ঐতিহাসিক সম্মানিত বদর জিহাদ (পর্ব-৩৯)
, ০৬ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) আইন ও জিহাদ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আবূ জেহেলকে হত্যা:
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
إِنْ تَسْتَفْتِحُوْا فَقَدْ جَاءَكُمُ الْفَتْحُ ۖ وَإِنْ تَنْتَهُوْا فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِنْ تَعُوْدُوْا نَعُدْ وَلَنْ تُغْنِيَ عَنْكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَّلَوْ كَثُرَتْ وَأَنَّ اللهَ مَعَ الْمُؤْمِنِيْنَ
অর্থ: “তোমরা যখন বিজয় চেয়েছিলে, নিশ্চয়ই বিজয় তো তোমাদের কাছে এসে গেছে, আর যদি তোমরা (অন্যায় হতে) বিরত হও, তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। যদি তোমরা পুনরায় (অন্যায়) করো তাহলে আমিও পুনরায় তোমাদেরকে শাস্তি দিবো এবং তোমাদের দল সংখ্যায় অধিক হলেও তা তোমাদের কোনো কাজে আসবে না। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদারদের সাথে রয়েছেন।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ১৯)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বদর জিহাদের দিন ময়দানে উপস্থিত হয়ে দেখলাম আমার দু’পাশের দু’জন সহযোদ্ধাই কিশোর ছাহাবী। আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম পূর্ণ যুবক অথবা বয়স্ক মুসলিম যোদ্ধা আমার পাশে যদি থাকতেন তাহলে কতই না উত্তম হতো! হঠাৎ ডান পাশের যিনি কিশোর ছাহাবী তিনি এগিয়ে এসে আমাকে বললেন, হে চাচাজান! আপনি কি আবূ জেহেলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু আপনি তার কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন? কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন- সেই আবূ জেহেল নাকি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে এবং উনাকে মন্দ বলে। নাউযুবিল্লাহ! উনারা উভয়ে পৃথকভাবে এসে আমাকে এ কথা বললেন। আমি আশ্চর্য হলাম! এমন সময় কাট্টা কাফির আবূ জেহেল সে আমাদের সম্মুখে এগিয়ে এলো। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি উনাদেরকে বললাম, হে ভাতিজাদ্বয়! সামনে দেখুন ওই লোকটি আবূ জেহেল। আমার কথা শোনা মাত্র উনারা দু’জনেই আবূ জেহেলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং অল্পক্ষণের মধ্যে তাকে ক্বতল করে ফেললেন। তারপর উনারা ছুটে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আবূ জেহেলের নিহত হওয়ার বিষয়টি জানালেন। সুবহানাল্লাহ! এই কিশোর ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের নাম মুবারক হযরত মুয়ায ও মুয়াওওয়ায বিন আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে আবূ জেহেলের যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধের পোশাক গনিমতের মাল হিসেবে দিয়েছিলেন। জিহাদের শেষে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তরবারি দ্বারা এই কাফির আবূ জেহেলের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট নিয়ে এসেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে মাযহারী)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বুখারী শরীফের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদেশ মুবারক করলেন, “আপনাদের মধ্যে কেউ একজন সংবাদ নিয়ে আসুন আবূ জেহেল এখন কোথায় এবং কি অবস্থায় আছে? ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবূ জেহেলের অনুসন্ধানে বের হলেন। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলেন, হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দুই সন্তান আবূ জেহেলকে ধরাশায়ী করে ফেলেছেন। কিন্তু গুরুতর আহত আবূ জেহেল তখনো মারা যায়নি। ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আবূ জেহেলের দাড়ি ধরে বললেন, কি ব্যাপার আবূ জেহেল! খুব তো অহংকার করেছিলে?
হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “মুসনাদ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “ফক্বীহুল উম্মত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, বদর জিহাদে তরবারির আঘাতে আবূ জেহেলের হাঁটু ভেঙ্গে গিয়েছিলো। ফলে ভূতলশায়ী হয়ে পড়েছিলো সে। তখন আবূ জেহেলের তরবারি দিয়েই আমি আবূ জেহেলকে হত্যা করে ফেলি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবূ জেহেলের ঐ তরবারিটি আমাকে হাদিয়া দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ্্!
তাফসীরে আরো উল্লেখ আছে, হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় এসেছে, হযরত মুয়া’য বিন আমর বিন জামুহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, “বদর জিহাদের শেষের দিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবূ জেহেলের লাশ অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ মুবারক দিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট শুকরিয়া আদায় করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আয় বারে ইলাহী! আপনার পাকড়াও থেকে কাট্টা কাফির আবূ জেহেল বাঁচতে পারেনি।” ইহা শুনে আমি খুঁজতে খুঁজতে আবূ জেহেলের নিকট পৌঁছলাম। (হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দুই সন্তান আবূ জেহেলকে ধরাশায়ী করে ফেলেছেন।) সে তখন মরণোন্মুখ। আমার তরবারির আঘাতে তার শরীর থেকে কেটে আলাদা হয়ে পড়লো পায়ের নিম্নাংশ। তখন আবূ জেহেলের পুত্র ছুটে এসে তরবারি চালাল আমার উপর। কেটে গেলো আমার বাহুমূল। কেবল চামড়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ঝুলতে থাকলো আমার হাতটি। ঐ ঝুলন্ত হাত নিয়েই আমি বীর বিক্রমে জিহাদ করলাম। একটি হাত দিয়েই করতে থাকলাম শত্রুর মুকাবিলা। ঝুলন্ত হাতটির কারণে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। তাই পায়ের নিচে চেপে ধরে একটানে শরীর থেকে আলাদা করে ফেললাম হাতটিকে। সুবহানাল্লাহ্!
হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় আরো এসেছে, “সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন হযরত মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। ক্বাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “উয়ূন” কিতাবে লিখেছেন, হযরত ইবনে ওয়াহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনায় বর্ণিত আছে, “জিহাদ শেষে হযরত মুয়ায বিন আমর বিন জামুহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার কর্তিত হাতটি নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত নূরুল বারাকাত মুবারক (মহাসম্মানিত থুথু মুবারক) দিয়ে হাতটি জোড়া লাগিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ্! (তাফসীরে মাযহারী, আশ শিফা শরীফ)
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আবয়াদ্ব ইবনে হাম্মাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিকদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (৪)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০০)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিক্বদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (১)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












