বিশ্বের সবচেয়ে বিরল রক্তের গ্রুপ কোনটি ও কেন?
, ১৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৯ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পাঁচ মিশালী
প্রতি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র একজনের শরীরে থাকে বিরল এই রক্ত। বিরল রক্তের গ্রুপ যাদের, এমন মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজে আসবে- এমন আশায় এ রক্ত এখন ল্যাবরেটরিতে তৈরির চেষ্টা করছেন গবেষকরা।
রক্ত সঞ্চালন, বা অন্য কাউকে রক্ত দান করার যে প্রক্রিয়া আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সেটি সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। যদি আমরা কখনো আহত হই বা বড় ধরনের সার্জারির প্রয়োজন হয়, তাহলে অন্যের রক্ত জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।
কিন্তু সবাই এই পদ্ধতি থেকে উপকৃত হতে পারেন না। রক্তের গ্রুপ মিলে না- এমন রক্ত খুঁজে পেতে মানুষ হিমশিম খান।
তবে, এ বিষয়ে সহায়ক হতে পারে সেই বিরল রক্ত যাতে আরএইচ ফ্যাক্টরের উপস্থিতি নেই (আরএইচ নাল)। তবে এই রক্ত পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে মাত্র প্রায় ৫০ জনের শরীরে।
আবার এই রক্ত যাদের শরীরে আছে তারা যদি কখনো দুর্ঘটনার শিকার হন এবং রক্ত নেওয়ার দরকার পড়ে, সেক্ষেত্রে তাদের জন্য উপযুক্ত রক্ত পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম, এক প্রকার অসম্ভবই বলা চলে।
এ জন্য যাদের রক্তের গ্রুপ আরএইচ-বিহীন, তাদেরকে নিজেদের রক্ত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
দুষ্প্রাপ্য হলেও এ রক্ত বিভিন্ন কারণে অত্যন্ত মূল্যবান। চিকিৎসা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা মহলে একে কখনো কখনো ‘গোল্ডেন ব্লাড’ বলা হয় এর বহুমুখী ব্যবহারযোগ্যতার কারণে।
বিজ্ঞানীরা যেহেতু বর্তমানে দান করা রক্ত ব্যবহারে রোগ প্রতিরোধজনিত যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা দূর করার উপায় খুঁজছেন, সেহেতু এটি সবার শরীরে দেওয়া যায় এমন রক্ত তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।
রক্তের গ্রুপ কিভাবে নির্ধারিত হয়?
আপনার শরীরে যে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, তার ধরন নির্ধারিত হয় লাল রক্তকণিকার উপরিভাগে কিছু নির্দিষ্ট উপাদানের থাকা না থাকার ওপর।
এই উপাদানগুলোকে অ্যান্টিজেন বলা হয়। এগুলো মূলত প্রোটিন বা শর্করা, যা কোষের পৃষ্ঠ থেকে বেরিয়ে থাকে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সেগুলো শনাক্ত করতে পারে।
‘আপনি যদি এমন দাতার রক্ত গ্রহণ করেন যার অ্যান্টিজেন আপনার রক্তের অ্যান্টিজেন থেকে ভিন্ন, তাহলে আপনার শরীর সেই রক্তের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে এবং সেই রক্তকে আক্রমণ করবে,’ বলেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের সেল বায়োলজির এক অধ্যাপক।
‘ওই একই রক্ত আপনি আবার নিলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।’
রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার সবচেয়ে শক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এমন দুটি ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম হলো এবিও এবং রেসাস (আরএইচ)।
যাদের রক্তের গ্রুপ এ, তাদের লাল রক্তকণিকার পৃষ্ঠে থাকে এ অ্যান্টিজেন।
যাদের বি গ্রুপ, তাদের থাকে বি অ্যান্টিজেন।
এবি গ্রুপে এ ও বি-দুটি অ্যান্টিজেন থাকে, আর ও গ্রুপে কোনোটি থাকে না।
প্রতিটি রক্তের গ্রুপই আবার আরএইচ পজিটিভ অথবা আরএইচ নেগেটিভ হতে পারে।
যাদের রক্ত ও নেগেটিভ তাদের প্রায়শই ‘ইউনিভার্সাল ডোনার’ বা সবাইকে রক্ত দিতে পারবে বলা হয়। যেহেতু তাদের রক্তে এ, বি বা আরএইচ অ্যান্টিজেন থাকে না। যদিও বিষয়টি অতিসরলীকরণ।
প্রথমত, ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৪৭টি স্বীকৃত রক্তের গ্রুপ এবং ৩৬৬টি ভিন্ন অ্যান্টিজেন চিহ্নিত হয়েছে।
এর মানে হলো, কোনো ব্যক্তি যদি ও নেগেটিভ রক্ত গ্রহণও করেন, তবুও রক্তে থাকা অন্যান্য অ্যান্টিজেনের কারণে তার শরীরে প্রতিরোধকারী (ইমিউন) প্রতিক্রিয়া হতে পারে- যদিও কিছু অ্যান্টিজেন অন্যগুলোর তুলনায় বেশি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
