আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৪)
, ০৬ রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৮ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১২ পৌষ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
কোনো রাবী সম্পর্কে জারাহ করলেই কি সেই রাবী বাতিল হয়ে যান?
উল্লেখ্য যে, কোন রাবীকে প্রত্যাখ্যাত করতে হলে তার কারণও স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। রাবী নির্ভরযোগ্য নয় এটুকু বললেই হবে না। কেন গ্রহণযোগ্য নয় তার উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য কারণ বলতে হবে। হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উছূল বর্ণনা করেছেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহণযোগ্য নয়। মতভেদ, ভুলবশত মতপার্থক্য হতে পারে। কারো কারো কাছে একজন রাবী ছিক্বাহ অপর জনের কাছে ছিক্বাহ নয়। এ কারণে জারাহ করা হলে তার কারণ উল্লেখ করা আবশ্যক।
হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারকে একটা ঘটনা আছে যেটা উল্লেখ করলে বুঝতে সহজ হবে। একবার কোনো এক ব্যক্তি এক রাবীর ব্যাপারে জারাহ বা অভিযোগ করলো। তখন হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, জারাহ করার কারণ কি? সে ব্যক্তি বললেন, আমি তাকে দাঁড়িয়ে ইস্তেঞ্জা (পেশাব) করতে দেখেছি। এতে তার কাপড়ে নাপাক লেগে যাওয়া স্বাভাবিক। আর সে নাপাক কাপড়ে নামায পড়ে থাকে, এ অবস্থায় তার আদালত বা দ্বীনদারী রইলো কিভাবে? হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তুমি কি তাকে সেই কাপড়ে নামায পড়তে দেখেছো? সে বললো, না। হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এধরনের জারাহ সম্পূর্ণ বাতিল। আর ঐ ব্যক্তিতো কোন ওজরের জন্যও দাঁড়িয়ে ইস্তেঞ্জা করতে পারে। (আল কিফায়া ১০৮ পৃষ্ঠা)
আর এ কারণে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
قال الحافظ ابن كثير:" بخلاف الجرح فإنه لا يقبل إلا مفسراً لاختلاف الناس فى الأسباب الـمفسقة فقد يعتمد الجارح شيئاً مفسقاً فيضعفه، ولا يكون كذلك فى نفس الأمر أو عند غيره، فلهذا اشترط بيان السبب فى الجرح
অর্থ: হাফিয ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ফাসিক সাব্যস্তকারী কারণসমূহের ক্ষেত্রে বহুজনের বহুমত রয়েছে। অনেক সময় একজন জারাহকারী একটা বিষয়কে ফাসিক সাব্যস্তকারী কারণ মনে করে। অথচ বাস্তবে তা সেরকম নয়। এ কারনে জারাহ-এর বেলায় সকলের ঐকমত্যে কারণ দর্শানো আবশ্যক। (শরহে ইখতিছারু উলুমিল হাদীছ ১ খন্ড ২৪৭ পৃষ্ঠা)
কোনো জারাহই গ্রহণ করা হবে না যতক্ষণ না তার কারণ বর্ণনা করা হবে। কেননা অনেক সময় জারাহকারী এমন বিষয়কেও জারাহর কারণ মনে করেন যা মূলত জারাহ করার মত দোষ নয়। (শরহে মুকাদ্দিমায়ে ইবনে সালাহ ১ খন্ড ১৪০ পৃষ্ঠা)
কোনো একজন রাবীর ব্যাপারে কোন ইমাম প্রশংসা করেছে, তখন সে রাবীর ব্যাপারে ব্যাখ্যাহীন জারাহ গ্রহণযোগ্য নয়। হাফিযে হাদীছ, হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে রাবীকে কোন একজন ইমামও ছিক্বাহ বলেছেন সে রাবীর ব্যাপারে কেউ জারাহ করলে তা গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ না সে তার কারণ ব্যাখ্যা করে। (তাদরীবুর রাবী)
কোন রাবীর আদালত ও নির্ভরযোগ্যতা সাব্যস্ত হওয়ার পর তার ব্যাপারে কোন জারাহ ততক্ষণ পর্যন্ত গৃহীত হবে না যতক্ষণ না এর সুস্পষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করা হবে। (ফতহুল মুগীছ ১৩০ পৃষ্ঠা)
বিভিন্ন জন বিভিন্ন অবস্থান থেকে জারাহ করেছেন, যেমন এ বিষয়ে হাফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কেউ কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে জারাহ করেছেন, আবার কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দিতামূলক মনোভাব থেকে জারাহ করেছেন, কেউ কেউ নিজের চাইতে বড় ব্যক্তিকে জারাহ করেছেন। এর সবই অগ্রহণযোগ্য। (মুকাদ্দিমায়ে ফতহুল বারী ৪৪৬ পৃষ্ঠা)
আরো বর্ণিত আছে, দুইজন সমকালীন আলিম উনাদের পারস্পরিক জারাহ বা দোষারোপ গ্রহণযোগ্য হবে না, যতক্ষণ না তার দলীল পেশ করা হবে। (ফতহুল মুগীছ ৪৮৪ পৃষ্ঠা)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শেষে বা কোন রাবী উনার নামের পাশে শুধুমাত্র
هذا حديث ضعيف فلان ضيعف فلان ليس بشى
(অমুক হাদীছ শরীফ দ্বয়ীফ, অমুক রাবী দ্বয়ীফ, অমুক অপরিচিত) লিখে দিলেই হবে না, বরং ব্যাখ্যা থাকতে হবে কোন কারণে জারাহ করা হলো।
হযরত আব্দুল হাই লাখনৌবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিষয়ে বলেন, ব্যাখ্যাহীন জারাহ-এর চাইতে তা’দীলই অগ্রগণ্য। (যফারুল আমানী ২৮১ পৃষ্ঠা)
যেমন, হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো কোনো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাকে হযরত আবু রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আবু যুরআ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বর্জন করেছেন। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উস্তাদ ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শুধু মু’তাজিলা বলেই ক্ষান্ত হননি বরং মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করতেও নিষেধ করেছেন। (সিয়ারু আ’লামীন নুবালা ২২/৪৫৬, তারীখে বাগদাদ ২/১৩)
ইমাম হযরত মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইমাম খলিক্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জহমিয়া বলেছেন। (ওয়াফাতুল আইয়ান ২/৯১) ইনশাআল্লাহ! (চলবে)
-খাজা মুহম্মদ নুরুদ্দীন পলাশ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (৩)
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ থেকে হিফাজত হওয়ার মাধ্যম
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: মুসলিম হিসেবে স্বাতন্ত্রবোধ বা স্বকীয়তা
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তিন প্রকার ব্যক্তিকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন-
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
‘কমফোর্ট জোন’ বা ‘ স্বাচ্ছন্দের গন্ডি
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ইমাম আবূ ইউসূফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওসিয়ত মুবারক
২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার সংশ্লিষ্ট আয়াত শরীফসমূহ উনাদের সংক্ষিপ্ত তাফসীর মুবারক (১)
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুসলমানদের জন্য সমস্ত খেলাধুলা হারাম
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি ইস্তেকামত থাকলে কাফিরদের ষড়যন্ত্র ক্ষতি করতে পারবে না
২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












