আহত ফিলিস্তিনিদের নীরবতা যেন চিৎকারের চেয়ে শক্তিশালী
, ২৫ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ১১ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) বিদেশের খবর

গাজায় নিরাময়ের কোনও নিশ্চয়তা নেই। অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার কোনও সরল পথও নেই-শুধু আছে বাঁকা রাস্তা, অবরোধ, বন্ধ হয়ে যাওয়া মেশিনের নিষ্পন্দ নীরবতা।
ফোলা অঙ্গে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে নিঃশব্দে থাকে শিশুরা। পাতলা প্লাস্টিকের চাদরের নিচে নিশ্চল পড়ে থাকেন বাবারা, তাদের ঘর ভরে ওঠে অনুক্ত আতঙ্কে। ক্ষত গভীর হয়, সংক্রমণ ছড়ায়। আর পৃথিবী তখন অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে-স্ক্রল করে চলে যায় অন্য খবর।
এই যুদ্ধ কেবল কংক্রিটের দালানই ধ্বংস করেনি, ধ্বংস করেছে মানুষের এই বিশ্বাস যে অসুস্থ হলে কেউ তাদের দেখবে।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের এই প্রতিবেদন ভূ-রাজনীতি বা বালির ওপর আঁকা সীমানার কথা বলে না। এটি একটি ৬৫ বছর বৃদ্ধের কথা, যার গলায় নল ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। অন্ধ এক ডায়াবেটিক রোগীর কথা, যে অন্ধকারে অপেক্ষা করছে। এক মায়ের কথা, যিনি বিমান হামলায় নয়-ডায়ালাইসিস মেশিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মারা গেছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় আহত হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশী ফিলিস্তিনি। প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশী। তাদের মধ্যে যাদের বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন, তাদের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ১৬৩ জন গাজা ছাড়তে পেরেছে। মিশর নিয়েছে ২ হাজার ৪৫৮ জন, কাতার ৯৭০ জন। কয়েকজন আরব আমিরাত, ওমান, তুরস্ক ও ইউরোপে যেতে পেরেছে। বাকিরা এখনও অপেক্ষায়।
এই সংখ্যাগুলো বিশাল-কিন্তু এগুলো কথা বলে না। তবে মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।
‘আমি দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছি, কিন্তু কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না’:
খান ইউনিসের খুজা শহরে অন্ধকারের কাছাকাছি এক জায়গায় বসে আছেন ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবু রাজিলা। তার কণ্ঠস্বর ক্ষীণ, যেন ব্যথাটা উচ্চারণ করতে ভয় পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে আমার ডায়াবেটিস। এটি ইতোমধ্যে আমার ডান চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারপর যুদ্ধ শুরু হলো, এখন আমার বাম চোখের রেটিনা প্রথম ডিগ্রি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
তার হাতে ছিল সুপারিশ, পূর্ব জেরুজালেমের সেন্ট জন হাসপাতালে তার জন্য জায়গা ঠিক করা হয়েছিলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যুদ্ধের আগেই এটা নিশ্চিত করেছিলো। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর, আমার সব কিছু প্রস্তুত ছিলো। আমাকে বলা হয়েছিলো এক সপ্তাহের মধ্যে যাত্রা করবো। তারপর কিছুই হলো না।
ফিলিস্তিনি এই ভুক্তভোগী আর স্পষ্ট দেখতে পান না। এখন তিনি শুধু ছায়া দেখেন।
তার আকুতি স্পষ্ট: আমি ডব্লিউএইচও ও সবাইকে বলছি: আমাকে যেতে দিন। আমি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আমার চোখ হারাতে চাই না। আমি অন্ধকারে বাঁচতে চাই না।
‘আমার বাবা শুকনো ডালের মতো শুকিয়ে যাচ্ছেন’:
আহমেদ রাদওয়ান তার বাবা শফিকের (৬৫) কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠস্বর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। যুদ্ধের সময় তিনি গলায় ও পেটে গুরুতর আঘাত পান। তিনি বলেন, তার ভেতরের অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি নড়তে পারেন না। শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
তারা কঠোর পরিশ্রম করে তাকে একটি মেডিক্যাল পাঠানোর সুপারিশ পেয়েছিলেন, যা অনুমোদিতও হয়েছিলো। কিন্তু তার নাম কোনও ভ্রমণ তালিকায় আসেনি। রাদওয়ান বলেন, তাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। কেন? শোকে প্রায় চিৎকার করে তিনি বলেন, আমরা তাকে মরতে দেখছি। ধীরে ধীরে। প্রতিদিন।
তারপর আরও তিক্ত স্বরে তিনি বলেন, দখলদাররা আমাদের আহতদের বোঝা মনে করে। তারা ইচ্ছে করেই আমাদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে। এটা কি কোনও অপরাধ নয়?
