ইতিহাসে ইহুদী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র:
উসমানীয় সুলতানের কাছে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব!
, ০১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১০, মে, ২০২৪ খ্রি:, ৩১ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস

খোদায়ী আযাব-গযবের কারণে ইহুদীরা কখনই কোনো ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেনি। যার কারণে এরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ইহুদীরা স্থানীয় ভাষায় কথা বলা ও স্থানীয় রীতিনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তবে যে দেশেই বা ভূখন্ডে এরা বসবাস করতো সেই ভূখন্ডের মানুষদের প্রতি এদের কোনো আন্তরিকতা ছিলো না। এদের মূল লক্ষ্যই ছিলো কিভাবে অধিক সম্পদ উপার্জন করা যায়। তাই বিভিন্ন দেশের বিপদের সময় এরা কখনোই সেই দেশের পক্ষে হয়ে কাজ করতো না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই দেশের বিপক্ষে অবস্থান নিতো। তাই বিভিন্ন দেশ থেকে বারবার এদের বিতাড়িত করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর বিপুল পরিমাণ ইহুদীই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আলোয় আলোকিত হয়ে মুসলমান হয়ে যায়। গোড়া ইহুদী সম্প্রদায় তারা দেখলো যে, এভাবে যদি ইহুদীরা মুসলমান হয়ে যায় তাহলে তাদের জন্য বিপদের কারণ। এজন্য এরা নিজেদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয় এবং নানাবিধ বিধিনিষেধ গন্ডী খাড়া করে। এ কারণেও তারা মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। তাই খৃষ্টান দেশগুলোতে এরা কখনোই নাগরিকের মর্যাদা পায়নি।
ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লব ইহুদীদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান তৈরী করেছিলো। ইহুদীদের রচিত বিশ্বব্যাপী চক্রান্তের পরিকল্পনা পুস্তাব প্রটোকল থেকে জানা যায় যে, ফরাসী রাষ্ট্রবিপ্লবের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ইহুদী ষড়যন্ত্রকারীদেরই হাত ছিলো। এ বিপ্লবের ফলে উনিশ শতকের শেষাংশে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানী, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নরওয়ে, অষ্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ড ইহুদীদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপে ইহুদীদের তখনও ঘৃণার চোখে দেখা হতো। তাই ইহুদীরা স্বাধীনভাবে বসবাসের জন্য আন্দোলন শুরু করে। অষ্ট্রিয়ার সাংবাদিক কুখ্যাত থিউডর হার্জেল সর্বপ্রথম ইহুদীদের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু করে। এজন্য এই কুখ্যাত ষড়যন্ত্রকারীকে ইহুদীবাদের জনক বলা হয়।
থিউডর হার্জেল সবসময় ইহুদীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র কায়েম করতে চাইতো। প্রারম্ভে থিউডর হার্জেল ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র কায়েম করার কোনো পরিকল্পনা করেনি। সে বরং কূটকৌশলী ইংরেজদের পরামর্শে পূর্ব আফ্রিকায় একটি ইহুদী রাষ্ট্র স্থান করতে আগ্রহী ছিলো। কিন্তু অন্যান্য ইহুদীদের সঙ্গে আলোচনা করার পর তার মনোভাব পরিবর্তিত হয় এবং তার লোলুপ দৃষ্টি গিয়ে পড়ে ফিলিস্তিনের উপর।
থিউডর হার্জেল তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের শাসকদের সাথে যোগাযোগ শুরু করে এবং এর পাশাপাশি তৎকালীন তুর্কি বাদশাহ সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে দেখা করে এবং ফিলিস্তিনে ইহুদীদের বসবাসের অনুমতি চায়। একই সাথে সে সুলতানকে ৫ কোটি পাউন্ড অর্থ প্রদান করে তৎকালীন উসমানীয় সালতানাতের অর্থনৈতিক সঙ্কট দূরীকরণের ইচ্ছা প্রকাশ করে। সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই ইহুদীদের ভয়ঙ্কর কূটচাল বুঝতে পেলে তৎক্ষনাৎ তা নাকচ করে দেন এবং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, তিনি জীবিত থাকতে কখনোই ফিলিস্তিনের বুকে ইহুদীদের বসবাস করতে দেবেন না। যদি ইহুদীরা জোর করে সেখানে থাকতে চায় তাহলে রক্তের যুগ ফিরে আসবে। আমি বেঁচে থাকতে উম্মাহর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়ন হতে দেবো না। আমার প্রাণ গেলেও আমি পিছপা হবো না’। সুলতান আব্দুল হামিদ ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহির এই বক্তব্য শুনে থিউডর হার্জেল প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় এবং দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
