ইন্দোনেশীয় অঞ্চলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম : আগমন ও বিকাশ (৩)
, ২৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৩ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১৬ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পাঁচ মিশালী
সুমাত্রার শাসকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং দ্বীপটির উপকূলীয় অঞ্চলে ইসলামকে মজবুত করার মধ্যে দিয়ে এ অঞ্চলের ইসলামের বিকাশে নতুন মোড় আসে। ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে যেতে থাকে দ্বীপসমূহের অভ্যন্তরে। ১৪১৩ খ্রিস্টাব্দে এক চীনা পরিব্রাজক এই দ্বীপের অভ্যন্তরে ভ্রমণ করেছিলো। সে বলেছে, “এখানে একহাজার পরিবার ছিল। যাদের সকলেই ছিল মুসলিম। তাদের চরিত্র ছিল খুবই সুন্দর। এ অঞ্চলের শাসকরা ছিল দ্বীন ইসলামকে মনে-প্রাণে ধারণকারী।”
পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতাব্দীতে জাভা এবং সুমাত্রা থেকে পার্শ্ববর্তী কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এবং পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আলো ছড়িয়ে পড়ে।
সম্মানিত ইসলাম উনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে মুসলিম জনপদকে কম চড়াই-উৎরাই পেরোতে হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপনিবেশ শক্তি এসে আঘাত করেছে এবং মুসলিমরা তাদের সঙ্গে সংগ্রাম করেছে। এমনকি আজও তারা সংগ্রামের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ায় পর্তুগিজ উপনিবেশ:
ইন্দোনেশিয়া দ্বীপাঞ্চলটি সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা প্রাকৃতিক নিয়ামতে ভরপুর ভূখ-। এখানে আছে প্রচুর খনিজ সম্পদ। এর ফলে পর্তুগিজ, ডাচ, ব্রিটিশ, স্প্যানিশ এবং মার্কিনী; প্রায় সকল উপনিবেশ শক্তিই এ অঞ্চলের দিকে লোভাতুর নজর দিয়েছে। যখন এ অঞ্চলে মুসলিমরা নিজেদের ভীতকে শক্ত করতে শুরু করেছে, সে সময় ইউরোপীয়রা ব্যস্ত তাদের বিষাক্ত থাবা বসানোর পরিকল্পনা প্রণয়নে। এ অঞ্চলের মসলার বেশ দাম ছিল ইউরোপের বাজারে। তাই তারা এখানে নিজেদের ব্যবসায়িক ঘাঁটি বানানোর চক্রান্ত শুরু করে।
ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলের প্রথম উপনিবেশ ছিল পর্তুগিজ ফিরিঙ্গিদের। পর্তুগিজদের আধিপত্য রুখে দিতে ইন্দোনেশীয় মুসলিমগণ তাদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে নেমেছিল। একদিক থেকে সেটিকেও ক্রুসেড যুদ্ধ বলা যায়। কারণ, এর কিছু সময় আগেই পর্তুগিজ ফিরিঙ্গিরা আন্দালুসের মুসলিমদের উপর নিধনযজ্ঞ চালিয়ে এসেছিল। মুসলমানদের অর্থনৈতিক শক্তিকে পঙ্গু করে দেয়া এবং মুসলিমদের ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের মিশন নিয়ে এসেছিল এই ফিরিঙ্গিরা। মুসলিমদের উপর বিদ্বেষের ফলে তারা সব ধরনের সহিংস এবং নৃশংস পদ্ধতি মুসলিমদের উপর প্রয়োগ করেছে। একের পর এক হামলা পরিচালনা করে তারা সফলতার মুখ দেখতে শুরু করে এবং তাদের উপনিবেশ নীতির বেশ কিছু স্থানীয় সমর্থকও বাগিয়ে নেয়। সে সময় থেকেই ইন্দোনেশিয়ায় ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমগণ পর্তুগিজ ফিরিঙ্গিদের এই উপনিবেশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বেশ কিছু প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ৯৭৮ হিজরী মোতাবেক ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ইন্দোনেশিয়ার তারনাত রাজ্যের রাজা হারুনকে বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নিয়ে হত্যা করার পর এই প্রতিরোধ আরও বেগবান হয়। এই রাজার রাজত্ব ফিলিপাইন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ডাচ এবং ব্রিটিশ উপনিবেশ:
