ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ সম্পর্কে নাযিলকৃত মহাসম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৯ থেকে ২৭ পর্যন্ত উনাদের সংক্ষিপ্ত তাফসীর
ঐতিহাসিক সম্মানিত খন্দকের জিহাদ (৪৬)
, ০২ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২০ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৩ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) আইন ও জিহাদ
কোনো কোনো ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন- হযরত ইবরাহীম তাইমি রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা। এক বর্ণনায় এসেছে, একবার এক কুফাবাসী যুবক হযরত হুজায়ফা ইবনে ইয়ামিন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট জানতে চাইলো, হে আবূ আব্দুল্লাহ! আপনি কি কখনো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অনুপম সান্নিধ্য বা ছোহবত লাভ করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো কিছুদিনের পবিত্র সাহচর্য মুবারক। যুবক বললো, আপনার সঙ্গে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কীরূপ আচরণ করতেন? হযরত হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমরা তো ছিলাম উনার একান্ত অনুগত ও খাদিম। যুবক বললো, আমরা উনাকে পেলে পায়ে হেঁটে পথ চলতে দিতাম না। ঘাড়ে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। হযরত হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনি তো জানেন না, তখন কতোই না পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদেরকে। মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! পরিখার যুদ্ধের মহাসংকটময় দিনগুলোর দৃশ্যতো এখনো আমার চোখে ভাসে। এক রাতের ঘটনা। প্রচ- শীত পড়েছিলো সে রাতে। সকলেই শীতার্ত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আছেন এমন কেউ, যে আমাকে এনে দিতে পারবে শত্রুদলের অভ্যন্তরীণ খবর। মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে দান করবেন জান্নাতের প্রবেশাধিকার। কারো পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেলো না। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিছুক্ষণ ধরে ছলাত বা নামায আদায় করলেন। তারপর আমাদের মুখোমুখি হয়ে আগের ঘোষণাটির পুনরাবৃত্তি করলেন। এবারেও কারো সাড়া পাওয়া গেলনা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় ছলাতে নিমগ্ন হলেন। ছলাত আদায় শেষে পুনরায় বললেন, যে ব্যক্তি আজ শত্রুশিবিরে উপস্থিত হয়ে তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থার বিবরণ জেনে এসে আমাকে বলবে, সে হবে আমার জান্নাতের সঙ্গী। কিন্তু সকলেই তখন শীতে আড়ষ্ট, অনাহার ক্লিষ্ট এবং চিন্তিত। তাই কারো পক্ষ থেকেই সাড়া পাওয়া গেলো না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন আমাকে ডাকলেন। বললেন, হে হযরত হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি উপস্থিত। একথা বলেই আমি উনার একেবারে নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রচ- শীতের প্রকোপে আমার উরু দু’টো তখন থর থর করে কাঁপছিলো।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাত মুবারক (হাত মুবারক) দিয়ে আমার শরীর বুলিয়ে দিলেন। এতে আমি প্রশান্তি অনুভব করলাম।