ইতিহাস
ইতিহাসের পাতায় মিল্লাতে মুজাহিদে আ’যম হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩)
, ০৬ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১২ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) ইতিহাস
(দ্বিতীয় পর্বের পর)
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন ১২ বছর তখন উনার সম্মানিত পিতা বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনার বিছাল শরীফ গ্রহণের পর তিনি রায়বেরেলী শহর থেকে লাখনৌর দিকে যাত্রা করেন। সে সময় লখনৌর শাসক ছিলো নওয়াব সাদাত আলী খান। যে নবাব সুজাউদ্দৌলার উত্তরাধিকারী। নওয়াব ছিলো একজন উচ্চ মনোবল ও সাংগঠনিক প্রতিভাসম্পন্ন শাসক। কিন্তু এরপরও সেখানে বেকারত্ব ও অস্থিরতা প্রভাব বিস্তার করেছিলো।
লখনৌ পৌঁছে যাওয়ার পর উনার সাত জন বন্ধু সবাই বিভিন্ন কাজে ছড়িয়ে পড়লেন। শুধুমাত্র সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ব্যতিত। কারণ উনি লখনৌ এসেছেন শুনে সেখানকার একজন আমীর উনাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তার বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সেই আমীর হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরিবারকে অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। সুবহানাল্লাহ! সেই আমির প্রতিদিন উনার জন্য খাবার পাঠাতেন। কিন্তু হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই অধিকাংশ খাবারই উনার অন্যান্য বন্ধুদেরকে দিয়ে দিতেন।
এভাবে চারমাস কেটে যাওয়ার পর হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারকে যাওয়ার জন্য উনার বন্ধুদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। তবে পরবর্তীতে উনার বন্ধুরা না গেলেও উনি একাই দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। অত্যন্ত কঠিন এক ছফর শেষে তিনি দিল্লীতে এসে উপস্থিত হন এবং হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারকে উপস্থিত হন। সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে বাল্যকাল থেকেই হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের রূহানী সম্পর্ক মুবারক ছিলো। সুবহানাল্লাহ! তাই উনাকে দেখামাত্রই হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন এবং উনার সাথে মুসাফাহা করলেন। এরপর উনাকে হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত ভাই হযরত শাহ আব্দুর কাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে অবস্থান মুবারক করানোর ব্যবস্থা করা হলো। তিনি কিছুকাল সেখানেই অবস্থান মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত শাহ আব্দুল কাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ছোহবত মুবারকে থেকে তিনি এরূপ আধ্মাত্মিক উন্নতি লাভ করেন যা বড় বড় ইমাম-মাশায়েখ উনাদের অত্যন্ত কঠিন রিয়াজত মাশাক্কাত করে হাছিল হয়। সুবহানাল্লাহ! তবে তিনি তো নসবগতভাবেই সর্বোচ্চ মাকামে অধিষ্ঠিত। কারণ তিনিতো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই সম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত শাহ আব্দুল কাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারকে বেশ কিছুদিন অবস্থান মুবারকের পর হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে খিলাফত মুবারক পেলেন এবং এরপর তিনি আপন জন্মভূমি রায়বেরেলীতে ফিরে এলেন। দুই বছর রায়বেরেলীতে অবস্থান মুবারকের পর তিনি সম্মানিত শাদী মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ!
হিজরী ১২২৬ সনে তিনি দ্বিতীয়বার দিল্লী ছফরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। দিল্লীতে পৌঁছে কয়েকদিন অবস্থানের পর হযরত শাহ আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরামর্শক্রমে নওয়াব আমীর খান (যিনি রাজপুতানা এবং মালব প্রদেশে সৈন্যবাহিনী পরিচালনায় ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্যাপৃত ছিলেন) উনার সৈন্যদলে যোগদান করেন। যুদ্ধ-বিগ্রহের বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ, অর্জিত অভিজ্ঞতাকে উদ্দেশ্য ও অর্থপূর্ণ চেষ্টা পূরণে নিয়োগ এবং অগ্রসরমান ইংরেজ বেনিয়াদের মোকাবিলার পথে কাজে লাগাবার জন্য তিনি উনার ছোহবতে থাকেন। নওয়াব আমীর খান রোহিলাখন্ডের একজন শক্তিশালী আফগান বংশোদ্ভূত আমীর ছিলেন। তিনি উনার চারপার্শ্বে দৃঢ়চেতা, অভিযান উন্মুখ এবং বিশ্বস্ত সাথীদের উল্লেখযোগ্য একটি সংখ্যার সমাবেশ ঘটাতে পেরেছিলেন এবং এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছে ছিলেন যে, বিভিন্ন দেশীয় শাসকরাও উনার সাহায্য ও সমর্থনের মুখাপেক্ষী হতে হতো। ইংরেজরাও উনাকে সমীহ করে চলতো। (অসমাপ্ত)
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইহুদীবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ততা (বিস্তারিত)
০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (২)
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যুগে যুগে পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালনের ইতিহাস (১)
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নেপোলিয়নের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ এবং ১২ই শরীফ পালন নিয়ে ঐতিহাসিক তথ্য
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার ইতিহাসের স্বর্ণপাতায় মহাপবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক একটি ঘটনা
১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (৪)
২৯ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (৩)
২৮ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমন ও মুসলিম শাসনের ইতিহাস (২)
২৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলাদেশে দ্বীন ইসলাম উনার আগমনের ইতিহাস (১)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৩৮)
২৪ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ উনার বরকতময় ইতিহাস
২১ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)