সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার গুরুত্ব-ফযীলত ও খাছ সুন্নতী তারতীব
, ১০ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৪ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৩ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত : প্রতি হরফে রয়েছে কমপক্ষে দশ নেকী
পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের গুরুত্ব-ফযীলত অতুলনীয়। মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এই সম্মানিত কিতাব মুবারক নাযিল হয়। সমস্ত আসমানী কিতাব মুবারকের সাইয়্যিদ বা প্রধান হলেন, পবিত্র কুরআন শরীফ। কায়িনাতের মাঝে পবিত্র কুরআন শরীফ শরীফ-ই মহান কিতাব মুবারক, যার তিলাওয়াতে রয়েছে প্রতিটি হরফে হরফে নেকী। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهٗ بِهٖ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِـهَا، لَا أَقُوْلُ الم حَرْفٌ، وَلٰكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيْمٌ حَرْفٌ.
অর্থঃ যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একটি হরফ পাঠ করলো, তার জন্য রয়েছে একটি নেকী। আর একটি নেকী দশ নেকী সমতুল্য। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মীম- একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ২৯১০)
অতএব, আলিফ লাম মীম তিলাওয়াত করলে কমপক্ষে ত্রিশ নেকী লাভ হবে। লক্ষণীয় বিষয় হল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দৃষ্টান্ত স্বরূপ আলিম লাম মীম উল্লেখ করেছেন। আর এটি এমন এক শব্দ, যার অর্থ একমাত্র মহান আল্লাহ পাক ও উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা ছাড়া কেউ জানেন না। এখান থেকে বুঝা গেল যে, মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার অর্থ না বুঝে পড়লেও রয়েছে অনেক ছওয়াব, অনেক ফায়দা। আর যদি কেউ অর্থ বুঝে বুঝে উপলব্ধির সাথে মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে আরো কত ছওয়াব দিবেন, তা তো মহান আল্লাহ পাক তিনি-ই ভালো জানেন।
তিলাওয়াতের ফযীলত উত্তম থেকে উত্তম:
হযরত উকবা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একবার আমরা সুফফায় অবস্থান করছিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আচ্ছা বলুন তো, কেউ বুতহান অথবা আকীকে গিয়ে উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট দু’টি উটনী নিয়ে আসবে। কারো উপর জুলুম করে নয়। কোনো অপরাধ করে নয়। কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে নয়; খুবই ন্যায়সঙ্গতভাবে। আপনাদের মধ্যে কে আছেন এমনটি চাইবেন? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এরকম হলে তো আমাদের সবাই তা চাইবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, মসজিদে গিয়ে ইলিম শেখা অথবা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দু’টি পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা, সেই দুই উটনী অপেক্ষা উত্তম। তিনটি পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করা তিনটি উটনী থেকে উত্তম। চারটি পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করা চারটি উটনী থেকে উত্তম। (মুসলিম শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৮০৩)
উল্লেখ্য, তৎকালীন আরব দেশে উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট উটনী ছিল অনেক মূল্যবান সম্পদ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পার্থিব এ মূল্যবান সম্পদের তুলনা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন পরকালীন বিবেচনায় মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার একেকটি পবিত্র আয়াত শরীফ পাঠ করা-শেখা কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সুবহানাল্লাহ!
উত্তমভাবে তিলাওয়াতকারীগণ থাকবেন সম্মানিত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে:
প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে ছহীহ-শুদ্ধভাবে, উত্তমরূপে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ، وَالّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيْهِ، وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ، لَهٗ أَجْرَانِ.
অর্থ: যারা উত্তমরূপে মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতো তারা থাকবে অনুগত সম্মানিত হযরত ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে। আর যে ব্যক্তি মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে গিয়ে আটকে আটকে যায় এবং কষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ ছওয়াব। (মুসলিম শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৭৯৮)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিকে যেভাবে তিলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিদের জন্য সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন; তেমনি মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে যাদের কষ্ট হয়, মুখে আটকে আটকে যায়, তাদের জন্যও সুসংবাদ মুবারক প্রদান করেছেন। তাই যারা এখনো ছহীহ-শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত শিখেনি, সাবলীলভাবে তিলাওয়াত করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি, তাদের নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি তাওয়াক্কুল করে বিশুদ্ধভাবে, সাবলীলভাবে তিলাওয়াতের কোশেশে মশগুল থাকবে।
তিলাওয়াতকারীদের জন্য মহাপবিত্র কুরআন শরীফ শাফায়াত করবে:
যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে মহাপবিত্র কুরআন শরীফকে নিজের সঙ্গী বানাবে কিয়ামতের দিন মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তাকে ভুলবেন না। কিয়ামতের সেই কঠিণ মুহূর্তে মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তাকে সঙ্গ দেবেন এবং তার জন্য শাফায়াত (সুপারিশ) করবেন। হযরত আবূ উমামা বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِقْرَؤُوا الْقُرْآنَ فَإِنّهُ يَأْتِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيْعًا لِّأَصْحَابِهٖ.
অর্থ: তোমরা মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করো। কেননা কিয়ামতের দিন মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিনি উনার ‘ছাহিবের’ জন্য সুপারিশ করবেন। (মুসলিম শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৮০৪)
ছহিবে কুরআন শরীফের পরিচয় ও তিলাওয়াতের মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক:
মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছাহিব কে? মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, ‘ছাহিবে কুরআন শরীফ’ বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যিনি মহাপবিত্র কুরআন শরীফ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে মশগুল থাকেন। মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার হিদায়েত ও নির্দেশ মুবারকসমূহ গ্রহণ করেন। মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার হুকুমগুলো আমলে নেন। মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার হিফয করেন। (কূতুল মুগতাযী আলা জামিইত তিরমিযী শরীফ ২/৭৩২)
অতএব আমাদেরকে ‘মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছাহিব’ বা মহাপবিত্র কুরআন শরীফওয়ালা হওয়ার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। আর মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার ছাহিব হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ইহতিমামের সাথে তিলাওয়াত করা।
মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক হচ্ছে, মাদ-মাখরাজ, সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে তারতীলের সাথে, ধীরে ধীরে পাঠ করা। তাড়াহুড়া না করা, ইনিয়ে-বিনিয়ে পাঠ না করা। এক কথায়, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, রহমাতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি যেভাবে তিলাওয়াত মুবারক করেন, এভাবে তিলাওয়াত করাই খাছ সুন্নত মুবারক।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে খাছ সুন্নতী তারতীবে মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রয়োজনে ছুরি এবং চাকু দিয়ে খাবার কেটে খাওয়াও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘পনির’
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০১)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত খাছ সুন্নতী বিছানা মুবারক উনার বর্ণনা
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ তো অবশ্যই বরং হারাম-নাজায়িযের অন্তর্ভুক্ত
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