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এ কাজ আপনাকে করতে হবে। আপনি যান, শত্রুদের অভ্যন্তরীণ খবর সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। এরপর দোয়া মুবারক করলেন আয় বারে ইলাহী! আপনি হযরত হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হিফাজত করুন সম্মুখে-পশ্চাতে, ডানে বামে, উপরে-নিচে সবদিক থেকে। আমি আমার তূণে ভরে নিলাম তীর। কটিদেশে ঝুলিয়ে নিলাম তলোয়ার। তারপর নিঃশঙ্কচিত্তে শত্রুশিবিরের দিকে রওয়ানা দিলাম। মনে হচ্ছিল, আমি যেনো নিরুদ্বিগ্ন মনে যাচ্ছি আমার কোনো নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে। একসময় আমি মিশে গেলাম শত্রুসেনাদের সঙ্গে। তখনো চলছে উথাল পাথার ঝড়। ফলে তাদের তখন বেহাল অবস্থা। তাঁবু, আসবাবপত্র, আহারের আয়োজন সবকিছু ল-ভ-। ছুটন্ত ঘোড়াগুলোকে বেদম প্রহার করে বাগে আনতে চেষ্টা করছিলো কেউ কেউ। একস্থানে দেখলাম, হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এক বিক্ষিপ্ত অগ্নিকু-ের পাশে বসে আগুন তাপাচ্ছেন। মনে হলো, এই মুহুর্তে একটি তীর নিক্ষেপ করে মিটিয়ে দেই উনার যুদ্ধের সাধ। কিন্তু এই ভেবে সংযত হলাম যে, আমি কেবল শত্রুদের অভ্যন্তরীণ গতিবিধি সংগ্রহের নির্দেশপ্রাপ্ত। সকলের বেহাল অবস্থা দেখে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নড়ে চড়ে বসলেন। চিৎকার করে বলতে শুরু করলেন, হে কুরাইশ বাহিনী! ছুটাছুটি না করে প্রত্যেকেই তার সঙ্গীর হাত ধরে বসে থাকেন। যেনো আমাদের ভিতরে প্রতিপক্ষের কোনো গুপ্তচর ঢুকে না পড়তে পারে। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার পাশের একজনের হাত ধরে বসে পড়লাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? সে বললো, হায় আল্লাহ পাক! তুমি আমাকে চেনো না? আরে আমি তো অমুকের পুত্র অমুক। বুঝলাম, লোকটি হাওয়াযীন গোত্রের। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পুনরায় চিৎকার করে বললেন, হে কুরাইশ জনতা! আমরা তো এখানে চিরদিনের জন্য থাকতে আসিনি। আমাদের সাজ-সরঞ্জাম বাহন সবকিছু বিপর্যস্ত। বনী কুরায়জারা বিশ্বাসঘাতকতা করলো। প্রচ- ঝড়ে ও শীতে আমাদের অবস্থাও জুবুথুবু। তাই আমি বলি, এখান থেকে কেটে পড়াই উত্তম। বলেই গাত্রত্থান করলেন তিনি। তিনি উনার উটে আরোহন করে চলতে শুরু করলেন পবিত্র মদীনা শরীফ ছেড়ে। মুহুর্তের মধ্যে সকলে অনুসরণ করলো উনাকে। এই দৃশ্য দেখে গাতফান গোত্রের লোকেরাও হলো প্রস্থানোদ্যত। আমি ফিরে এলাম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে। দেখলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছলাত আদায়ে নিমগ্ন। নামায সমাপন করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার দিকে ফিরতেই আমি উনাকে খুলে বললাম আনুপার্বিক ঘটনা। সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়ে গেলো আমার আত্মীয়বাড়ি যাওয়ার মতো মনের অবস্থা। শীতও গায়ে লাগতে শুরু করলো আগের মতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলেন। নিশীথের বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝকঝক করে উঠলো উনার মুক্তাসদৃশ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল্লাহ মুবারক বা দাঁত মুবারক। আমাকে আদর করে তিনি ডেকে নিলেন একেবারে কাছে। ঢেকে দিলেন উনার শীতবস্ত্রের একাংশ দিয়ে। আমার বুকের উপরে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাত মুবারক (হাত মুবারক) রাখলেন। উনার নূরুল মাগফিরাত মুবারকে মধুর পরশ যে অবিস্মরণীয়। মনে নেই কখন যেনো আমি নিদ্রাভিভূত হয়ে পড়লাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ডাক মুবারক শুনে ভোরে জেগে উঠলাম। শুনতে পেলাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদর করে ডাকছেন, হে হযরত হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! উঠে পড়–ন। সুবহানাল্লাহ!
-মুহম্মদ নাজমুল হুদা ফরাজী
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আবয়াদ্ব ইবনে হাম্মাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিকদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (৪)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০০)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিক্বদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (১)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












