মন্তব্য কলাম
রোগের খনি সাদা চিনি! বিপরীতে ব্র্যান্ডিং, যথাযথ প্রচারণার অভাবে অবহেলায় উপকারি দেশীয় লাল চিনি সরকারের উচিত, লাল চিনিকে বাজারসুলভ করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা।
, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মন্তব্য কলাম
খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে চিনি একটি অতীব প্রয়োজনীয় পণ্য। আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন খাদ্যে চিনির প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের বাজারে প্রধানত দুই ধরণের চিনির দেখা মেলে। সাদা চিনি ও লাল চিনি। লাল চিনি মূলত দেশীয় আখ থেকে তৈরী করা।
দেশে আখের চিনি সরবরাহকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) আওতাভুক্ত ১৬টি চিনিকল। আর বিটনির্ভর আমদানিকৃত ও পরিশোধিত চিনি সরবরাহ দিচ্ছে গুটিকয়েক বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে উৎপাদিত চিনির চাহিদা সাম্প্রতিক সময়ে বাড়লেও এখনও সার্বিকভাবে বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোই ক্রেতার চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করছে। পাশাপাশি ক্রেতা আকৃষ্টে আকর্ষণীয় মোড়ক, প্রচারণা, জনবল, বিক্রয়কেন্দ্র সবকিছুই বেশি এসব প্রতিষ্ঠানের। অপরদিকে প্রচারণা কম থাকায় এবং সার্বিকভাবে উৎপাদন ও বিক্রয়কেন্দ্র কম হওয়ায় আখের চিনিতে বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়ার বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
লালচে রঙের দেশীয় চিনি স্বাস্থ্যকর হওয়া সত্ত্বেও ভুল ধারণা থেকে এড়িয়ে চলে সাধারণ ক্রেতারা। খোঁজ করা হয় বিট থেকে উৎপাদিত ঝকঝকে, মিহি দানার সাদা চিনি। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে সাদা চিনির আধিপত্য দেশবাসীর স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেÑ পরিশোধিত চিনি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, দেহে খনিজ লবণের ভারসাম্য নষ্ট করে, শিশুদের বদমেজাজি, অমনোযোগী ও একরোখা করে, ডায়াবেটিকস’এর ঝুঁকি বাড়ায়, টিস্যুর স্থিতিস্থাপকতা ও কার্যক্রম কমিয়ে দেয়, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বিশেষ করে স্তন, ওভারি, প্রোস্টেট ও রেকটাম, অভুক্ত অবস্থায় গ্লুকোজ লেভেল বাড়ায়, কপারের অভাব দেখা দেয়, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম শোষণে বাধা দেয়, দৃষ্টিশক্তি কমায়, এসিডিটি তৈরি করে, অকালে বার্ধক্য আনে, এলকোহলিজমের ঝুঁকি বাড়ায়, দাঁত ক্ষয় করে, স্থূল হতে সাহায্য করে, অন্ত্রনালীর প্রদাহ বাড়ায়, গ্যাস্ট্রিক সৃষ্টি করে, অ্যাজমার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, পিত্তথলির পাথর, হƒদরোগ, এপেনডিসাইটিস, দন্তরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি, হাড়ক্ষয়, ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হ্রাস, রক্তে ভিটামিন ই-এর পরিমাণ হ্রাস, গ্রোথ হরমোন হ্রাস, কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পরিশোধিত সাদা চিনি এসব রোগ তরান্বিত করে।
পরিশোধিত চিনির ক্ষতির আরও কারণÑ এই চিনি পরিষ্কার বা সাদা করার ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে মানুষসহ পশুপাখির হাড়ের গুঁড়া। ভারত, পকিস্তান, আফগানিস্তান, আর্জেন্টিনাসহ চিনি রপ্তানিকারক দেশগুলো হাড় ব্যবহার অন্যতম পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ব্লিচিং এবং সালফোনেশন পদ্ধতিতে চিনি পরিশোধিত করা হয় এবং সেখানে সালফার ব্যবহƒত হয়। এই সালফার বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান এবং যখন চিনি বা চিনিজাতীয় যেকোনো মিষ্টিদ্রব্য গ্রহণ করা হয়, তখন এই বিষাক্ত উপাদান মানবদেহে প্রবেশ করে।
বিপরীতে লাল চিনিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম। যার কারণে লাল চিনি খেলে হাড় শক্তপোক্ত হয়। সেই সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। ক্যাভিটি এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়। আখের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং শরীরের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। লিভার সুস্থ রাখে। জন্ডিসের প্রকোপ কমায়। কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। শরীরের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে। আখে থাকা অ্যালকেলাইন প্রপাটিজ গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শরীরের মিনারেল তথা খনিজ পদার্থের চাহিদা পূরণ করে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে, যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা হলেও লাল চিনির দিকে ঝুকছে। সাদা চিনির অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। কিন্তু তা নিতান্ত্যই সামান্য। কারণ, লাল চিনিকে সরকারিভাবে উপযুক্ত ব্র্যান্ডিং করা হয় না, আকর্ষণীয় মোড়ক, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য মাঠপর্যায়ে আলাদা বিক্রয়কেন্দ্র ইত্যাদি প্রায় কিছুই করা হয় না। ফলে দেশীয় চিনিকে মানুষ নিম্নমানের ভেবে ক্রয় করে না। মানুষ ক্রয় করে শরীরের জন্য মহাক্ষতিকর সাদা চিনি।
