ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৩২)
, ২২ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১১ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ২৬ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
তাফসীরে মাযহারী কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ إسْحَاقَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ: وَحَدّثَنِيْ حَضْرَتْ عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ أَنّهُ حَدَّثَ عَنْ حَضْرَتْ ابْنِ عَبّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَدّثَنِي رَجُلٌ مِنْ بَنِيْ غِفَارٍ، قَالَ أَقْبَلْتُ أَنَا وَابْنُ عَمٍّ لِيْ حَتّى أَصْعَدْنَا فِي جَبَلٍ يُشْرِفُ بِنَا عَلَى بَدْرٍ وَنَحْنُ مُشْرِكَانِ نَنْتَظِرُ الْوَقْعَةَ عَلَى مَنْ تَكُونُ الدّبْرَةُ . فَنَنْتَهِبُ مَعَ مَنْ يَنْتَهِبُ. قَالَ فَبَيْنَا نَحْنُ فِيْ الْجَبَلِ إذْ دَنَتْ مِنّا سَحَابَةٌ فَسَمِعْنَا فِيْهَا حَمْحَمَةَ الْخَيْلِ فَسَمِعْتُ قَائِلًا يَقُوْلُ اَقْدِمْ حَيْزُومُ فَأَمَّا ابْنُ عَمِّيْ فَانْكَشَفَ قِنَاعُ قَلْبِهِ فَمَاتَ مَكَانَهُ وَأَمَّا أَنَا فَكِدْتُ أَهْلَكَ ثُمّ تَمَاسَكْتُ
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। নিশ্চয়ই তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বনূ গিফারের এক ব্যক্তি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “বদর জিহাদের দিন আমি ও আমার এক চাচাতো ভাই বদরের পার্শ্ববর্তী একটি পাহাড়ে উঠে বদর জিহাদের দৃশ্য দেখছিলাম যে, কারা পরাজিত হয় ও কারা বিজয় লাভ করেন। তখনো আমরা ছিলাম মুশরিক। আমরা লুটেরাদের সাথী হয়ে লুটতরাজ করার অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা পাহাড়ে থাকা অবস্থায় এক টুকরা মেঘ আমাদের কাছে এলো। আমরা সেই মেঘের মধ্যে ঘোড়ার ডাক শুনতে পেলাম। আর জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনলাম ‘আক্বদিম হাইজূম’! সামনে চলুন, সামনে চলুন। এ সময় (ভয়ে) আমার চাচাতো ভাইয়ের প্রাণরূহ ওই স্থানেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে মারা যায়। আমি মারা যাওয়ার উপক্রম হয়ে কোনো রকমে বেঁচে যাই।” (সীরত গ্রন্থসমূহ)
কিতাবে উল্লেখ আছে, “হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বনূ সাঈদা গোত্রের কয়েক জনের সূত্রে আমার কাছে হযরত আবূ উসাইদ মালিক ইবনে রবীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি উনার শেষ জীবনে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি বলতেন, আজ যদি আমার দৃষ্টিশক্তি থাকত এবং আমি যদি বদর ময়দানে থাকতাম, তাহলে আমি অবশ্যই আপনাদেরকে সেই গিরিপথটি দেখিয়ে দিতে পারতাম, যে গিরিপথটি দিয়ে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা জিহাদ করার জন্য নেমে এসেছিলেন। এখনও সে দৃশ্য মুবারক আমার চোখের সামনে ভাসে। এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশয় ও সন্দেহ নেই।” সুবহানাল্লাহ!
প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থসমূহে উল্লেখ আছে, হযরত আবূ দাউদ মাযিনী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। যিনি বদর জিহাদে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি বদর জিহাদের দিন এক মুশরিককে হত্যা করার জন্য তাকে ধাওয়া করলাম। হঠাৎ দেখলাম যে, আমার তরবারির আঘাত তার শরীরে লাগার আগেই তার মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে গেল। ফলে আমি স্পষ্টই বুঝতে পারলাম যে, আমি ছাড়া অন্য কেউ তাকে হত্যা করেছেন। অর্থাৎ হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তাকে হত্যা করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাত ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উনাফ, উয়ূনুল আছার ফি ফয়ূনিল মাগাযী)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ كَانَ الْمَلَكُ يَتَصَوّرُ فِيْ صُوْرَةٍ مَّنْ يَّعْرِفُوْنَ مِنَ النَّاسِ يُثَبِّتُوْنَهُمْ فَيَقُوْلُ إِنِّيْ قَدْ دَنَوْتُ مِنْهُمْ فَسَمِعْتُهُمْ يَقُوْلُوْنَ لَوْحَمَلُوْا عَلَيْنَا مَا ثَبَتْنَا، لَيْسُوْا بِشَيْءٍ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর জিহাদের দিন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কোন পরিচিত ব্যক্তির ছূরত (আকৃতি) ধারণ করে কারও সামনে হাযির হতেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ইস্তেকামত থাকার বা অবিচল থাকার সাহস যোগাতেন, উৎসাহ প্রদান করতেন। আর ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিকটবর্তী হতেন তখন উনারা বলতেন, আমরা মুশরিকদের কাছে গিয়েছিলাম। অতঃপর আমরা তাদের কাছে শুনলাম তারা বলাবলি করছে, মুসলমানরা যদি আমাদের উপর আক্রমণ করেন তাহলে আমরা টিকতে পারবো না। আর কুরাইশ মুশরিকরা আপনাদের কিছুই করতে পারবে না। এ ধরনের আরো উৎসাহ উদ্দীপনামূলক কথা-বার্তা, সুসংবাদ মুসলমানদেরকে শুনাতেন।” সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নবুওয়াহ, খাছায়িছুল কুবরা, মাগাযিউল ওয়াক্বীদি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল ইসলাম-ইমাম যাহাবী)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ وَأَيَّدَ اللهُ نَبِيَهُ وَالْمُؤْمِنِيْنَ بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ. فَكَانَ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِيْ خَمْسِمِائَةٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُجَنِّبَةً، وَحَضْرَتْ مِيْكَائِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِيْ خَمْسِمِائَةٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُجَنِّبَةً. وَهَذَا هُوَ الْمَشْهُوْرُ-
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে বদর জিহাদে একহাজার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা গায়েবী মদদ করেন। উনাদের মধ্যে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার নেতৃত্বে পাঁচশত ফেরেশতা একপার্শ্বে ছিলেন এবং হযরত মীকাঈল আলাইহিস সালাম উনার নেতৃত্বে পাঁচশত ফেরেশতা অন্য পার্শ্বে ছিলেন। এটাই প্রসিদ্ধ বর্ণনা।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, জিলদ-৩য়, পৃষ্ঠা-২৭৫ সীরাত ইবনে কাছীর)
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আবয়াদ্ব ইবনে হাম্মাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিকদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (৪)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০০)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিক্বদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (১)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