৯৮৮ হিজরী মোতাবেক ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পর্তুগিজরা ইউরোপে এ অঞ্চলের মসলা রপ্তানির ব্যবসা জারি রাখে। অতঃপর স্প্যানিশরা পর্তুগালের দখল নিয়ে নেয়। ৯৯৭ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে সমুদ্রপথে ইংল্যান্ডের সাথে আরমাডার যুদ্ধে স্প্যানিশদের নৌবহর ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে পর্তুগিজদের মতো করে তারা ইন্দোনেশীয় অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপনে এগোতে পারেনি।
হল্যান্ড (বর্তমান নেদারল্যান্ড) যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন আর তাদের স্প্যানিশ নৌবহরের ভয় ছিল না। ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপথে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিচরণ করতে থাকে। ১৫৯০ হিজরীতে ডাচদের প্রথম নৌবহর ভারতবর্ষের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। তারা ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছে পুনরায় হল্যান্ডে ফিরে আসে। ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া ওলন্দাজ বা ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠনে এটি অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছে। এই কোম্পানি শুরুতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তাদের উদ্দেশ্য কেবলই ব্যবসা করা। কিন্তু পরবর্তীতে সকল ফসল এবং ব্যবসায়িক পণ্যে দখল বসাতে শুরু করে। স্থানীয় শাসকদের সঙ্গে আঁতাতের বিনিময়ে তারা একের পর এক ভূখ-ে থাবা বসাতে শুরু করে।
অতঃপর ডাচদের দৌরাত্ম্য ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং সকল প্রান্তে তাদের নিয়ন্ত্রণ ছড়াতে থাকে। নিয়ন্ত্রণ একটু শক্ত হতেই তারা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তখন মুসলিম অধিবাসীগণ তাদের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং ডাচরা মুখোমুখি এক শক্তিশালী প্রতিরোধ আন্দোলনের।
শুধু পর্তুগিজ এবং ডাচরাই ইন্দোনেশিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন করতে চায়নি। ব্রিটিশরাও যোগ দিয়েছিল। ১৭১৪ সালে তারা সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে বান কোলান দুর্গ স্থাপন করে এবং ১৮২৫ সাল পর্যন্ত অবস্থান করে। এর ফলে ইন্দোনেশিয়া ১৮১১-১৮১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীন হয়ে পড়ে। যখন ফরাসি শাসক নেপোলিয়ন যুদ্ধ করে ডাচদের উপনিবেশ হটিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই আগস্ট ব্রিটেন এবং হল্যান্ড লন্ডনে চুক্তিবদ্ধ হয়। এর ফলে ডাচরা ব্রিটিশদের কাছ থেকে ইন্দোনেশীয় দ্বীপগুলোর নিয়ন্ত্রণ পুনরায় ফিরিয়ে নেয়।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
গোসলের সময় কানে পানি গেলে কি করবেন?
০৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দিনে একটি পেয়ারা খেলেই যথেষ্ট
০২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আগ্নেয়গিরির লাভা জমে তৈরি হয়েছে যে দেশ
০২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেসব কারণে মহিলাদের মধু খাওয়া উচিত
০২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
শরীরের কোন ‘অংশে’ একফোঁটা ‘রক্ত’ নেই...?
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর শুনেই ডায়াবেটিস শনাক্ত!
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
৯৪ বছর পার করল ‘দ্য মুসলমান’ পত্রিকা
০১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ফলের রস ও পুরো ফল কোনটি খাওয়া ভালো
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
‘কাঁচা ডিমের ক্ষতিকর দিক জানুন’
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
কাঁচ তৈরির ইতিহাস
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
৪৫ ফুট লম্বা বরফ আগ্নেয়গিরি!
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সমুচা আবিষ্কার করেছেন মুসলমানগণ
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)