উম্মু আবীহা, খাইরু ওয়া আফদ্বালু বানাতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি
, ২৩শে জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৯ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

ব্যবসা-বাণিজ্যের অভিজ্ঞতা এবং আমানতদারীর জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি বিখ্যাত ছিলেন।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “অর্থ-বিত্ত, আমানতদারী ও ব্যবসায়ী হিসেবে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র মক্কা শরীফ উনার গণ্যমান্য মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবর্গ উনাদের অন্যতম ছিলেন। ” সুবহানাল্লাহ!
৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার সম্মানিত জুমাদাল ঊলা শরীফ মাসে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশদের ১৭০ উটের একটি বাণিজ্য কাফিলা নিয়ে সিরিয়া যান। বাণিজ্য শেষে পবিত্র মক্কা শরীফ প্রত্যাবর্তনকালে পথে কাফিলাটি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছে, তখন এই সংবাদ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে পেশ করা হয়। তিনি ১৭০ জন সদস্যের একটি বাহিনীসহ হযরত যায়িদ ইবনে হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে তাদের পশ্চাদগমনের জন্য প্রেরণ করেন। ঈশ নামক স্থানে উভয় কাফিলা মুখোমুখি হন। মুসলিম বাহিনী কুরাইশ কাফিলার বাণিজ্য সম্ভারসহ সকল লোককে বন্দি করেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার কোনো ক্ষতি করা হয়নি।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম তিনি কাফিলার এই পরিণতি দেখে পবিত্র মদীনা শরীফ চলে যান এবং সেখানে পৌঁছে উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনার নিকট নিরাপত্তা ত্বলব করেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে নিরাপত্তা মুবারক দিলেন। অন্য কেউ কিছু জানলেন না।
ভোরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত মসজিদে নববী শরীফে ফজর নামাযে দাঁড়ালেন। তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি বুলন্দ আওয়াজ মুবারকে ইরশাদ মুবারক করলেন- “হে লোক সকল! আমি হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনাকে নিরাপত্তা দিয়েছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন ছলাত আদায় শেষ করলেন, তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আমি যা শুনেছি, আপনারাও কি তা শুনেছেন? উনারা সমস্বরে বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তা শুনেছি।
তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, নিশ্চয়ই একজন সাধারণ মুসলমানেরও অধিকার রয়েছে এরূপ নিরাপত্তা প্রদান করার। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক রেখে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, হে আমার সম্মানিতা বানাত আলাইহাস সালাম! আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্মানজনক ব্যবহার করুন। ” (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/৪৫, আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৯/৯৫, মু’জামুল কাবীর ১৬/২৮২, সিরাতুল হালবীয়া ৩/১৭৬, ইবনে হিশাম ৩/২০৯, যখায়েরুল উক্ববাহ ১/১৫৯ ইত্যাদি)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল ঊলা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজি পেশ করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার আটককৃত বাণিজ্য পণ্য, মাল-সম্পদ ফেরত দেয়ার জন্য।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিতে পারতেন এবং কেউ তা অস্বীকার করতেন না। কিন্তু তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে বললেন-
اِنَّ هٰذَا الرَّجُلَ مِنَّا حَيْثُ قَدْ عَلِمْتُمْ وَقَدْ اَصَبْتُمْ لَهٗ مَالًا فَاِنْ تُـحْسِنُوْا وَتَرُدُّوْا عَلَيْهِ الَّذِىْ لَهٗ فَاِنَّا نُـحِبُّ ذٰلِكَ وَاِنْ اَبَيْتُمْ فَهُوَ فَـىْءُ اللهِ الَّذِىْ اَفَاءَ عَلَيْكُمْ فَأَنْتُمْ اَحَقُّ بِهٖ
অর্থ: “আমার মধ্যে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে যে সম্পর্ক মুবারক সেটা আপনাদের জানা রয়েছে। আপনারা উনার বাণিজ্য সম্ভার, মাল-সম্পদ আটক করেছেন। আপনারা যদি ভালো মনে করেন, তাহলে উনার যা আটক করেছেন, তা উনাকে ফেরত দিন। এটা আমাদের নিকট খুবই পছন্দনীয় হবে এবং এতে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হবো। সুবহানাল্লাহ! আর আপনারা রাজি না হলে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ হিসেবে সেটা আপনারা গ্রহণ করতে পারেন। আপনারাই সেই মালের অধিক হক্বদার। ” তখন উনারা সমস্বরে বললেন-
يَا رَسُوْلَ اللهِ بَلْ نَرُدُّهٗ عَلَيْهِ.
“ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বরং অবশ্যই আমরা উনার সমস্ত মাল-সম্পদ ফেরত দিবো। ” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম ৩/২৬২, আল মু’জামুল কাবীর ১৬/২৮৮, সীরতে হালবীয়া ৩/১৭৬, ইবনে হিশাম ৩/২০৯, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৬/৮৩ ইত্যাদি)
অতঃপর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূর আলাইহিস সালাম উনার সমস্ত মাল-সম্পদ ফেরত দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খালি চোখে চাঁদ দেখে মাস শুরু করা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেশ মুবারক
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পূর্ব গণনাকৃত বর্ষপঞ্জী দিয়ে মাস শুরু করা শরীয়তসম্মত নয়
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গরুর গোস্ত শি‘আরুল ইসলাম (৬)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশি বেশি মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশি বেশি পূঁজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছহিবে নিসাব প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পবিত্র কুরবানী দেয়া ওয়াজিব (১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (২)
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মীলাদ শরীফ বিষয়ে প্রথম দিকে যারা কিতাব রচনা করেছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাফিয হযরত আবুল খত্ত্বাব ইবনে দাহিয়্যাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি। যিনি ছিলেন পবিত্র হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব
২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)