ভূমিকম্পসহ যমীনে ও পানিতে অন্যান্য আযাব-গযব, বালা-মুসীবত নাযিল হওয়ার মূল কারণ ও প্রতিকার (১)
, ০৭ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ৩১ সাদিস, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৯ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
গত সপ্তাহে আমাদের দেশে মাত্র ৩১ ঘন্টার ব্যবধানে মোট ৪ বার ভূমিকম্প হয়েছে। যার মধ্যে প্রথমবারের ভূমিকম্পকে আমাদের দেশের জন্য এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় হিসেবে ধরা হয়েছে। আবার গত বৃহস্পতিবার মাত্র ১৩ ঘন্টার ব্যবধানে ফের ৩ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। অনলাইন-অফলাইন সব জায়গায় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলমান এর কারণ উদঘাটন করার জন্য। তবে মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য দায়িত্ব হচ্ছে এই বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে কি বলা হয়েছে সেটা জানা এবং সেই অনুযায়ী আমল করা।
কোনো জনপদের মানুষ যখন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের নাফরমানী ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হয় তখনই সেখানে আসমানী-যমীনী বিভিন্ন বালা-মুসীবত দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
অর্থ: স্থলে ও পানিতে মানুষের কৃতকর্মের জন্য বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (পবিত্র সূরা রূম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে বিষয়টা আরো বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি একবার উনার সাথে আরেকজন লোকসহ উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারকে উপস্থিত হলেন। তখন উনার সাথের লোকটি বললেন, হে হযরত উম্মুল মুমিনীন আলাইহাস সালাম! আমাদেরকে ভূমিকম্প সম্পর্কে সংবাদ দিন। তখন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন-
إِذَا اسْتَبَاحُوا الزِّنَا، وَشَرِبُوا الْخَمْرَ، وَضَرَبُوا بِالْمَغَانِي، وَغَارَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي سَمَائِهِ فَقَالَ لِلأَرْضِ: تَزَلْزَلِي بِهِمْ، فَإِنْ تَابُوا وَنَزَعُوا، وَإِلا هَدَمَهَا عَلَيْهِمْ
‘যখন লোকেরা যিনা-ব্যভিচারকে বৈধ মনে করবে, মদ পান করবে এবং গানের চর্চা করবে তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমানে অসন্তুষ্ট হয়ে যমীনকে বলবেন, এদেরকে নিয়ে প্রকম্পিত হও, যদি তারা তাওবা করে আর এসব ছেড়ে দেয় (তাহলে নয়)। অন্যথায় এদেরকে ধ্বংস করে দাও। ’ নাঊযুবিল্লাহ! হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম হে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! এটা কি তাদের জন্য শাস্তি স্বরূপ? তিনি বললেন-
بَلْ مَوْعِظَةٌ ورحمة وبركة للمؤمنين ، ونكال وعذاب وسخط على الكافرين قال أنس : ما سمعت حديثا بعد رسول الله صلى الله عليه وسلم أنا أشد فرحا مني بهذا الحديث
بَلْ مَوْعِظَةٌ وَرَحْمَةٌ وَبَرَكَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ، وَنَكَالٌ وَعَذَابٌ وَسَخَطٌ عَلَى الْكَافِرِيْنَ قَالَ حَضْرَتْ أَنَسٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَا سَمِعْتُ حَدِيْثًا بَعْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا أَشَدُّ فَرَحًا مِنِّيْ بِهَذَا الْحَدِيْثِ
‘বরং এটা মু’মিনদের জন্য নছীহত, রহমত ও বরকত স্বরূপ। আর কাফিরদের জন্য দৃষ্টান্ত, শাস্তি ও মহান আল্লাহ পাক উনার অসস্তুষ্টি স্বরূপ। ’ হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে এমন কোনো হাদীছ শরীফ আমি শুনিনি, যা শুনে এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার চেয়ে বেশি আনন্দিত হয়েছি। ’ সুবহানাল্লাহ! (আল উকূবাত লি ইবনে আবিদ দুনইয়া ১৯ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حضرت عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رضى الله تعالى عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فِي هَذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَمَتَى ذَاكَ قَالَ إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ
অর্থ: হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণস্বরূপ আযাব এ উম্মতের মাঝে ঘনিয়ে আসবে। একজন হযরত ছাহাবাী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কখন এসব আযাব সংঘটিত হবে? তিনি বললেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তৃতি লাভ করবে এবং মদ্যপানের সয়লাব হবে। নাঊযুবিল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ২২১২) (আগামী পর্বে সমাপ্য)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












