ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৬)
, ০২ জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৬ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ০৯ কার্তিক, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “Confession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
২০। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল রাষ্ট্রের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে যাতে কোন লোকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে কখনও মাদরাসা বা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম না হয়।
মুসলমানদের মনে কুরআন শরীফের সত্যতা নিয়ে সন্দেহের উদ্রেগ ঘটাবে। কুরআন শরীফের অতিরিক্ত, সংশোধিত এবং বিকৃত বক্তব্য সম্বলিত অনুবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা নিবে, অতঃপর বলবে, “কুরআন শরীফ বিকৃত হয়ে গেছে। ” (নাঊযুবিল্লাহ)
প্রচার করবে, কুরআন শরীফের কপিগুলো বেমানান এবং বেখাপ্পা। এক আয়াত শরীফের সঙ্গে অন্য আয়াত শরীফের মিল নেই। যে সকল আয়াত শরীফে ইহুদী, খ্রিষ্টান এবং বিধর্মীদের ব্যাপারে অপমানজনক কথা রয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে দেবে এবং জিহাদ, সৎকাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ সে বিষয়গুলো বাদ দিবে। তুরস্ক, ফারসী এবং ভারতের প্রচলিত ভাষা এবং অন্যান্য আরো ভাষায় কুরআন শরীফের ভাষান্তর করবে যাতে আরব দেশের বাইরে অন্য দেশগুলোতে আরবী শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয় এবং আযান, নামায, দুয়া ইত্যাদি আরব দেশ ভিন্ন অন্য দেশগুলোতে আরবীতে না পড়া হয়। তদ্রুপ মুসলমানগণকে হাদীছ শরীফের ব্যাপারে সন্দেহ প্রবণ করে তুলবে। কুরআন শরীফের ভাষান্তর, সমালোচনা এবং বিকৃত করার ব্যাপারে যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে হাদীছ শরীফের ক্ষেত্রে একই পরিকল্পনা প্রয়োগ করবে।
(ব্রিটিশদের এই অপচেষ্টা, শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। কেননা স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন এই কুরআন মজীদের যে কোন প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বিকৃতি থেকে হিফাজত করে আসছেন। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার ওয়াদা। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উপর নাযিলকৃত ইনজিল শরীফ রক্ষার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার কোন ওয়াদা ছিলো না। সে কারণেই বাইবেল নামে একটা ভুল গ্রন্থ রচিত হয়েছিলো। সময়ে, সেই ভুল গ্রন্থটি বিভিন্নভাবে বিকৃত হয়েছে। পল নামে একজন ইহুদী পুরোহিত প্রথম বাইবেলের বিকৃতি ঘটায়। সবচেয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয় ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে নিসিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে। ইস্তাম্বুলের প্রথম রোম শাসক কনষ্টাইনের নির্দেশে তিনশত নিরানব্বই জন পুরোহিতকে নিয়ে গঠিত সম্মেলনে এ কাজটি করা হয়।
প্রতি শতাব্দী শেষে এরূপ সংশোধনী আনয়ণ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। এভাবে ১২২৪ সালে মার্টিন লথার নামে একজন জার্মান পাদ্রী পোটেষ্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করে। খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা রোমের পোপকে অনুসরণ করে তাদের বলা হয় ক্যাথলিক। ১০৫৪ সালে ইস্তাম্বুলের গীর্জা প্রধান, পোপের অধঃস্তন মাইকেল কিরোলারিয়াস অর্থডক্স (গোড়া) চার্চের গোড়াপত্তন করে। অনুরূপভাবে সিরিয়ান একেশ্বরবাদী দল সৃষ্টি হয় জোকাবাস (কাবাউস) কর্তৃক ও সিরিয়ান ম্যারোনিট সম্প্রদায় সৃষ্টি হয় মাআরো নামক এক ব্যক্তি দ্বারা। জোহাবাস উইটনেস দল গঠিত হয় ১৮৭২ সালের চার্লস রাসেল কর্তৃক। )
[এই ছিলো এক হাজার পৃষ্ঠা বইয়ের মূল থিম; আরো অনেক বিষয় আছে। যাই হোক- এতক্ষণ যা আলোচনা হচ্ছিলো তা হচ্ছে সেই বই যা সচিব হেমপারকে পড়তে দিয়েছিলো। বইতে কি কি বিষয়ে ইসলামবিধ্বংসী, ঈমানবিধ্বংসী পরিকল্পনা ছিলো তার সামান্যই এখানে স্থান পেয়েছে। এবার আমরা দেখবো বইটি হেমপার পড়ার পরে তার অনুভূতি কি? এবং তাদের পরবর্তী প্ল্যান কি?]
{পাঠকদের মধ্যে যারা এই বিষয়টির প্রতিটি পর্বে চোখ রেখেছেন, তারা বিষয়টি বুঝবেন। এবার আমরা এই চ্যাপ্টারের সেখানে ফিরে যাবো, যেখানে সচিবের সাথে হেমপারের কথোপকথন হচ্ছিলো। }
“কেমন করে ইসলাম ধ্বংস করা যায়” নামের বইটি যখন পুরোটা পড়ি তখন আমার মনে হলো সত্যি বেশ দারুন একটি বই। আমার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এটি একটি মূল্যবান পুস্তক বলে মনে হলো। সচিবের কাছে বইটি ফেরত দিতে গিয়ে বললাম, বইটি পড়ে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি। সচিব বললো, তুমি নিশ্চিত থেকো এই পথে তুমি একমাত্র ব্যক্তি নও। আমাদের আরো অসংখ্য লোক আছে যারা তোমার মত এই দায়িত্ব পালন করছে। আমাদের মন্ত্রণালয় পাঁচ হাজারেরও বেশী লোককে এ কাজের জন্য নিয়োগ দিয়েছে। মোট গোয়েন্দার সংখ্যা লাখের কাছাকাছি। বাড়াবার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলে, সব মুসলমানকেই আমাদের কব্জায় নিয়ে আসবে এবং সব মুসলিম দেশগুলো চলে আসবে আমাদের দখলে।
সচিব এক পর্যায়ে বললো, তুমি শুনে খুশী হবে যে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাত্র এক শতাব্দী প্রয়োজন। যদিও আমরা সেই সুখের দিনগুলো দেখার জন্য বেঁচে থাকবো না কিন্তু আমাদের সন্তানরা তা দেখবে।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












