ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চিকিৎসক স্বরূপ (৩)
, ০২রা শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৫ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ প্রসঙ্গে ‘কিতাবু কালয়ুবী’তে বর্ণনা করা হয়, একদা একদল ইহুদী পাদ্রী তারা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলো- “হে আমীরুল মু’মিনীন! আমাদের কতিপয় সুওয়াল রয়েছে। আপনি যদি সেগুলোর জাওয়াব দিতে পারেন, তাহলে আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবো। অন্যথায় আমরা ধরে নিবো আপনারা বাতিল। আমাদের প্রশ্ন হলো, ঘোড়া, উট, গরু, গাধা, বকরী, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, সিংহ, ঈগল, কাক, চিল, কবুতর, ব্যাঙ, হুদহুদ পাখি, তিতির পাখি, ঘুঘু পাখি, কুমবুরাহ বা ভরত পাখি, চড়–ই পাখি, বুুলবুলি পাখি, মোরগ, মুরগি প্রভৃতি প্রাণী ও পাখি তারা তাদের ডাকে কি বলে? অর্থাৎ তাদের ডাকের অর্থ কি?”
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ঘোড়া তার হ্রেষা ধ্বনিতে বলে- “আয় আল্লাহ পাক! মুসলিম উম্মাহকে সম্মানিত করুন এবং কাফিরদেরকে লাঞ্ছিত করুন।”
উট বলে, “পরকালীন পাথেয় না থাকা সত্ত্বেও যে আমলের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় থাকে, তার জন্য আশ্চর্য।”
গরু বলে, “হে গাফিল ব্যক্তি! মৃত্যু তোমার জন্য অবধারিত। তাই তুমি আমলে মশগুল হও। হে গাফিল ব্যক্তি! তুমি অতি অল্প সময়ের জন্য দুনিয়াতে আগমনকারী। হে গাফিল ব্যক্তি! যা তুমি পরকালের জন্য প্রেরণ করেছ, সেটাই কেবল তোমার জন্য রয়ে যাবে। অতি শীঘ্রই তুমি তোমার আমলের বদলা লাভ করবে।”
গাধা বলে, আয় আল্লাহ পাক! সুদ প্রদানকারী এবং সুদের মাধ্যমে উপার্জনকারীর উপর লা’নত বর্ষণ করুন।”
বকরী বলে, “হে মৃত্যু! কে তোমাকে বেদনাদায়ক করলো। কে তোমাকে পরিতৃপ্ত করলো। কে তোমাকে কর্তিত করলো। হে বনী আদম! কে তোমাকে গাফিল বানালো।”
কুকুর বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আমি রহমত হতে মাহরুম। তাই যে আমার উপর রহম করে আপনিও তার উপর রহম করুন।”
শিয়াল বলে, “হে রিযিকের বণ্টনকারী! আমার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা আমার জন্য যথেষ্ট করুন।”
বিড়াল তার ডাকে পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার দশখানা আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে।
সিংহ বলে, “আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আপনার নাফরমানী করে, আমাকে তার উপর কর্তৃত্ব দিন।”
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
ঈগল বলে, “যত দিন ইচ্ছা বেঁচে থাকো কিন্তু একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। যা ইচ্ছা সঞ্চয় করো কিন্তু একদিন তরক করতে হবে। যাকে ইচ্ছা মুহব্বত করো কিন্তু একদিন পৃথক হতে হবে।”
কাক বলে, “হে উম্মত! নিয়ামত সরে যাওয়াকে ভয় করো। গযব নাযিল হওয়াকে ভয় করো।”
কবুতর বলে, “যে ব্যক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করেছে, তার সাথে সদাচরণ করো। যে ব্যক্তি তোমার উপর যুলুম করেছে, তাকে ক্ষমা করো। যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে, তাকে তুমি দান করো। যে তোমার সাথে পর্দা করেছে, তার সাথে কথা বলো। তাহলে জান্নাত হবে তোমার আবাসস্থল।”
ব্যাঙ বলে, “সুবহানাল্লাহ! সমুদ্রের তলদেশে, পাহাড়ের চূড়ায় এবং গর্তে অবস্থানকারী সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার তাসবীহ মুবারক পাঠ করে। জিব্বা ও জবানওয়ালা সকলেই মুবারক তাসবীহতে মশগুল রয়েছে।”
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদীদের প্রশ্নের জবাবে আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
হুদহুদ পাখি বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আমি নিজের নফসের উপর যুলুম করেছি। আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। আপনি ব্যতীত গুনাহ ক্ষমা করার কেহ নেই।”
তিতির পাখি বলে, “রহমান মহান আল্লাহ পাক আরশে আ’যীমে ইসতাওয়া হয়েছেন। সমস্ত কিছু উনার রবুবিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। সর্ব বিষয়ে তিনি অবগত।”
ঘুঘু পাখি বলে, “মৃত্যু নিকটবর্তী। প্রত্যাশা অপূরণীয়। আমলের প্রতিদান গ্রহণ অত্যাবশকীয়।”
কুমবুরাহ বা ভরত পাখি বলে, “আয় আল্লাহ পাক! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীগণের প্রতি লা’নত বর্ষণ করুন।”
চড়ই পাখি বলে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত। হে বিপদ ও বালা মুছিবত দূরকারী! যে ব্যক্তি আপনার হক্ব আদায় করে না, আমাকে তার শস্য ক্ষেতে আধিপত্য দান করুন।
বুলবুলি পাখি বলে, “দুনিয়াবী নিয়ামত যখন আমার জন্য যথেষ্ট হয়, তখন আমি শুকরিয়া আদায় করি।”
মোরগ বলে, “মহিমাময় পূত-পবিত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রব। হে গাফিল সম্প্রদায়। মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করো।”
মুরগি বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আপনি হক্ব। আপনার ওয়াদা মুবারকও হক্ব।”
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
আগুন বলে “আয় আল্লাহ পাক! আমি জাহান্নামের আগুন হতে পানাহ চাই।”
বাতাস বলে, “আমি আদিষ্টিত। আয় আল্লাহ পাক! যে আমাকে দোষারোপ করে আপনি তার উপর লা’নত বর্ষন করুন।”
পানি বলে, “সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক পবিত্রতা সম্পর্কে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ অবগত নন।”
প্রতিদিন যমীন বলে, “হে আদম সন্তান! তুমি আমার পিঠের উপর নাফরমানী করছো। আমার পেটের ভিতর (কবরে) তোমাকে বিষাক্ত পোকা ভক্ষণ করবে।”
প্রতিদিন আসমান বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আমার নিচে অবস্থানকারী সকলের ব্যাপারে আমি সাক্ষী।”
সমুদ্র বলে, “আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আপনার নাফরমানী করে, তাকে ডুবিয়ে মারতে আমাকে মুবারক অনুমতি প্রদান করুন।”
প্রতিদিন অস্ত যাওয়ার সময় সূর্য বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আমার আলো যাদের উপর পতিত হয়েছে, আমি তাদের সকলের আমলের সাক্ষীস্বরূপ।”
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সমস্ত পশু-পাখি, কীট পতঙ্গসহ পুরো কায়িনাতবাসীর ভাষা সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন এবং সেই ইলম মুবারক তিনি প্রকাশও করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
-মুহম্মদ ইমামুদ্দীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