(আরব-তুর্কি সম্পর্কে ঘুন ধরানো)
সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহির কাছে ইহুদী রাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর থিউডর হার্জেল পুনরায় ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং ১৮৯৭ সালের ২৯শে আগষ্ট সুইজারল্যান্ডে ইহুদী কংগ্রেসের বৈঠক আহ্বান করে। উক্ত বৈঠকে নিম্নরূপ ফায়সালা গৃহীত হয়।
(১) ফিলিস্তিনকে ইহুদী রাজ্যে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ইহুদীদের সুপরিকল্পিত উপায়ে কৃষি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে অগ্রসর করানো।
(২) সমগ্র দুনিয়ার ইহুদীদের সংঘবদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠন কায়িম করণ।
(৩) ইহুদীদের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও অনুভূতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ।
(৪) আর উপরের তিন দফা কর্মসূচীর সঙ্গে সঙ্গে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা-তদবীর জারী রাখা।
সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ইহুদীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্তের জাল বিস্তার করে। একদিকে আরব ও অনারবদের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির মাধ্যমে তৎকালীন তুরস্কের মুসলিম সালতানাতের অধীনে যেসব আরব অফিসার ও সৈন্য নিয়োজিত ছিল তাদের মনে তুর্কি সুলতান আব্দুল হামিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করার কাজ ইংরেজ ও ইহুদীরা যুক্তভাবে শুরু করে। আঞ্চলিকতাবাদ ও ভাষাগত জাতীয়তার সস্তা ও মুখরোচক শ্লোগানে মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে তাদের দুর্বল করার এ হীন প্রচেষ্টা নব্য সমাজকে সহজে আকৃষ্ট করে এবং এর ফলে আরব-তুর্কি সম্পর্ক বিনষ্ট হয়।
অপরদিকে ফ্রি ম্যাশন আন্দোলন তুরস্কের অভ্যন্তরে যুবক শ্রেণীকে মুসলিম শাসন ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার কাজে লিপ্ত হয়। তুর্কির বিপ্লব প্রধানত ইহুদীদের পরিকল্পনা মুতাবিক সংগঠিত হয়েছিল। কুখ্যাত মুসলিমবিদ্বেষী ও জাতিগত ইহুদী কামাল পাশা ইহুদীদেরই ক্রীড়নক হিসেবে ময়দানে কাজ করেছে মাত্র।
নিম্নলিখিত বইগুলোতে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রমাণ মজুদ রয়েছে-
1. Revolution and Military Rule in the Middle East.
2. Rise of Nationality in the Balkans.
3. The Emergence Of Modern Turï
4. Ataturk-the returnth of a nation.
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রাচীন বাংলার মুসলমান মুদ্রার ইতিহাস
২০ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
জানা আছে কি? আজকের সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একসময় মুসলমানদের কর দিয়ে চলতো
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মোগল সেনাপতির ডায়েরী প্রকাশ ও বিধর্মীদের প্রচারিত মিথ্যা ইতিহাস ফাঁস
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলিম কর্তৃক অমুসলিম-বিধর্মীদের ক্ষমতায়িত করার করুণ পরিণতি
১৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইতিহাস পাঠ: পবিত্র মসজিদের উপর উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের ধারাবাহিকতা
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইতিহাস পুনঃপাঠ: দাঙ্গায় হিন্দু পুলিশের ভূমিকা
১৪ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শুধু স্পেন কিংবা বাগদাদ থেকে নয়, ভারতবর্ষ থেকেও মুসলমানদের লাইব্রেরীর কিতাবাদি লুট করেছিল ব্রিটিশরা
১৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৩)
০৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শের আলী খান আফ্রিদী: ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া একজন মুসলিম বীর
০৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১২)
০১ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক হিসেবে ‘কুস্তি’ লড়াইকে যেভাবে ধরে রেখেছিলো উসমানীয়রা
২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিলাফতকালের একটি ঘটনা
২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)