এক্ষেত্রে সরকারি যদি দেশীয় চিনিকে উপযুক্ত ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বাজারে ছাড়ে, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারিভাবে ক্যাম্পিং করে তাহলে ধীরে ধীরে দেশের মানুষের সাদা চিনির ব্যবহার কমে আসবে। আর এতে যে শুধু জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে তাই নয় পাশাপাশি দেশীয় চিনি উৎপাদনের সাথে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিকের জীবিকা বাঁচবে, তারা তাদের শ্রমের ন্যায্য হক্ব পাবে। সম্প্রতি রাজশাহীর চিনি কলের শ্রমিকরা উৎপাদন বয়কটের ডাক দিয়েছিলো। আর এর মুখ্য কারণই ছিলো লাল চিনি বাজারে বিক্রি না হওয়া। বিক্রি না হওয়ায় তাদের বকেয়া তেমনও জমা পড়ে আছে। তাই বাজারে দেশীয় চিনির আধিপত্যে এসব শ্রমিকদেরও অধিকার রক্ষা হবে। দেশীয় চিনি শিল্প ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
পাশাপাশি, সরকারের উচিত হবে চিনি উৎপাদনে দেশীয় আখের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা। বিভিন্ন অনাবাদি জমিতে আখ উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা করা। দেশীয় চিনি শিল্প, যেগুলো শুধু আখকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে, সেগুলো যাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করা।
পাশাপাশি, সাধারণ জনগণের দায়িত্ব হবে নিজ উদ্যোগে বাজার থেকে লাল চিনি ক্রয়ে উদ্ভুদ্ধ হওয়া। দেশের মানুষ যদি লাল চিনি কিনতে চায় তাহলে এমনিতেই বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হবে। তখন ব্যবসায়ীরাও লাল চিনি বিক্রিতে আগ্রহী হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সন্ত্রাসবাদ নয়; জিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী ফরয। ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সব নাগরিকের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
চলচ্চিত্র নামক জাহান্নামী সংস্কৃতির ফাঁদে মুসলিম উম্মাহ। নাটক-সিনেমার মাধ্যমে মুসলিম প্রজন্মকে দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিনেমার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিস্তার ঘটছে ইসলামোফোবিয়ার। পরকালের কথা স্মরণ করে মুসলিম উম্মাহকে বিধর্মীদের এসব ষড়যন্ত্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
০৯ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহম্মাদার রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে ও আমলে আনতে হবে।
০৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যসব কিছুর চেয়ে গ্রন্থাগারের বিস্তার ও মান উন্নয়নে স্মার্টলি কাজ করতে হবে ইনশাআল্লাহ
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম মদের বিরুদ্ধে দিয়েছে অসংখ্য সতর্কবাণী ও নির্দেশনা। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে দেয়া হবে মদের লাইসেন্স! মদ-জুয়ার প্রসার মহান আল্লাহ পাক উনার চরম অসন্তুষ্টির কারণ। যার পরিণতি হতে পারে খোদায়ী গযব। নাউযুবিল্লাহ!
০৬ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইতিহাসের নিরীখে, বর্তমান সংবিধান প্রণেতা গণপরিষদেরই কোন আইনী ভিত্তি বা বৈধতা ছিল না। গত ৫৪ বৎসর দেশবাসীকে যে অবৈধ সংবিধানের অধীনে বাধ্যগত করে রাখা হয়েছিলো এর প্রতিকার দিবে কে? ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দ্বীন ইসলামের প্রতিফলন ব্যাতীত কোন সংবিধানই বৈধ হতে পারে না কারণ দেশের মালিক ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান
০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বাধীনতার বয়স ৫৪ বছরে দেশ জাতি- ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, সামরিক সরকার, জাতীয়তাবাদী সরকার, স্বৈরাচার সরকার, তত্তাবধায়ক সরকার, কথিত ফ্যাসিস্ট বা মাফিয়া সরকারের পর নতুন অন্তবর্তী সরকারের’ আবর্তে জনতার না চেয়ে শুধু ছাত্র সমন্বয়কদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমান উপদেষ্টা সরকার প্রতিষ্ঠা করে- কথিত অন্তর্বর্তী সরকারকে জন্মগতভাবে বৈষম্যম-িত করা হয়েছে
০৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও বাংলাদেশে লিভ টুগেদারের স্রোত শুরু হয়েছে। লিভ টুগেদার কালচার ঠেকানোর নৈতিক ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নেই। লিভ টুগেদার সমাজে যে ভয়াবহ ক্রাইম তৈরী করছে তা প্রতিহত করতে ইসলামী অনুশাসনের বিকল্প নেই।
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাজারে ভয়ংকর ঘন চিনি মিথ্যা ঘোষণায় আসছে আমদানি নিষিদ্ধ ঘন চিনি পুরুষত্বহানি, মূত্রাশয়ে ক্যান্সারের তথা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর এই ঘন চিনি বন্ধে সরকারকে এখনি জিহাদ ঘোষণা করতে হবে
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ: সেবা পেতে ঘুষকে স্বাভাবিক মনে করছে দেশের সিংহভাগ মানুষ। বছরে ঘুষ গ্রহণের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ঘুষই সমাজে সব অভাব থেকে অনিয়মের মূল কারণ।
০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সমাজের স্রোত বা সময়ের সাথে আপোসকারীরা উলামায়ে হক্ব নয়। ইসলামী আহকাম ও আন্দোলন পদ্ধতি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় না। ইবনুল ওয়াক্ত নয়; কেবলমাত্র আবুল ওয়াক্ত উনারাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ত্রাণকর্তা ও অনুসরণীয়।
০১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ডিজিটালাইজেশনের নামে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট জগতে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হচ্ছে অশ্লীলতায়। শিখছে অনৈতিকতা, বেহায়াপনা, হিংস্রতা।
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)