সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র ঈদুল আদ্বহা উনার দিন পবিত্র কুরবানী করাই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ আমল মুবারক
, ০৮ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৬ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৫ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দশ বছর অবস্থান মুবারক করেছেন। প্রতি বছরই তিনি পবিত্র কুরবানী মুবারক করেছেন; কখনও তা ছাড়েননি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও পবিত্র কুরবানী করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِيْنَةِ عَشْرَ سِنِيْنَ يُضَحِّي.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে দশ বছর অবস্থান মুবারক করেছেন এবং প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানী করেছেন। ” (তিরমিযী শরীফ : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১৫০৭)
পবিত্র কুরবানী না করে তার অর্থ দান করে দেয়ার কোন হুকুম সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে নেই। কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিংবা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কখনো এরূপ আমল করেননি। অথচ উনাদের যুগেই এর জরুরত ছিল অধিক। বরং উনারা পবিত্র কুরবানী মুবারক করেছেন এবং কুরবানীকৃত পশুর গোশত ও চামড়া অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বণ্টন করতে বলেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “সাইয়্যিদাতুনা হয়রত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বান্দা-বান্দী বা উম্মত পবিত্র কুরবানী উনার দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকে তন্মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো পবিত্র কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে পবিত্র কুরবানী উনার পশু তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে এবং পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছে যায়। কাজেই আপনারা আনন্দচিত্তে পবিত্র কুরবানী করুন। ” (তিরমিযী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَااُنْفِقَتِ الْوَرِقُ فِىْ شَىْءٍ اَحَبَّ اِلَى اللهِ مِنْ نَـحْرٍ يُنْحَرُ فِىْ يَوْمِ عِيْدٍ.
অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঈদের দিন পবিত্র কুরবানী করার খাতে যে ব্যয় করা হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উক্ত ব্যয়ের চেয়ে প্রিয় কোন খাত নেই। ” (আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব : ২য় খ-, মু’জুমাল কবীর লিত ত্ববারানী, জামিউছ ছগীর, কানযুল উম্মাল, জামিউল জাওয়ামে, তাফসীরে ইবনে কাছীর : ৫ম খন্ড, সুনানে দারে কুতনী, বায়হাক্বী)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে-
اَفْضَلُ الْعِبَادَاتِ يَوْمُ الْعِيْدِ عِرَاقَةُ دَمِ الْقُرْبَاتِ
অর্থ : “ঈদের দিন রক্ত প্রবাহিত করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। ” সুবহানাল্লাহ! (তুহফাতুল আহওয়াজী)
কুরবানীর দিন কুরবানী করাই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রিয় আমল। আর তাই ফিক্বহের কিতাবে এসেছে-
شراء الاضحية بعشرة اولي من ان يتصدق بالف.
অর্থ : “পবিত্র কুরবানীর দিনে ১০ টাকা দিয়ে পশু খরিদ করে পবিত্র কুরবানী করা ১ হাজার টাকা ছদক্বা করা থেকে উত্তম। ” (ফতওয়ায়ে আলমগীরী ৫ম খ- ৩৪৬ পৃষ্ঠা)
সুতরাং যারা কুরবানী না করে সেই টাকা গরীবদের দান করে দেয়ার কথা বলছে তাদের বিরুদ্ধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ মুবারক করেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি পবিত্র কুরবানী করবেনা সে যেনো আমাদের ঈদগাহের নিকটে না আসে। ” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
কাজেই প্রত্যেক সামর্থবানদের জন্য আবশ্যক হলো, পবিত্র ওয়াজিব কুরবানী করা। আর যাদের প্রতি পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়নি; তাদের জন্য এবং যাদের জন্য পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে তাদের জন্য অর্থাৎ প্রত্যেকের জন্যই আবশ্যক হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে পবিত্র কুরবানী দেয়া। যা সমস্ত উম্মতের জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে কবুল করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রয়োজনে ছুরি এবং চাকু দিয়ে খাবার কেটে খাওয়াও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘পনির’
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০১)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












