১১ হিজরী সনের পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার আরবিয়ায়িল আখির বা শেষ বুধবারের সঠিক তারিখ প্রসঙ্গে
, ২৯ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৭ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২০ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ আমাদের কাছে অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ এবং বরকত, রহমত, সাকীনা হাছিলের দিন। হাদিয়া মুবারক দেয়া এবং দান-ছদক্বা করার দিন। ‘আখির’ অর্থ শেষ এবং ‘চাহার শোম্বাহ’ অর্থ ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)।
হিজরী সনের পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) কে পবিত্র ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ শরীফ বলা হয়। কারণ এগারো হিজরী সনের পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) দিন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বেশ কিছু দিন মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করার পর এই দিনে ছিহহাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। ফলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এই দিনে খুশি হয়ে সাধ্যমতো হাদিয়া মুবারক দিয়েছিলেন। কিন্তু চাঁদের গণনা অনুযায়ী ‘শেষ ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার ২৯ তারিখে ছিলো, নাকি ৩০ তারিখে ছিলো’ তা আমাদের আলোচ্য বিষয়।
এখানে প্রথমেই যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে, তা হচ্ছে- পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিশেষ দিনগুলোর ক্ষেত্রে যে তারিখ পাওয়া যায়, তার সাথে সঙ্গতি রেখেই তারিখ বিশ্লেষণ করতে হবে। যেমন, ১০ম হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার আরাফার পবিত্র দিন (৯ তারিখ) ছিলো জুমুয়াবার।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ উনার তারিখ পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ, ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার। আবার পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ বার ছিলো আরবিয়া (বুধবার)। আরবিয়া বা বুধবারে পবিত্র ছফর শরীফ মাস শেষ না হলে পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার হবে না। অবশ্যই পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস, খমীস বা বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছিলো।
এখন প্রশ্ন, সেই ১১ হিজরী সন উনার পবিত্র ছফর শরীফ মাস ২৯ দিনে, নাকি ৩০ দিনে হয়েছিলো- তা নির্ণয় করতে হলে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে প্রাপ্ত তারিখগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে গণনা করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ১০ হিজরী সনের পবিত্র যিলক্বদ শরীফ মাস থেকে গণনা করলে আমাদের হিসাব মিলাতে সুবিধা হবে। ১০ হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার আমাবস্যা সংঘটিত হয়েছিলো ২৫শে ফেব্রুয়ারি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা বা মঙ্গলবার।
চাঁদ তালাশ করা হয়েছিলো আরবিয়া (বুধবার)। সেদিন চাঁদের বয়স ছিলো ১৮ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট, উচ্চতা ৭ ডিগ্রি ২৬ মিনিট, কৌণিক দূরত্ব ৯ ডিগ্রি ৪৭ মিনিট। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে চাঁদ দৃশ্যমান হয়েছিলো কিন্তু পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে চাঁদ দৃশ্যমান হয়নি।
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে আরবিয়া (বুধবার) চাঁদ দেখা গিয়েছিলো বলেই খামীস বা বৃহস্পতিবার দিন ছিলো পবিত্র পহেলা যিলহজ্জ শরীফ এবং জুমুয়াবার ছিলো পবিত্র ৯ই যিলহজ্জ শরীফ (আরাফার দিন)।
কিন্তু পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে চাঁদ দেখা যায়নি; তার প্রমাণ হচ্ছে- খামীস বা বৃহস্পতিবার থেকে পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস গণনা করলে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার বার ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার মিলানো অসম্ভব। সুতরাং আমরা এবার পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মাস গণনা নিয়েই আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
পবিত্র যিলক্বদ শরীফ মাস খামীস বা বৃহস্পতিবার ৩০ দিনে পূর্ণ করে পবিত্র পহেলা যিলহজ্জ শরীফ মাস শুরু হয়েছিলো জুমুয়াবার। পবিত্র ২৯শে যিলহজ্জ শরীফও ছিলো জুমুয়াবার। পবিত্র ২৯শে যিলহজ্জ শরীফ, জুমুয়াবার পবিত্র মুহররম শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও চাঁদ দেখা যায়নি। তাই পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস ৩০ দিনে পূর্ণ হয়েছিলো। ফলে ৩০শে যিলহজ্জ শরীফ ছিলো সাবত বা শনিবার। অতঃপর পবিত্র পহেলা মুহররম শরীফ ছিলো আহাদ বা রোববার। আর পবিত্র ২৯শে মুহররম শরীফও ছিলো আহাদ বা রোববার।
পবিত্র ২৯শে মুহররম শরীফ, আহাদ বা রোববার পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখা যাবার সম্ভাবনা থাকলেও চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে পবিত্র মুহররম শরীফ মাসও ৩০ দিনে পূর্ণ হয়।
পবিত্র ৩০শে মুহররম শরীফ ছিলো ইছনাইনিল আযীম শরীফ বা সোমবার। আর পবিত্র পহেলা ছফর শরীফ ছিলো ছুলাছা বা মঙ্গলবার। আর সে বছর পবিত্র ২৯শে ছফর শরীফও ছুলাছা বা মঙ্গলবার। সেদিন পবিত্র শাহরুল আ’যম শরীফ মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনারও ৩০ দিন গণনা করা হয়। পবিত্র ৩০শে ছফর শরীফ ছিলো ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)।
সুতরাং প্রতিভাত ও প্রমাণিত হচ্ছে যে, ১১ হিজরী সনের পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ আরবিয়া (বুধবার) ছিলো ৩০শে ছফর শরীফ।
সে সময় পরপর কয়েকটি মাস ৩০ দিনে পূর্ণ হবার কয়েকটি কারণ বর্ণনা করা হলো-
(১) এখন আধুনিক প্রযুক্তির তথা মোবাইলের যুগে আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের খবর সহজেই পেয়ে যাই; তখন তা সম্ভব ছিলো না। ফলে প্রতিটি শহর আলাদাভাবে চাঁদ দেখতো।
(২) সে সময় ঘনবসতি ছিলো না। ফলে কোনো কারণে কোনো অঞ্চলের আকাশ মেঘলা থাকলে লোকজন চাঁদ দেখতে না পেলে তারিখ পরিবর্তিত হয়ে যেত।
(৩) ১০ হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস এবং ১১ হিজরী সনের পবিত্র মুহররম শরীফ মাস এবং পবিত্র ছফর মাস শুরু হয়েছিলো গ্রীষ্মকালে (মার্চ-এপ্রিল)। অর্থাৎ সে সময় পবিত্র মদীনা শরীফ উনার আকাশ মেঘলা থাকাই ছিলো স্বাভাবিক।
(৪) মরুঝড় অনেক সময় চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রকৃত কারণ মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই ভালো জানেন।
-আল হিলাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












