ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ (৪২)
, ১৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৬ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ০৫ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২১ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) আইন ও জিহাদ
এক রাতের ঘটনা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফে এসে ছলাত আদায় করলেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন উনার প্রহরার নির্দিষ্ট স্থানে। বললেন, শত্রুরা ইতস্ততঃ ঘুরাফিরা করছে। এরপর ডাক দিলেন, হযরত উব্বাদ ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কোথায়? হযরত উব্বাদ ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আওয়াজ দিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই যে আমি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনার সঙ্গী-সাথীরা কি প্রস্তুত? হযরত উব্বাদ ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হ্যাঁ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ভালো করে নজর রাখেন। দেখতে পাচ্ছেন, শত্রু সেনারা কাছাকাছি ঘোরাফিরা করছে। আপনি আপনার সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে তাদের গতিবিধির উপরে কড়া নজর রাখেন। নস্যাৎ করে দেন তাদের অশুভ উদ্যোগ। হযরত উব্বাদ ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সঙ্গীসাথীদেরকে নিয়ে টহল দিতে দিতে একস্থানে দেখলেন, পরিখাবেষ্টনীর একস্থানে অপরিসর ঢাল বেয়ে পরিখাভ্যন্তরে অবতরণ করছেন হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ও কিছুসংখ্যক পৌত্তলিক সৈন্য। মুসলিম সেনারা একটু পরেই টের পেয়ে গেলেন তাদের গতিবিধি। সঙ্গে সঙ্গে তাদের দিকে লক্ষ্য করে ছুঁড়তে লাগলেন পাথর ও তীর। হযরত উব্বাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও সেখানে পৌঁছে গেলেন সদল বলে। উনারাও ছুঁড়ে মারতে শুরু করলেন পাথর ও তীর। শত্রুরা উপায়ন্তর না দেখে পিছু হটতে শুরু করলো। অতি দ্রুত ফিরে গেলো তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে। আমি ফিরে এসে দেখলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গভীর মগ্নতার সঙ্গে সম্মানিত নামায আদায় করছেন। নামায শেষ হলে আমি উনাকে সব খুলে বললাম।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি আরো বর্ণনা মুবারক করেন, সম্মানিত নামায সমাপনের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত নূরুল ইতমিনান মুবারক (ঘুমানো শান মুবারক) গ্রহণ করলেন। ভোরে হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কন্ঠ মুবারকে সম্মানিত আযান ধ্বনিত হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাগ্রত হলেন। যথাপ্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গিয়ে ইমামতি করলেন সম্মানিত ছলাতুল ফজরের জামাতের। নামায শেষে দোয়া করলেন, আয় আমার প্রতিপালক! আপনি হযরত উব্বাদ ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপরে সদয় হন। উনার উপরে বর্ষণ করুন আপনার অপার করুণাবলী।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি আরো বর্ণনা করেছেন, তখন রাত্রি দ্বিপ্রহরে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। সহসা বাইরে শোনা গেলো জনগুঞ্জন। কে যেনো বলে উঠলো, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বাহিনী! আরোহণ করুন। মুহাজিরগণ সাধারণতঃ যুদ্ধকালে এরকমই বলতেন। আর এক বর্ণনায় এসেছে, রাতে শত্রুরা আপনাদের প্রতি আক্রমণোদ্যত হলে আপনাদের পরিচিত ধ্বনি হবে “হা মীম লা ইউনছরূন।” বর্ণনা দু’টোর সামঞ্জস্য করনার্থে বলা যেতে পারে মুহাজিরদের পরিচিত ধ্বনি ছিলো ‘আয় মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষবাহিনী! আরোহণ করুন’ এবং আনছারগণের পরিচিতি ধ্বনি হবে ‘হা মীম লা ইউনছরূন’। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার বর্ণনা মুবারকে বাকী অংশটুকু এরকম। বাইরের আওয়াজ শুনে জাগ্রত হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং তিনি বাইরে বেরিয়ে গেলেন। হযরত বশীর ইবনে উব্বাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, খোঁজ নেন তো, কীসের শোরগোল হচ্ছে? হযরত বশীর ইবনে উব্বাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পৌত্তলিকদের আমর ইবনে আবদুদের কিছুসংখ্যক সৈন্যের সঙ্গে মুসলমানদের সংঘর্ষ চলছে। চলছে তীর নিক্ষেপণ ও প্রস্তর বর্ষণ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় তাবুতে ফিরে এলেন। বেরিয়ে গেলেন অস্ত্রসজ্জিত হয়ে। এরপর অশ্বারোহী হয়ে কিছু সংখ্যক সৈন্যসহ রওয়ানা করলেন সংঘর্ষস্থলের দিকে। উৎফুল্লচিত্তে ফিরে এলেন কিছুক্ষণ পর। বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে প্রতিহত করেছেন। আহত হয়েছে তাদের অনেকে। তারপর পলায়ন করেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় শয্যাগ্রহণ করলেন। অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যেই আমি দেখতে পেলাম তিনি পুরোপুরি ঘুমিয়ে গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর পুনরায় বাইরে থেকে ভেসে এলো জনগুঞ্জন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাগ্রত হয়ে বাইরে গেলেন। কী হচ্ছে তা জানার জন্য। ঘটনাস্থলের দিকে প্রেরণ করলেন হযরত বশীর ইবনে উব্বাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। তিনি ফিরে এসে জানালেন, এবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে দ্বেরার ইবনে খাত্তাবের বাহিনীর সঙ্গে। উভয়পক্ষ থেকে চলছে তীরবর্ষণ ও প্রস্তর নিক্ষেপণ। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হয়ে রওয়ানা করলেন। যুদ্ধ শুরু করলেন শত্রুদের সঙ্গে। লড়াই চললো সকাল পর্যন্ত। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি মুবারক প্রকাশ করে ফিরে এসে বললেন, ওরা অনেকেই আহত হয়েছে। শেষে টিকতে না পেরে পালিয়েছে।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মুু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম তিনি আরো বর্ণনা মুবারক করেছেন, আমি আমার প্রিয়তম রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ ছোহবত মুবারকে ছিলাম মুরাইসি, খায়বর, হুনায়েন যুদ্ধ ও মক্কাবিজয়ের সময়। কিন্তু ওগুলোর কোনোটাই পরিখার যুদ্ধের মতো অধিক সংকটময় ছিলো না। পরিখার যুদ্ধেই উনার লোকেরা আহত হয়েছিলেন অধিকসংখ্যক। আর তখন ছিলো অত্যন্ত শীত।
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আবয়াদ্ব ইবনে হাম্মাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিকদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (৪)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০০)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিক্বদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (১)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












