত আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া ছিলো না। কিন্তু এক মাহফিলে জনৈক বক্তা তার বক্তব্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া না থাকার বিষয়টিকে অস্বীকার করে এবং বলে যে, “ছায়া ছিলো না” সম্পর্কিত বর্ণনাসমূহ নাকি মিথ্যা ও বানোয়াট। নাউযুবিল্লাহ!
জানার বিষয় হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া না থাকার বিষয়টি যারা অস্বীকার করবে তাদের ব্যাপারে ইসলামী শরীয়ত উনার কি ফায়ছালা? আর ছায়া ছিলো না সংক্রান্ত বর্ণনাসমূহ কোন পর্যায়ের? বিস্তারিতভাবে দলীল সহকারে জানতে চাই।
জাওয়াব: (৪র্থ অংশ)
হযরত শায়েখ মুহম্মদ তাহের রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাজমাউল বিহারে উল্লেখ করেন-
من اسمائه صلى الله تعالى عليه وسلم النور قيل من خصائصه صلى الله تعالى عليه وسلم انه اذا مشى فى الشمس والقمر لا يظهر له ظل.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকসমূহ থেকে একটি মুবারক নাম হলো নূর। বলা হয়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বৈশিষ্ট্যসমূহ থেকে একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সূর্য এবং চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার কোন ছায়া প্রকাশ পেতো না।
হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাকতুবাত শরীফের তৃতীয় খ-ে উল্লেখ করেছেন-
اورا صلى الله تعالى عليه وسلم سايه نبود در عالم شهادت سايه هر شخص ازشخص لطيف تراست ..ون لطيف تري ازوى صلى الله تعالى عليه وسلم در عالم نباشد او را سايه .صورت وارد.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া ছিলো না। প্রত্যেক লোকেরই ছায়া উনার দেহের থেকে সূক্ষ্ম। যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অপেক্ষা আর কিছুই সূক্ষ্ম নয় তখন উনার ছায়া কি আকার ধারণ করতে পারে?”
হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মাদারিজুন নুবুওয়াতে বলেছেন-
ونبود مر أنحضرت را صلى الله تعالى عليه وسلم سايه نه در افتاب ونه در قمر.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও দেখা যেতো না। ”
হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীরে আযীযীতে উল্লেখ করেন-
سایہ ایشاں بر زمین نمی افتاد.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মাটিতে পড়তো না। ”
হযরত ইমাম নাসাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাফসীরে মাদারিক শরীফে উল্লেখ করেছেন-
قال حضرت عثمان ذو النورين عليه السلام ان الله ما اوقع ظلك على الارض لئلا يضع انسان قدمه على ذالك الظل.
অর্থ: আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছিলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আপনার ছায়া মাটিতে পড়তে দেননি। যাতে মানুষ আপনার ঐ ছায়ার মধ্যে পা রাখতে না পারে।
সীরাতে শামীতে উল্লেখ করা হয়েছে-
الامام الحكيم قال معناه لئلا يطأ عليه كافر فيكون مذلة له.
অর্থ: ইমাম হাকিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া না থাকার হিকমত এই যে, যাতে কোন বিধর্মী কাফিরেরা উনার ছায়ার উপর পা রাখতে না পারে। কেননা উনার ছায়া মাটিতে পড়লে বিধর্মীরা উনার ছায়ার মধ্যে পা রেখে উনার ছায়াকে অপমানিত করতো।
এ সম্পর্কে সীরাতে হালবিয়ায় একটি ঘটনা উল্লেখ আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন, এক ইহুদী উনার ছায়া মাড়িয়ে যাচ্ছিলো। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে ইহুদী জবাব দিলো, সে উনাকে কোন দিক থেকেই কাবু করতে পারেনি। সেজন্য উনার ছায়া সে পদদলিত করছে। নাউযুবিল্লাহ!
হযরত ইমাম ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আফদ্বালুল ক্বোরায় উল্লেখ করেন-
انه صلى الله تعالى عليه وسلم صار نورا انه كان اذا مشى فى الشمس والقمر لا يظهر له ظل.
অর্থ: “নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূর ছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি যখন চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া প্রকাশ পেতো না। ”
ফক্বীহে মিল্লাত হযরত আল্লামা মুফতী জালালুদ্দীন আহমদ আমজাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ফতওয়ায়ে ফয়জুর রসূল কিতাবের প্রথম খ-ের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
بیشک حضور پرنور سر کار اقدس صلی اللہ علیہ وسلم کی جسم اقدس کا سایہ نھیں پڑتا تھا جیسا کہ حدیث شریف میں ھی لم یکن لہ ظل لا فی الشمس ولا فی القمر یعنی سورج اور چاندکی روشنی میں حضور کا سایہ نھیں پڑتا تھا-
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জিসিম মুবারকের ছায়া (যমীনে) পড়তো না।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে যে, চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া পড়তো না। ”
অনুরূপভাবে ফতহুল আযীয, আনওয়ারে মুহম্মদিয়া, মিনহাজে মুহম্মদিয়া, মুতালিউল মুসাররাত, রেসালায়ে হুদালহয়রান ফি নাফয়িল ফাইয়ি আন সাইয়্যিদিল আকওয়ান, রেসালায়ে কাউনারুত তামাম ফি নাফয়ি জিল্লে আন সাইয়্যিদিল আনাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রেসালায়ে নাফয়িল ফাই, সীরাতে হালবিয়া, আল ইকতেবাছ ইত্যাদি কিতাবসমূহেও উল্লেখ রয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া ছিলো না।
এছাড়াও আরো অসংখ্য দলীল রয়েছে যাতে উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া ছিলো না।
অতএব, উল্লেখিত দলীলসমৃদ্ধ বর্ণনাসমূহের ভিত্তিতে এ আক্বীদা পোষন করতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া ছিলো না। এ আক্বীদাই পোষণ করা সকলের জন্য ফরয। এর খিলাফ বা বিপরীত আক্বীদা পোষণ করা কুফরী। (সমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সুন্নতী কদমবুছি বিষয়ে কওমী মুখপত্রের শরীয়তের খেলাফ বক্তব্যের খন্ডনমূলক জাওয়াব
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১৪)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: হজ্জের ফরজ আদায়ে হারাম ছবি তোলাকে সাময়িক বৈধতা প্রদান....
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৬)
২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৫)
১৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পুরুষ-মহিলা নামায আদায়ের ছহীহ পদ্ধতি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৪)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ড
০৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে ‘নাফরমান’ বলা চরম বেয়াদবী ও কুফরী (৩)
০৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কথিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ে শরঈ ফতওয়া (১০)
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন সম্পর্কে বাতিলদের মনগড়া বক্তব্য খন্ডন
২৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












