ইসলামী বিশ্বকোষের আলোকে বালাকোট শহরের স্থাপত্য ও বালাকোট যুদ্ধের ইতিহাস (১)
, ১০ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ০৯ মে, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস

বালাকোট- (با لاكور), পাকিস্তানের অন্তর্গত হাযারা জেলার একটি ক্ষুদ্র শহরের নাম। স্থানটি পূর্ব হতেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ছিলো। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ও শিখদের মধ্যে সংঘটিত একটি যুদ্ধের কারণে বালাকোট ঐতিহাসিক গুরুত্ব লাভ করে।
বালাকোটের উত্তরাঞ্চলের পার্বত্য এলাকাসমূহে ফল-ফসলাদি উৎপন্নের বিপুল অংশ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে এখনও বালাকোটেই এসে থাকে এবং এই অঞ্চলের অধিবাসীরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রী এখান থেকেই খরিদ করে নিয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী পবর্তসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে বালাকোটকে বাহ্যত কাগান উপত্যকার একটি অংশ বলে মনে হতে পারে; কিন্তু এর উত্তর ও পূর্বদিকে অবস্থিত পর্বতমালা পরস্পরের সাথে এরূপ ঘনিষ্ঠভাবে মিলে গেছে যে, এদের মধ্যে কুনহার নদীর (কাগান উপত্যকা অঞ্চলে যা কাগান নদী নামে পরিচিত। ) প্রবাহপথ ছাড়া অন্য কোনও ফাঁক বা ছেদ নাই। এর ফলে বালাকোট কাগান উপত্যকা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
বালাকোটের পর্বতবেষ্টনী:
বালাকোটের নিকটে পৌঁছে পশ্চিম, উত্তর ও পূর্বদিকের পর্বত প্রাচীরসমূহ বেশ পশ্চাতে সরে গিয়েছে এবং এর ফলে সেই স্থানে একটি অপরিকল্পিত চক্র বা বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে। চক্রের অন্তর্গত ভূমি পর্বতসমূহের পাদদেশ হতে ক্রমে ঢালু হয়ে গিয়েছে। উক্ত চক্রের অভ্যন্তরে অধিকতর দীর্ঘ ও অল্পতর প্রশস্ত একটিপ টিলা রয়েছে। উক্ত টিলার উপরই বালাকোট জনপদ আবাদ রয়েছে।
বর্তমান সড়কের পরিচিতি:
বর্তমানে যেই সড়ক দিয়ে লোকজন বালাকোটে যাতায়াত করে, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যুগে এর অস্তিত্ব ছিলো না। সেই যুগে যানবাহনে করে বালাকোট যাওয়ার কোন রাস্তা ছিলো না।
মূল বালাকোট জনপদ:
বালাকোট জনপদটি ইতিপূর্বে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে একটি টিলার উপর অবস্থিত। উক্ত টিলার উচ্চতা হবে দক্ষিণ দিকে আনুমানিক ছয়/সাত ফুট। পূর্বাংশের উচ্চতা এর চেয়ে অধিকতর হবে। উত্তর ও পশ্চিম দিকে উহা ঢালু হয়ে কৃষিজমির সাথে মিলিত হয়ে গিয়েছে। সুতরাং উক্ত দুই দিকে অবস্থিত ঘরবাড়ি নিম্নভূমি পর্যন্ত চলে আসছে।
প্রথম দিকে বালাকোটে তিনটি মসজিদ ছিলো। একটি মসজিদ-ই বালা বা মসজিদ-ই কেলাঁ। (উচ্চ ভূমির মসজিদ বা বড় মসজিদ) উক্ত মসজিদ বালাকোট জনপদের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। আরেকটি মসজিদ-ই মুতাওয়াসসিত’। (মধ্যম উচ্চ ভূমির মসজিদ) উক্ত মসজিদ বালাকোটের উত্তরাংশে অবস্থিত।
আর আরেকটি মসজিদ-ই যেরীন (নিম্নভূমির মসজিদ)। বালাকোট টিলা পশ্চিম দিকে যেখানে নিম্নভূমির সাথে মিলিত হয়েছে, উক্ত মসজিদ সেখানে অবস্থিত। এর সীমানা হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যুগে যেরূপ ছিলো, অধিকাংশ বর্ণনা অনুসারে উহা মোটামুটি সেরূপ অপরিবর্তিত রয়েছে। মসজিদ বালা বা মসজিদ-ই কেলাঁ যতটুকু প্রশস্ত ছিলো, তাতে ৫০/৬০ জন লোক নামায আদায় করতে পারেন।
নতুন বসতিসমূহ:
