কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (১)
, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার বলা হলেও এর আরেকটি নাম হচ্ছে খ্রিস্টান ক্যালেন্ডার। এটিকে পশ্চিমা ক্যালেন্ডারও বলা হয়। এই ক্যালেন্ডারের নাম রাখা হয়েছে রোমের পোপ গ্রেগরীর নামে যে ছিলো ১৩তম পোপ। এর প্রকৃত নাম উগো বেনকোমপাগনাই। ১৫৮২ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি পোপ গ্রেগরী একটি ডিক্রি জারীর মাধ্যমে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করে। ১৫৭২ থেকে ১৫৮৫ সাল পর্যন্ত সে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গুরু হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও প্রকৃতপক্ষে ছিলো একজন চরিত্রহীন মানুষ। সে ছিলো একজন অবৈধ সন্তানের জনক যার নাম ইতিহাসে লেখা আছে জিয়াজোমো বেনকোমপাগনাই। পরবর্তীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার এই অবৈধ সন্তানকে সে আর্মির প্রধান এবং তারপরে ডিউক পদে অধিষ্ঠিত করেছিলো।
এই পোপ গ্রেগরী তার শাসনামলে পর্তুগালের শাসক সিবাসতিয়ানকে প্ররোচিত করেছিলো মরক্কোর বাদশাহ আব্দুল মালিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। যা তার ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবের সামান্য নমুনা মাত্র।
যে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে, এটা এসেছে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারকে সংশোধন করে। আবার জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ছিলো রোমান ক্যালেন্ডারের সংশোধনী রূপ। সুতরাং আমরা একটু অতীতের দিকে তাকাবো যেন বুঝতে পারি এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ইতিহাস কেমন ছিলো। রোমানরা ছিলো চরম কুসংস্কারে বিশ্বাসী। তারা জোড় তারিখকে অশুভ মনে করতো, ফলে ২৯ এবং ৩১ দিনে মাস গণনা করতো। শুধু ব্যতিক্রম ছিলো ফেব্রুয়ারি মাস যা ২৮ দিনে গণনা করা হতো। কিন্তু এতে দেখা গেলো ৪টি মাস ছিলো ৩১ দিনে, ৭টি মাস ছিলো ২৯ দিনে, ১টি মাস ছিলো ২৮ দিনে। এভাবে বছর ছিলো ৩৫৫ দিনে। পরে তারা ২২ অথবা ২৩ দিনের একটি নতুন মাস প্রত্যেক দ্বিতীয় বছর যোগ করতো। এই মাসটিকে বলা হতো মার্সিডোনিয়াস। কিন্তু জুলিয়াস সিজার (ঈসায়ী পূর্ব ৪৫ সাল) এই রোমান ক্যালেন্ডারকে কিছুটা সংশোধন করে, তাই তার নাম অনুসারে এই ক্যালেন্ডারের নাম হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। তখন ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা (৩৬৫.২৫) হিসেবে সৌর বৎসর গণনা করা হতো। মাস গণনা করা হতো ৩০ অথবা ৩১ দিনে আর ৬ ঘণ্টার হিসাব মেলাবার জন্য চার বছর পরপর ৩৬৬ দিনে বছর গণনা করা হতো।
আমরা জানি ২০ অথবা ২১শে মার্চে দিন রাত্রি সমান হয়। জুলিয়ান ক্যালেন্ডার যেহেতু ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা হিসেবে ধরা হতো অর্থাৎ প্রকৃত সৌর বৎসর (৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট, ৪৬ সেকেন্ড) এর চেয়ে ১১ মিনিট বেশি ছিলো। ফলে দেখা গেলো ১৫ শতকে এসে ২১শে মার্চের পরিবর্তে ১১ মার্চ দিন-রাত্রি সমান হচ্ছে। ফলে এই ১০ দিনের সংশোধন করে ৫ অক্টোবর, জুমুয়াবার ১৫৮২ সালের পরিবর্তে ১৫ অক্টোবর ১৫৮২ সাল হিসেবে পরিবর্তন আনা হয় আর এই পরিবর্তন আনে খ্রিস্টানদের ১৩তম পোপ গ্রেগরী এবং তখন থেকে সেই ক্যালেন্ডারকে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামকরণ করা হয়।
এখন আমরা যা দেখলাম এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হচ্ছে সেই রোমানদের কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ক্যালেন্ডারের বর্তমান রূপ। ফেব্রুয়ারি মাস এখনো ২৮ দিনে এবং ৪ বছর পরপর ২৯ দিনে গণনা করা হচ্ছে। কাফিররা কাফিরদের অনুসরণ করতে পারে কিন্তু মুসলমানরা নয়। ফলে মুসলমানদের নতুন করে একটি সৌর ক্যালেন্ডারের কথা চিন্তা করতে হবে।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বারোটি মাসের নাম (ইংরেজি বারো মাসের নাম) সকলেই সারা বছর ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু ইসলামের নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে যাকে শিয়ারুল ইসলাম বলা হয়। মুসলমানগণের পক্ষে এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনেক কারণেই ব্যবহার করা সমীচীন নয়। আজ শুধু এই ক্যালেন্ডারে বারটি মাসের নামকরণের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো, তাতেই ফুটে উঠবে শুধু ক্যালেন্ডারের ব্যবহার নয় এবং এ মাসের নামের উচ্চারণও মুসলমানগণের জন্য পরিতাজ্য।
এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বারোটি মাসের মধ্যে পাঁচটি মাসের নাম এসেছে দেব-দেবী থেকে। পাঁচটি রোমান শব্দ থেকে আর দুটি রোমান শাসকের স্মরণে।
জানুয়ারি- রোমান দেবতা জেনাস-এর নাম থেকে।
ফেব্রুয়ারি- দেবতা ফেব্রুস-এর নাম থেকে।
মার্চ- রোমানদের যুদ্ধের দেবতা মারস-এর নাম থেকে।
এপ্রিল- রোমান শব্দ থেকে।
মে- রোমান দেবী মেইন্টা থেকে।
জুন- দেবতা জুনোর নাম থেকে।
জুলাই- রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার-এর স্মরণে।
আগস্ট- রোমান শাসক অগাস্টাস-এর স্মরণে।
সেপ্টেম্বর- রোমান শব্দ সেপ্টেম (সাত) থেকে।
অক্টোবর- রোমান শব্দ অক্টো (আট) থেকে।
নভেম্বর- রোমান শব্দ নভেম (নয়) থেকে।
ডিসেম্বর- রোমান শব্দ ডিসেম (দশ) থেকে। নাউযুবিল্লাহ!
-আল হিলাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












