পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরা সম্পর্কে-
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (১০)
, ২৫ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৬ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫, মে, ২০২৪ খ্রি:, ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। আর আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবিক উমরাহ করা হচ্ছে সুন্নত। আর বিশেষ করে পবিত্র হজ্জের যে খুছূছিয়াত ও বৈশিষ্ট রয়েছে। সে সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَىُّ الأَعْمَالِ اَفْضَلُ قَالَ اِيْـمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ جِهَادٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ قِيْلَ ثُـمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَجٌّ مَّبْرُوْرٌ.
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করা হলো-
اَىُّ الْأَعْمَالِ اَفْضَلُ
কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
اِيْـمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
উত্তম আমল হচ্ছে যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনা এবং যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনা। সুবহানাল্লাহ!
قِيْلَ ثُـمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم
এরপর তিনি জিজ্ঞাসিত হলেন এরপর কোনটা ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
جِهَادٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
এরপর হচ্ছে যিনি খ¦লিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি রেজামন্দী হাছিলের জন্য এবং যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি খ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দী হাছিলের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় জিহাদ করা। সুবহানাল্লাহ!
قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
এরপর তিনি পুনরায় আবার জিজ্ঞাসিত হলেন এরপর কোনটা ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরপর কোন আমলটি উত্তম ও আফযল। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
حَجٌّ مَّبْرُوْرٌ
মাকবুল হজ্জ। সুবহানাল্লাহ! মকবুল হজ্জ। এখন পবিত্র হজ্জ উনার খুছূছিয়ত ও বৈশিষ্ট। পবিত্র হজ্জ জীবনে একবার করা ফরয। একাধিকবার কারো সামার্থ থাকলে সে করতে পারে। তা শর্ত সাপেক্ষে পুরা হয়ে থাকে।
যেমন একটা ওয়াক্বিয়া বলা হয়। এক বুযূর্গ ব্যক্তি উনাকে একটা সংবাদ দেয়া হলো যে, দূরবর্তী কোন স্থানে এক নেককার পরহেযগার লোককে কিছু ডাকাত শ্রেণীর সন্ত্রাসী শ্রেণীর লোকেরা মেরে সারা রাত্র ব্যাপী আগুন দিয়ে জ্বালিয়েছে। কিন্তু যখন সকালে আগুনটা নিভে গেল তখন দেখা গেল সেই ব্যক্তি উনার শরীরের একটা পশমও আগুনে পুড়েনি, সারা রাত্র উনাকে জ্বালানোর পরেও। সুবহানাল্লাহ! তখন সংবাদ দেয়া হলো, নিশ্চয়ই লোকটা তিনবার হজ্জ করেছে। তিনি বললেন, তিনবার হজ্জ করেছেন। যারা প্রশ্নকারী তারা খোজ নিয়ে দেখলো, সত্যিই লোকটা তিনবার হজ্জ করেছেন। তখন প্রশ্নকারী বলল, এই বুযূর্গ ব্যক্তি যে তিনবার হজ্জ করেছেন, কি করে আপনি বুঝতে পারলেন? তিনি বললেন, দেখ, কিতাবে বর্ণিত রয়েছে। যে একবার হজ্জ করলো সে ফরয আদায় করলো। যে দু’বার হজ্জ করলো সে খ¦লিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে করজ দিলো। আর যে তিনবার হজ্জ করলো সে নিজের জিসিমটাকে পরকাল ও ইহকালের আগুনের জন্য হারাম করে নিলো। সুবহানাল্লাহ! সে তিনবার হজ্জ করার কারণে সারা রাত্র তাকে জ্বালানোর পরেও তার একটা পশমও পুড়েনি। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই খালিছ নিয়তে কেউ যদি পবিত্র হজ্জ করে, কারো যদি হজ্জে মাবরূর নছীব হয় তাহলে তার জন্য এই ফযীলত মুবারক নছীব হবে।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে একাধিক বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, হযরত আমর বিন আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত দাহ্ইয়াতুল কলবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। যখন হুদাইবিয়ার সন্ধি হয়ে গেলো তখন কুরাইশ গোত্র হতে অনেকে এসে ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেছেন। হযরত আমর বিন আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত দাহ্ইয়াতুল কলবি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা আলাদাভাবে তাওবাহ করার জন্য আসলেন। এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে তাওবাহ করান, তাওবাহ করে ঈমান দিয়ে মুসলমান করে নিন। উনারা হাত বাড়িয়ে আবার পিছিয়ে নিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, কি হলো? আপনারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে পিছিয়ে নিলেন কেন? উনারা আলাদাভাবে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা অতীত জীবনে অনেক গুনাহখতা করেছি। এখন আমরা তাওবা করলে, ঈমান আনলে কি আমাদের গুনাহখতাগুলো ক্ষমা হবে? যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী মুবারক ব্যতীত কোন কথা বলেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে তিনটি কথা দিয়ে পাঠালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উনাদেরকে বলে দিন-
اِنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهٗ وَأِنَّ الْـهِجْرَةَ تَـهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأِنَّ الْـحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهٗ
একটা হচ্ছে: নিশ্চয়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম যখন কেউ গ্রহণ করে, কবুল করে, মুসলমান হয় তখন তার পিছনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! দ্বিতীয়ত: মানুষ যখন হিজরত করে তখন তার জীবনের পিছনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! তৃতীয়ত: বলা হয়েছে, যখন কেউ হজ্জ করে, অর্থাৎ হজ্জে মাবরূর করবে তখন তার জীবনের সমস্ত গুনাহখতা ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! তবে শর্ত হচ্ছে হজ্জে মাবরূর করা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (১৩)
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১৭)
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ফিক্বাহ বা ফতওয়ার সকল কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্য-যন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সঠিক তারতীবে যাকাত উসূল বা সংগ্রহ করা ফরয-ওয়াজিব
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতবাসীর সমস্ত নিয়ামত মুবারক বণ্টনকারী
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সারাবিশ্বে এক দিনে ঈদ পালন সম্ভব কি? একটি দলীলভিত্তিক বিশ্লেষণ.... (৪)
১৭ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে রোযা অবস্থায়- ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন ও টিকা নেয়া অবশ্যই রোযা ভঙ্গের কারণ (১২)
১৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িয
১৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)