লুটেরা ব্রিটিশ বেনিয়া শাসনামলে বালাকোটের আশেপাশে নতুন নতুন বসতি যেমন- টিলার নীচে সড়ক সংলগ্ন স্থানে ঢাকবাংলো, থানা, চিকিৎসাকেন্দ্র ও বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দাফনের স্থানে অমসৃণ ও এবড়োথেবড়ো পাথর দ্বারা একটি কবর নির্মাণ করা হয়েছিলো। কবরের চতুষ্পার্শ্বে একটি বেষ্টনীও গেঁথে দেওয়া হয়েছিলো। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উক্ত কবর অতি শোচনীয় অবস্থায় ছিলো। বেষ্টনীর মধ্যে শুধু কয়েকটি কবর ছিলো। এর আশেপাশে কয়েকটি সাধারণ বাড়ি ছিলো। সেতুর অপর পাড়ে বালাকোট জনপদের উত্তর-পূর্ব দিকে কাগান গিরিপথের প্রবেশ পথের ডান দিকে একটি বাজার স্থাপিত হয়েছিলো।
নদীর অপর পারে বাজারের কাছে বালা পীরের মাজার অবস্থিত। মাজারের কাছে একটি কুষ্ঠ চিকিৎসালয় স্থাপিত হয়েছে। সম্ভবত বালা পীরেরই নামানুসারে বালাকোটের নামকরণ করা হইয়াছে। যাই হোক, বালাকোট জনপদটি একটি বালা (ফারসী بلا = উচ্চ; উচ্চভূমি) বা টিলায় অবস্থিত হওয়ায় বালাকোটের এই নামকরণ।
অসাধারণ পরিবর্তনসমূহ:
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর বালাকোটের নিম্নাংশে অসাধারণ পরিবর্তন হয়েছে এবং এর ফলে বর্তমানে এর পূর্বরূপ ও আকৃতির কথা কল্পনা করাও কঠিন। একটি ডাকবাংলোর স্থলে বর্তমানে বালাকোটে দুইটি অত্যন্ত মনোরম বাংলো নির্মিত হয়েছে। থানা ভবন ও কোনও কোনও সরকারী ভবনও পুননির্মিত হইয়াছে। হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ ও এর বেষ্টনী প্রাচীরে বালি-কাজ করা হয়েছে। মাজার শরীফের শিয়রে মর্মর পাথরের ফলক স্থাপিত হয়েছে। বেষ্টনীর মধ্যে অনেকগুলি কবরও রয়েছে। এই সকল কবরের মধ্যে মাওলাবী ফাদলুল্লাহী ওয়াযীরাবাদী রহমতুল্লাহ আলাইহি উনার কবরও রয়েছে।
বালাকোটের চতুষ্পার্শ্বস্থ স্থানসমূহ:
বালাকোটের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব দিকে কৃষিজমি রয়েছে। পশ্চিম দিকে অবস্থিত কৃষিজমি সাধারণ পাহাড়ী কৃষিজমির ন্যায় সিড়ির আকৃতির। এই স্থানেই ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে এক গোষ্ঠীর সাথে অন্য আরেক গোষ্ঠীর তুমুল যুদ্ধ হয়েছিলো। উত্তর দিকে কতগুলি পানিচক্র ছিলো। পানিচক্রকে স্থানীয় ভাষায় জানদার বলা হয়।
এই সকল পানিচক্র এখনও অস্তিত্বশীল রয়েছে। সম্মুখে পর্বতের পাদদেশ পর্যন্ত কৃষিজমি রয়েছে। উত্তর ও পূর্ব দিকের অংশের অবস্থাও পশ্চিম দিকের অবস্থার অনুরুপ বটে। উক্ত অংশদ্বয় বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই অংশদ্বয়ের জমিকে অধিকতর উর্বর মনে করা হয়। উক্ত উর্বর ভূমি স্থানীয় ভাষায় ‘হোতার’ নামে পরিচিত। (অসমাপ্ত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ভারতের হায়দরাবাদ দখল করে রাখার চাপা ইতিহাস
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১১)
১৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১০)
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৯)
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে মুসলমানদের অবদান
০৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৯)
০৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৮)
০৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৮)
০৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
চলুন জানি: বিখ্যাত মুসলমান যুদ্ধাস্ত্র বিজ্ঞানী নাজমুদ্দিন হাসান আর রাম্মাহ’র কথা
০১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৭)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (১)
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৬)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)