মু’জিযাতু সাইয়্যিদিল মুরসালীন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অলৌকিকভাবে হেফাজত হওয়া
, ২৬ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ সামিন, ১৩৯১ শামসী সন , ০৯ জানুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ২৫ পৌষ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
তার কিছুদিন পর দেখা গেল, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনো তিনি আনুষ্ঠানিক সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেননি) তিনি রাস্তার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খ¦াতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মুয়ানাকা বা আলিঙ্গন করলেন মুহব্বতের সাথে। কুরাইশরা এটা দেখে ফেললো। তখন কুরাইশরা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে বললো, হে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি তো আমাদের সর্দারের ছেলে, আপনারা আইন করেছেন যে, কোন ব্যক্তি যদি সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খ¦াতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে বা মুহব্বত স্থাপন করে, তার শাস্তি মৃত্যুদ-। কিন্তু আমরা আপনাকে দেখলাম, আপনি নিজেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খ¦াতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোলাকুলি বা মুয়ানাকা মুবারক করলেন। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের আইন মুতাবেক আপনার শাস্তি হওয়া উচিত। তখন হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘সত্যি, আমি সর্দারের ছেলে হয়েছি, তাতে কি? আমাদের কৃত আইন মুতাবেক আমার শাস্তি মৃত্যুদ-। তোমরা তা বাস্তবায়িত করো। তখন হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আপনি কিভাবে শাস্তি নিবেন? তিনি বললেন, তোমরা যা পছন্দ করো। শেষ পর্যন্ত উনার কথামতই উনাকে হাত-পা বেঁধে লোহিত সাগরের মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পানিতে ডুবছিলেন না। তিনি স্বাভাবিকভাবে বেঁচে রইলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল- হাজার হাজার মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী উনার চার কিনারে ঘুরতে লাগলো এবং মহাসম্মানিত মহাপবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করতে লাগলো। কেউ উনাকে স্পর্শ করলো না। বরং তারা পিঠে ও মাথায় করে নিরাপদে উনাকে তীরে পৌঁছে দিল। এরপর উনাকে বলা হলো, এখন আপনাকে কিভাবে শাস্তি দেয়া যায়? তিনি বললেন, এক কাজ করো, আমাকে জঙ্গলে নিয়ে যাও, হিংস্র প্রাণীর মধ্যে ফেলে দাও, তাহলে আমাকে তারা খেয়ে ফেলবে, আমার শাস্তি হয়ে যাবে। উনার কথামত উনাকে জঙ্গলে রেখে আসা হলো। দেখা গেল যে, জঙ্গলের হিংস্র প্রাণীগুলি এসে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চারপাশে ভীড় করে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করতে লাগলো। অনেকক্ষণ পর একটা সিংহী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাঁধনগুলি কেটে উনাকে জঙ্গলের কিনারে পৌঁছে দিল। কুরাইশরা উনাকে পূর্ণরূপে সুস্থ অবস্থায় দেখতে পেয়ে আশ্চর্য হলো। কুরাইশরা বললো, হে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনাকে সমুদ্রের মাছ ও জঙ্গলের প্রাণীরাও ভক্ষণ করলো না বরং হিফাযত করলো, তার কি কারণ? তখন হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “আমার সাথে সমুদ্রের মাছগুলির আলাপ হয়েছে। আমি বলেছি, “হে মৎস ও প্রাণীরা! তোমরা আমাকে খেয়ে ফেল। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মুহব্বতের সহিত মুয়ানাকা মুবারক করেছি, তার শাস্তি স্বরূপ আমাকে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়েছে।” কিন্তু সমুদ্রের মাছগুলি বললো, “হে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, এটা কোনদিন সম্ভব নয়। আপনার শরীর থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘ্রাণ মুবারক আসছে। আমরা কি করে আপনাকে খাই? আমরা কি করে আপনাকে কষ্ট দিই? পানিও আপনাকে কষ্ট দিতে রাজী নয়। একমাত্র সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে, উনার মুহব্বতের কারণে। সুবহানাল্লাহ! একইভাবে জঙ্গলের পশুরাজ আমাকে একই কথা বললো এবং সম্মানের সাথে আমাকে জঙ্গলের কিনারায় পৌঁছে দিল।
অতঃপর কুরাইশরা বললো, তাহলে কি করে আপনাকে শাস্তি দেয়া যায়। তখন হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এক কাজ করো, আমাকে পাহাড়ের উপর থেকে ফেলে দাও, তাই করা হলো। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার সুমহান কুদরত মুবারকে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পাহাড়ের নিচে এসে পৌঁছলেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান সম্মানার্থে, উনার মুহব্বতের কারণে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ধরে হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পাহাড়ের নীচে নামালেন, যার কারণে উনার কিছুই হলো না।
অতঃপর উনাকে আর শাস্তি দেয়া হলো না। মৃত্যুদ- আর কার্যকর হলো না। শেষ পর্যন্ত তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার জন্য অনেক জিহাদ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত মুবারক করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে দুনিয়াবী সমস্ত আযাব থেকে হিফাযত করলেন। শুধু তাই নয়, শেষ পর্যন্ত উনাকে সম্মানিত ঈমান দান করে পরকালের আযাব থেকেও হিফাযত করেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ছোহবত মুবারক হাছিল করে ইহকাল এবং পরকালের জন্য একজন বিশিষ্ট ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হিসেবে মর্যাদাবান ব্যক্তি হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
এই ওয়াক্বিয়া থেকে এটাই অনুধাবন করা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব ও মাহবূব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যিনি মুহব্বত মুবারক করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে মুহব্বত করবেন, উনাকে সমস্ত প্রকার বালা-মুছীবত থেকে কুদরতীভাবে হিফাযত করবেন এবং তিনি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই সফলকাম ও সম্মানিত হবেন।
-মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন মুরাদী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম এবং উনার নূর মুবারকই সর্বপ্রথম সৃষ্টি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (১)
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ক্বমীছ বা জামা নিছফে সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত হওয়া সম্মানিত সুন্নত মুবারক
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (৮ম অংশ)
১১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের মর্যাদা উম্মতের মাঝে সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম স্থানে
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল ফযীলত মুবারক (১ম পর্ব)
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত হওয়ার মাধ্যম
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কদমবুছী করা খাছ সুন্নত মুবারক
১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত জিহাদ মুসলমানদের একটি বিশেষ ফরয ইবাদত
০৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












