ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘পহেলা এপ্রিল’ বা ‘এপ্রিল ফুল’ হারাম। ‘এপ্রিল ফুল’ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১)
, ২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মুসলমানরা আজ ইলিম চর্চা হতে অনেক দূরে। মুসলমানরা নিজেদের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বড়ই বেখবর। আজ মুসলমানরা নিজেদের স্বর্ণযুগ, সারা বিশ্বব্যাপী তাদের বিস্তীর্ণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতি ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুই জানে না। আবার অপরদিকে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কাফির-বিধর্মীরা যে মুসলমানদের উপর কত মর্মান্তিক যুলুম করেছে, নির্মমভাবে শহীদ করেছে সে খবরও মুসলমানরা জানে না। পহেলা এপ্রিলে এমনি ধরনের এক নির্মম বাস্তবতা রয়েছে। যাতে লক্ষ-লক্ষ মুসলমানের নির্মমভাবে শাহাদাতের ঘটনা ঘটেছে।
এর ইতিহাস হলো-
খলীফা ওয়ালিদ তৎকালীন সেনাপতিকে ৭১১ খ্রিস্টাব্দ সনে স্পেন অভিযানের নির্দেশ দেন। স্পেনে চলছিলো তখন চরম অত্যাচারী শাসক রডারিকের নির্যাতন, সামাজিক বৈষম্য ও ধর্মের নামে অনাচার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই মুসলমান হয়েছিলেন। আবার অনেকে শাসকের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবার জন্য মুসলমানদেরকে আগমনের আহবানও জানিয়েছিলো।
বর্ণিত আছে যে, অত্যাচারী শাসক রডারিক সিউটা দ্বীপের শাসক ফার্ডিনান্ড জুলিয়ানের দুহিতা ‘ফ্লোরিডার’ শ্লীলতাহানি করায় ক্ষুব্ধ হয়ে জুলিয়ান মুসলিম সেনাপতিকে স্পেন বিজয়ের অনুরোধ জানায়।
খলীফা ওয়ালিদের সেনাপতি স্পেন বিজয়ের জন্য হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিযুক্ত করেন এবং মাত্র সাত হাজার সৈন্য দেন। এতো অল্প সৈন্য নিয়ে এতো বিরাট কাজ সম্পাদন কঠিন কল্পনা করে হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে কান্নাকাটি এবং দোয়া-মুনাজাত করতে থাকেন।
একদিন গভীর রাতে স্বপ্নে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিয়ারত মুবারক লাভ করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “হে জিয়াদ! তুমি অগ্রসর হও। চিন্তিত হবে না, তুমিই কামিয়াবী হাছিল করবে। ”
এই মুবারক স্বপ্ন দেখে হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অগ্রসর হন। স্পেন পৌঁছা মাত্র তিনি আদেশ দেন তার সব নৌ-জাহাজ পুড়িয়ে ফেলতে। অতঃপর তিনি সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে এক বিশেষ ঈমানদীপ্ত উদ্দীপনাপূর্ণ ও জ্বালাময়ী ভাষণ দেন।
ভাষণে তিনি বলেন, “হে মুসলমানগণ! তোমাদের এখন যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। কারণ সব জাহাজ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করে অবশ্যই তোমাদের বিজয় লাভ করতেই হবে ইনশাআল্লাহ। ” মুসলমান সৈন্যরা উনার এ ঈমানদীপ্ত জজবাপূর্ণ ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন এবং বিজয় লাভ করেন। যালিম শাসক রডারিক শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে নদীগর্ভে নিমজ্জিত হয়। বিজয়দীপ্ত হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কারমোনার সিডোনিয়া, ইজিসা বিজয় করেন। মুসলিম সৈন্যবাহিনীকে চারভাগে ভাগ করে মালাগা, গ্রানাডা এবং টলেডোর দিকে প্রেরণ করা হয় এবং গথিক রাজ্যের বহু অঞ্চলে মুসলিম সুশাসন কায়িম হয়। এরপর ৭১২ খ্রিস্টাব্দ সনে একটি বিশাল মুসলিম বাহিনী স্পেনে আগমন করেন এবং সিডোনিয়া, সেভিল, মেরিডা, তালাভেরা অধিকার করেন।
হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মিলিত বাহিনীসহ পর্যায়ক্রমে গ্যালিসিয়া, লিওন, অ্যাস্টুরিয়াস, সারাগোসা, আরাগান, ফ্যাঁলোনিয়া, বার্সিলোনা জয় করে উত্তরে পিরেনীজ পবর্তমালা পর্যন্ত অগ্রসর হন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দ সন হতে ৭১৪ খ্রিস্টাব্দ সনের মধ্যে যালিম খ্রিস্টান শাসকের শোষিত স্পেনের প্রায় সমগ্র অঞ্চল শান্তির দ্বীন ইসলামের সুশীতল পতাকা তলে আসে।
এরপর কয়েক শতাব্দী স্পেনে মুসলিম শাসন চললেও একদিকে শাসকরা অনৈসলামিক অর্থাৎ শরীয়তবিরোধী আমল-আখলাকে মত্ত হয়ে উঠে। অপরদিকে মুনাফিক ও ধর্মব্যবসায়ীরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ১৪৭০ খ্রিস্টাব্দ সনের দিকে এ সুযোগকে চরমভাবে গ্রহণ করে মহাযালিম খ্রিস্টান শাসক ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা দম্পতি। তারা বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় তাদের খ্রিস্টান গুপ্তচর ব্যক্তিকে ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদরাসার উস্তাদ পদেও ঢুকাতে সক্ষম হয়। সেই সাথে তারা উলামায়ে ‘ছূ’দেরকেও হাত করতে সমর্থ হয়। তারা সবাই ইসলামী আদর্শের উপর অটলতা ছেড়ে ঢিলেঢালা চলার পক্ষে জনমত তৈরি করে।
শরাব খাওয়া, গান-বাজনা করা ও শুনা, বেপর্দা হওয়া এবং অবৈধ নারী সম্পর্ককে দোষের নয় বলে প্রচার করে। ফলত, মুসলমানরা তাদের ঈমানী বল হারিয়ে ফেলে। উলামায়ে ‘ছূ’রা আরো প্রচার করে যে, খ্রিস্টানরা মুসলমানদের শত্রু নয়। এরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ধুরন্ধর, যালিম ও শঠ ফার্ডিনান্ড দম্পতি অবশেষে মুসলমানদের থেকে পর্যায়ক্রমে স্পেন ছিনিয়ে নেয়। তারা প্রথমে আল হামরা দুর্গের পতন ঘটায়। এরপর গ্রানাডা তুলে দিতে বলে। কিন্তু দিশেহারা, ঈমানহারা, বিভ্রান্ত মুসলমান মুনাফিক ও উলামায়ে ছূ’দের প্রতারণার কারণে তখন খুব সহজেই তাদের কাছে দেশটা সোপর্দ করে দেয়। (অসমাপ্ত)
-মুহম্মদ হুমায়ুন কবির।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