দ্বিতীয়ত, ৫০টির বেশি আরএইচ অ্যান্টিজেন রয়েছে। সাধারণভাবে যখন কেউ নিজেকে আরএইচ নেগেটিভ বলেন, তারা মূলত আরএইচ (ডি) অ্যান্টিজেন উল্লেখ করছেন, তবে তাদের রক্তকণিকায় তখনো অন্যান্য আরএইচ প্রোটিন থাকে।
বিশ্বজুড়ে আরএইচ অ্যান্টিজেনের ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে, যা প্রকৃত রক্তদাতার সঠিক মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন করে তোলে- বিশেষ করে কোনো দেশের জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ক্ষেত্রে।
তবে আরএইচ ফ্যাক্টর নেই যেসব মানুষদের রক্তে, তাদের মোট ৫০টি আরএইচ অ্যান্টিজেনের কোনোটিই নেই। যদিও এই ব্যক্তিরা অন্য কোনো ধরনের রক্ত নিতে পারেন না, তবে তাদের রক্ত সব ধরনের আরএইচ রক্তের ধরনের সঙ্গে উপযুক্ত।
এই বিষয়টি ও টাইপ আরএইচ নাল রক্তকে অত্যন্ত মূল্যবান করে তোলে। কারণ অধিকাংশ মানুষ এটি গ্রহণ করতে পারেন, যার মধ্যে এবিও-এর সব ভ্যারিয়েন্ট আছে এমন মানুষরাও অন্তর্ভুক্ত।
জরুরি অবস্থায়, যেখানে রোগীর রক্তের ধরন নিয়ে তথ্য নেই, সেক্ষেত্রে কম অ্যালার্জির ঝুঁকিতে থাকা ও টাইপ আরএইচ নাল রক্ত দেওয়া যেতে পারে। এই কারণে, বিশ্বের বিজ্ঞানীরা এই ‘সোনালি রক্তের’ মতো রক্ত তৈরির উপায় খুঁজছেন।
আরএইচ-বিহীন রক্তের উৎপত্তি:
সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, আরএইচ-বিহীন রক্ত জিনগত রূপান্তরের কারণে উৎপন্ন হয়, যা একটি প্রোটিনকে প্রভাবিত করে। এই প্রোটিনটি লাল রক্তকণিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এটিকে আরএইচ অ্যাসোসিয়েটেড গ্লাইকোপ্রোটিন বা আরএইচএজি বলা হয়।
এই জেনেটিক মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তনগুলো প্রোটিনটির আকার ছোট বা বিকৃত করে দেয়, যার ফলে অন্যান্য আরএইচ অ্যান্টিজেনের প্রকাশে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
২০১৮ সালে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও সহকর্মীরা ল্যাবরেটরিতে আরএইচ নাল রক্তের অনুকরণ তৈরি করতে সফল হন। এর জন্য তারা ল্যাবে উৎপন্ন অবিকশিত কতগুলো লোহিত রক্ত কণিকা ব্যবহার করেন।
এরপর গবেষকরা সিআরআইএসপিআর-সিএএস৯ নামের জিন এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঁচটি প্রধান ব্লাডগ্রুপের অ্যান্টিজেন সংশ্লিষ্ট জিনগুলো মুছে ফেলেন।
এই পাঁচটি রক্তের গ্রুপে মিল না হওয়ার কারণে সাধারণত রক্ত সঞ্চালনে সবচেয়ে বড় অসংগতি দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে এবিও এবং আরএইচ অ্যান্টিজেনের পাশাপাশি কেল, ডাফি এবং জিপিবি নামের অন্যান্য অ্যান্টিজেনও।
পরীক্ষামূলক এই কৃত্রিম রক্ত মানবদেহে পরীক্ষা করার পর্যায়ে পৌঁছাতে বিজ্ঞানীদের ১০ বছরের গবেষণা লেগেছে।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইন্দোনেশিয়ার গ্রিন ইসলাম বিপ্লব: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভিভিআইপি ও ভিআইপি কারা, কি ধরনের অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন তারা?
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সিসিইউ আর আইসিইউ উভয়ই জরুরি, কোনটার কাজ কি?
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আফ্রিকা ভেঙে সৃষ্টি হচ্ছে এক নতুন মহাসাগর
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মৌমাছির বিষে এক ঘণ্টায় ধ্বংস স্তন ক্যানসার কোষ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১৩ বছরের অপেক্ষার পর দেখা মিললো বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ফুলের
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্তানের উচ্চতা স্বাভাবিকভাবে বাড়বে যে ৩ ফলের রসে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শুক্র গ্রহে একদিন পৃথিবীর এক বছরের চেয়েও দীর্ঘ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে মস্তিষ্ক -গবেষণা
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাম দিয়েই জমির মালিকানা যাচাই করবেন যেভাবে?
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হারিয়ে যাওয়া সুপারনোভার সন্ধান, পথ দেখালো ইসলামের স্বর্ণযুগের আরবি কবিতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোন বাদামের কেমন পুষ্টিগুণ, খাবেনই-বা কতটুকু?
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












