সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৪)
, ২৬শে জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৯ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
মাহবুব ৭১ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে-
উল্লেখিত বর্ণনাটি (অর্থাৎ ৫৪০ মাইলের দূরত্বের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্যতার) সম্মানিত আলিমগণের একটি নিজস্ব ইজতিহাদী (গবেষণালব্ধ) বিষয় উক্ত বর্ণনাটি নিম্নোক্ত দিকসমূহের বিবেচনায় কোনোদিক হতেই গ্রহণযোগ্যতার পর্যায়ে পড়ে না।
(ক) সম্মানিত আলিমগণ শুধু শহরের কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো মানুষ শুধু শহরেই বসবাস করে না, শহরের বাইরে গ্রামেও অনেক মানুষ বসবাস করে। চাঁদ দেখার শহর হতে সেখানের দূরত্ব বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও পরিমাপ করে বের করা বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্যদের জন্য কোনভাবেই সম্ভব নয়।
জাওয়াব: প্রতারক আর কথা পায় নাই। সমস্ত কিতাবে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বালাদ অর্থ লিখেছে দেশ। আর এখানে এসে দেশ অর্থ না নিয়ে শহর অর্থ করে আলিমগণ উনাদের ভুল ধরতে গিয়ে নিজেকেই বরাবরের মত গন্ড-মূর্খ ও ধোঁকাবাজ হিসেবে প্রমাণ করলো। তা এভাবে যে, এই গন্ড-মূর্খ মাহবুব শরীয়তের দৃষ্টিতে শহরের সংজ্ঞাই জানে না। ফিক্বহের কিতাব অনুযায়ী বাংলাদেশের কোন গ্রামই, গ্রাম নয় বরং সকল গ্রামই শহরের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়াও শহরের বর্ণনার দ্বারা দূরবর্তী ও নিকটবর্তী মাত্বলা’ নির্ধারণ করাই উদ্দেশ্য। যার মধ্যে গ্রামের লোকজনকে মোটেও বাদ দেয়া হয় নাই। আর পৃথিবীতে কোথাও গ্রাম থেকে থাকলে উনারাও শহর কেন্দ্রিক অর্থাৎ যেখানে জনবহুল এলাকা সেখানে গিয়ে পবিত্র ঈদ উনার পবিত্র ছলাত আদায় করবেন। গ্রামে একাকী পবিত্র ঈদ উনার ছলাত আদায় করবে না।
(খ) ৫৪০ (৪৮০) একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা। এর অর্থ যেমন ৫৪১ (৪৮১) ও নয় তেমনি ৫৩৯ (৪৭৯) ও নয়। এ দৃষ্টিতে (৪৮০) মাইলের নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ণয় করা কখনোই সম্ভব নয়।
জাওয়াব: মূলতঃ একমাসের দূরত্ব হলো ৫৪০ মাইল দূরত্বের পথের সমান। আর এই দূরত্বের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা সাবা শরীফ উনার ১২ নাম্বার পবিত্র আয়াত শরীফ থেকে। এটাই হলো সঠিক ও বিশুদ্ধ মত এবং দূরবর্তী শহরের দূরত্ব নির্ণয়ে সবচেয়ে সহজ পন্থা। যা যুগ যুগ ধরে আজ পর্যন্ত চলে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। পক্ষান্তরে বিপরীত পন্থাটিই হলো ঝুঁকিপূর্ণ ও অসম্ভব।
(গ) ৪৮০ মাইল দূরত্ব নির্ণয়ের শুরুর স্থান নিয়েও অনেক বিড়ম্বনাই পড়তে হবে। যেমন মনে করা যাক আমাদের ঢাকা শহরের বাইতুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের চত্বর হতে কিছু মুসলিম নতুন চাঁদ দেখলো। আবার কাঁচপুর ব্রীজের উপর হতেও কিছু মুসলিম চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলো। আবার সাভার স্মৃতিসৌধ হতেও কিছু মুসলিম চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলো। বাস্তবে এ তিনটি স্থানের চেয়েও আরো দূরের আলাদা জায়গা থেকে একই সময়ে নতুন চাঁদ দেখা সম্ভব।
এখন আমাদের প্রশ্ন হলো আমরা ৫৪০ (৪৮০) মাইল দূরত্ব নির্ণয়ের শুরু তিনটি স্থানের কোনটি থেকে আরম্ভ করবো এর কোন যৌক্তিক গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা? তা পাঠকগণই ভাল বলতে পাবেন।
জাওয়াব: মাহবুবের অজ্ঞতা পাঠক সমাজের কাছে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তাই সে তার উল্লেখিত সমস্যার সমাধান জানবে না এটাই স্বাভাবিক। সঠিক সমাধান হলো: নতুন চাঁদ পৃথিবীর যত স্থানেই দেখা যাক না কেন, উক্ত স্থানসমূহের চতুর্দিকে ৫৪০ মাইল দূরত্ব নির্ণয়ের মাধ্যমেই একই মাত্বলা’ বলে ঐ সমস্ত স্থানসমূহ গণ্য হবে। এবং ঐ সকল স্থানসমূহ নতুন চাঁদ দেখার হুকুমের আওতাভুক্ত বলে গণ্য হবে। মাত্র তিনটি স্থান কেন যদি ১০০টি স্থান থেকেও নতুন চাঁদ দেখা যায়, তাহলে ঐ স্থানসমূহের চতুর্দিকের ৫৪০ মাইল দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ নতুন চাঁদ দেখার হুকুমের আওতাভুক্ত বলে গণ্য হবে। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র “মাক্বামে মাহমূদ” উনার বেমেছাল তাফসীর বিষয়ে খারেজী জাহমিয়া ফিরকার মুখোশ উম্মোচন (৯)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে কোনো স্থানেই সরাসরি বরকতময় ইসিম বা নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন মুবারক করেননি। যা উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বুলন্দী শান মুবারক উনারই বহিঃপ্রকাশ মুবারক (৪)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (১)
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
যে নিজে পর্দা করে না ও অধীনস্তদের পর্দা করায় না সে দাইয়ুস
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছহীহ্ তরজমা
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকারী, কটাক্ষকারী, অবমাননাকারীদেরকে শরঈ শাস্তি প্রদান করা ওয়াজিব
১০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)