‘আমার মা বোমায় মারা যাননি-মারা গেছেন ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায়’:
মোহাম্মদ আল-জারুশা তার মা রাবিহার শেষ মুহূর্তের কথা বলছিলেন, যার কিডনি বিকল ছিলো এবং যুদ্ধের আগে তিনি ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন।
আল-শিফা হাসপাতাল অবরোধের সময় সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। আল-জারুশা বলেন, তিনি মারা গেলেন। সরাসরি কোনও আঘাতে নয়-স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়ায়। আমি তাকে মরতে দেখেছি। কিছুই করতে পারিনি। এক গ্লাস পানিও দিতে পারিনি। কাউকে খুঁজেও পাইনি।
তার মুখ শান্ত, কিন্তু বেদনা যেন প্রকাশের বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, আমার মা মারা গেছেন দখলদারদের নিষ্ঠুরতা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার কারণে। এই দুনিয়ায় আমরা সমান নই। ক্ষমতাধররা নিষ্ঠুর হতে পারে, আর কেউ তাদের থামায় না। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার।
‘আইনের কথা কেউ শুনছে না’:
মোহাম্মদ আল-মাসরি একজন ফিলিস্তিনি আইন ও মানবাধিকার কর্মী, যিনি এই বিপর্যয়কে শোকের মতো নিখুঁতভাবে লিপিবদ্ধ করছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি দখলদাররা সুপরিকল্পিতভাবে গাজার অসুস্থ ও আহতদের যেতে বাধা দিচ্ছে। গত ৫৫৫ দিনে তারা গাজার স্বাস্থ্য অবকাঠামো ধ্বংস করেছে-হাসপাতালে বোমা মেরেছে, ডাক্তার মেরেছে, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করেছে।
তিনি গুনে গুনে নামগুলো বলেন, আল-শিফা, আল-আওদা, কামাল আদওয়ান, আল আহলি আরব হাসপাতাল-ধ্বংস বা অচল। দখলদাররা পশ্চিম তীর বা ইসরায়েলি হাসপাতালে স্থানান্তর করতে দেয় না।
আল-মাসরির শেষ কথাটি হলো, এগুলো বিচ্ছিন্ন ট্র্যাজেডি নয়। এগুলো শুধু সংবাদ অ্যালার্ট বা সংখ্যা নয়। এগুলো তাদের কণ্ঠস্বর, যারা এখনও বেঁচে আছে-শুধু ব্যথায় নয়, অবহেলায়।
প্রতিটি বন্ধ গেট, সাড়া না পাওয়া প্রতিটি চিকিৎসার সুপারিশ, প্রতিটি ধসে পড়া ছাদের পিছনে আছে একটি প্রাণ, যে এখনও শ্বাস নিচ্ছে, আশা করছে। নিরাময় অসম্ভব নয়-এটা ইচ্ছেকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে।
গত ২ মার্চ, সন্ত্রাসী ইসরায়েল গাজার সীমান্ত বন্ধ করে এবং ত্রাণ বন্ধ করে দেয়, এই বন্ধের ফলে মানবিক সাহায্য ও চিকিৎসা সরবরাহ আরও ব্যাহত হয়েছে। বিবিসির মতে, এই অব্যাহত হামলা ও চিকিৎসা সংকট প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ডেকে আনবে। সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বিক্ষোভে উত্তাল তেল আবিব
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইসরাইলকে বয়কট, নরওয়েজিয়ান কনফেডারেশনের প্রশংসায় হামাস
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আরও শক্তিশালী ফাতাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লো পাকিস্তান
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির পর পানিবন্টন ইস্যুতে উদ্বেগ
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ভারতকে ইসরায়েল হওয়ার পরামর্শ দিলো মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সামরিক সংঘাতে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের ক্ষতি ২২ গুণ বেশি
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দক্ষিণ আমেরিকার বিধর্মী দেশগুলোতে নতুন গযব ‘বিছার দংশন’ - বিছারা ‘দখল করে নিচ্ছে’ ব্রাজিলের শহরগুলো
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৮ জনকে কোস্টগার্ডে হস্তান্তর, কয়েকজনের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন
১২ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
‘আমরা একটি অপরাধী চক্রের কবলে পড়েছি’
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
তেল আবিবে ইয়েমেনের নতুন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইমরান খানের কারাগারে ড্রোন হামলা চালাতে পারে ভারত, দাবি পিটিআই’র
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সন্ত্রাসী ইসরায়েল ছাড়া ভারতের পাশে কেউ নেই -খাজা আসিফ
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)