হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে বাতিল ফিরক্বা কর্তৃক উত্থাপিত সমালোচনা সমূহের দলীলসম্মত জাওয়াব (৩০)
, ২১ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত ও মর্যাদা:
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এতই বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত ও মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জিহাদের ময়দানে সার্বিকভাবে সাহায্য করেছেন এবং কাফিরদের সর্বাঙ্গে প্রচ-ভাবে আঘাত করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, (হে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম) স্মরণ করুন, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পক্ষ থেকে আপনাদের স্বস্তি ও শান্তির জন্য আপনাদেরকে তন্দ্রাছন্ন করেন এবং আকাশ হতে আপনাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেন। আর উক্ত বৃষ্টির পানি দ্বারা আপনাদেরকে পবিত্র করার জন্য এবং আপনাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রনা অপসারণের জন্য আপনাদের অন্তরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং আপনাদের পা স্থির রাখার জন্য। ” (সূরা আনফাল শরীফ-১১-১২)
উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় “তাফসীরে মাযহারীতে” উল্লেখ আছে, “জিহাদের ময়দানে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যে তন্দ্রাচ্ছন্নতা নেমে এসেছিল তা সম্পূর্ণই এক বিশেষ নিয়ামত হিসেবে নাযিল হয়েছিল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি।
দ্বিতীয়তঃ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, যে নিয়ামতটি প্রাপ্ত হয়েছিলেন তা ছিল বৃষ্টি। আর উক্ত বৃষ্টি নাযিল করেছেন পবিত্র করার জন্য।
তৃতীয়তঃ বলা হয়েছে, “আপনাদের নিকট থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য। অর্থাৎ বৃষ্টি বর্ষণের আরেকটি উদ্দেশ্য বিবৃত হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যেটি হচ্ছে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করা। কেননা শয়তান এ মর্মে কুমন্ত্রণা দিতে শুরু করেছিল যে, “আপনারা বলেন, আপনারা বলেন আপনারা বিশ্বাসী তাই আপনারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় পাত্র। অথচ দেখুন জিহাদের উপযুক্ত স্থানটি ও পানির সকল উৎসগুলো রয়েছে কাফিরদের দখলে। পক্ষান্তরে নিম্নাঞ্চল, তাও বালুময় এলাকা, যাতে চলাফেরাও কষ্টকর, সেটি পড়লো আপনাদের জন্য। আপনারা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকেন তাহলে আপনারা এ রকম দূরাবস্থায় পড়েছেন কেন? অযূ, গোসল কিছুই করতে পারছেন না আপনারা। পবিত্রতা অর্জন ব্যতিরেকে কি মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করা যায়? আর ইবাদত না করলে কি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়পাত্র হওয়া যায়? শয়তানের এহেন কুমন্ত্রণা সেই মুহূর্তেই উবে গেল, যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করলেন প্রবল বৃষ্টিপাত। আলোচ্য আয়াতে তাই বলা হয়েছে, শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণের জন্য।
চতুর্থতঃ বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে বৃষ্টি নাযিলের আরো দু’টো উদ্দেশ্যের কথা। সে উদ্দেশ্য দু’টো হলো (১) অন্তরকে দৃঢ় করার জন্য। (২) পা স্থির রাখার জন্য। এ কথার অর্থ হচ্ছে, ক্লান্তি-শ্রান্তি জর্জরিত, অপবিত্র এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রভাবিত অন্তরে কখনো সুদৃঢ় সংকল্প প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই বৃষ্টি নাযিলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি এসকল প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তরকে সুদৃঢ় করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি নাযিল করেছেন। তাছাড়া হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সামনে ছিল বন্ধুর বালিয়াড়ি। বিচরণ ক্ষেত্র ছিলো অসমতল। পদবিক্ষেপ ছিলো না স্বস্তিদায়ক। তাই যুদ্ধক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পা স্থির রাখার জন্য, চলাচল স্বস্তিকর করার জন্য বৃষ্টি নাযিলের মাধ্যমে উক্ত প্রতিবন্ধকতাটিকেও সরিয়ে দিয়েছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জিহাদের ময়দানে সার্বিকভাবে সাহায্য করেছেন, দয়া করেছেন, রহমত করেছেন। সুতরাং যদি তাই হয় তাহলে এত বেমেছাল সাহায্যপ্রাপ্ত, দয়া প্রাপ্ত, রহমত প্রাপ্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করা কিভাবে জায়িয হতে পারে? মূলত: তা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












