ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
, ০৩ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৭ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৫ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ
(গত ৫ যিলহজ্জ শরীফের পর)
মহান মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি যা আদেশ করবেন তা নির্দ্বিধায় পালন করবে। এটাই মুরীদের জন্য কল্যাণকর। সে সম্পর্কে আরো একটি ওয়াকেয়া রয়েছে।
হযরত যুন নুন মিশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন মুরীদ ছিলেন। তিনি একাধারে একই স্থানে চল্লিশ দিন করে চল্লিশবার নির্জনে ইবাদত করেছিলেন। চল্লিশবার হজ্জ আদায় করেছিলেন। একাধারে চল্লিশ বছর সারা রাত ইবাদতে লিপ্ত ছিলেন। একবার উক্ত মুরীদ হযরত যুন নুন মিশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকটে আবেদন জানালেন, হুজুর! আমি আপনার নির্দেশ অনুযায়ী দীর্ঘ চল্লিশ বছর ইবাদত-বন্দেগী করলাম; কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার বন্ধু (মহান আল্লাহ পাক) আমার সঙ্গে কোন কথাই বললেন না। একবারও আমার দিকে তাকালেনও না। বেলায়েতের কোন অংশই প্রাপ্ত হলাম না। এমনকি কোন গুপ্ত তত্ত্বও আমার কাছে প্রকাশ পেলো না।
হুজুর! যা বললাম, তার দ্বারা আমার নিজের গুণাবলী প্রকাশ করা উদ্দেশ্য নয় বরং নিজের দীনতা-হীনতা ও কাতরতার কথাই আপনার কাছে নিবেদন করছি। অবশ্য আমি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি কোন কু-ধারণা পোষণ করছি না বা নিন্দাবাদ লেপন করছি না। বরং মনে-প্রাণে পুরোপুরিভাবে আমি উনার প্রতি কুরবান হতে সদা প্রস্তুত। আর এ কথাও বলি না যে, আমার হৃদয় ইবাদত-বন্দেগীতে শিথিল হয়ে আসছে। অবশ্য ভয় হচ্ছে যে, হয়ত আমি আর খুব কম সময়ই বেঁচে থাকবো। সুতরাং জীবনটা যদি এ ব্যর্থতার গ্লানি নিয়েই শেষ হয়ে যায়, তাহলে কেমন হবে? সারাটা জীবন কেবল আশায় আশায় কাটিয়ে দিলাম, অথচ কোন কিছুই নসীব হলো না। হুজুর! আপনি কঠিন রোগের সুযোগ্য চিকিৎসক। বেয়াদবী মাফ চাই! আমার রোগের চিকিৎসার জন্য আপনার করুণা প্রার্থনা করছি।
মুরীদের এরূপ দীর্ঘ অনুযোগ শুনে বললেন, “তুমি এক কাজ করো, আজ রাতে পেট ভরে খাওয়া-দাওয়া করো এবং ইশার নামায আদায় না করে সারা রাত ঘুমিয়ে কাটিয়ে দাও। তোমার বন্ধু (মহান আল্লাহ পাক) যখন খুশি মনে দেখা দিলেন না, এবার হয়ত কঠোর রূপেই আত্মপ্রকাশ করবেন। ”
শায়েখের কথা মত সত্যিই তিনি রাতে পেট ভরে খানা-পিনা করলেন। অতঃপর ইশার নামায না পড়ে শয্যায় গেলেন, কিন্তু তার মন নামায ত্যাগ করতে কিছুতেই রাজী হলো না। অগত্যা ফরয নামায আদায় করে শুয়ে পড়লেন। মহান আল্লাহ পাক উনার অপার মহিমা, ঐ রাতেই তিনি স্বপ্নে দেখলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বলছেন, শুনো! তোমার বন্ধু তোমাকে সালাম জানিয়ে বলেছেন, “যে লোক আমার দরবারে এসে দায়েম-কায়েম থাকতে পারে না বরং অতি অল্পতেই ধৈর্য্যচ্যুত হয়ে পড়ে সে কাপুরুষ। ইবাদতে ছবর রাখা অতি আবশ্যক। তাতে বিরক্ত না হওয়া উচিত। ” মহান আল্লাহ পাক তিনি আরও বলেছেন- “হে প্রিয় বান্দা! আমি তোমার চল্লিশ বছরের আশা পূর্ণ করবো এবং তোমার প্রার্থিত বস্তু তোমাকে দান করবো। তবে যুন নুন মিশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে যে, আমি উনাকে শহরের মধ্যে লজ্জিত, অপমানিত করবো তবে আর তিনি আমার দরবারে আগত আশিক এবং মনোনীত বান্দাগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজী করবেন না। ”
হযরত যুন নুন মিশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ ঘুম থেকে জেগে উঠে কাঁদতে কাঁদতে উনার শায়েখের দরবারে গেলেন এবং স্বপ্নের বিবরণ আদ্যোপান্ত বর্ণনা করলেন। হযরত যুন নুন মিশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন শুনলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সালাম জানিয়ে মিথ্যা দাবীদার দরবেশ বলেছেন। ” তখন তিনি আনন্দে-অতিসয্যে চোখের পানি সংবরণ করতে পারলেন না।
প্রশ্ন হতে পারে, হযরত যুন নুন মিশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি কামিল শায়েখ তো বটেই ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ তরীকত ছিলেন। তিনি স্বীয় মুরীদকে নামায না পড়ে এবং অন্য কোন ইবাদত-বন্দেগী না করে শুয়ে থাকার জন্য কি করে নির্দেশ করতে পারেন? আবার আমিরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুরীদকে পতিতালয়ে যাওয়ার নির্দেশ করেছেন যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের সম্পূর্ণ খেলাফ। তা কি কখনও জায়েয হতে পারে?
উত্তরে বলা হয় যে, যারা হাক্বীক্বী নায়েবে নবী, হক্কানী-রব্বানী আলেম তথা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনারা মূলতঃ চিকিৎসকের ন্যায়। প্রয়োজনে চিকিৎসকগণ কখনও কখনও বিষের সাহায্যেও রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। কেউ যদি তা বুঝতে সক্ষম হয়।
হযরত যুন নুন মিশরী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন বুঝতে পারলেন যে, ঐ ব্যবস্থায় বিশেষ ফল পাওয়া যেতে পারে তখনই তিনি সে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। অনুরূপ আমিরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার কাশ্ফ বা রূহানী শক্তি দ্বারা অবহিত ছিলেন যে, উনার উক্ত মুরীদের স্ত্রী পতিতালয়ে বন্দী অবস্থায় আছেন। কাজেই সেখানে গেলে তাকে পাবে এবং নিয়ে আসাও সম্ভব হবে সেহেতু স্বীয় মুরীদকে পতিতালয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর হাক্বীক্বতে হয়েছেও তাই।
এরূপ তরীকতের ক্ষেত্রেও বহু ব্যাপার আছে, যা বাহ্যিকদৃষ্টিতে শরীয়ত বিরোধী বা অপছন্দনীয় বলে মনে হয়; কিন্তু সূক্ষ¥ভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, তাতে কল্যাণই নিহিত। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আদব রক্ষা করার গুরুত্ব
১৬ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












