কেমন দেশ গাম্বিয়া?
, ১৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৮ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১৩ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পাঁচ মিশালী
পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট একটি দেশ গাম্বিয়া। রাষ্ট্রীয় নাম গাম্বিয়া ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এটি আফ্রিকা মহাদেশের মূল ভূখন্ডের ক্ষুদ্রতম দেশ। দেশটির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে সেনেগাল দ্বারা পরিবেষ্টিত। আর পশ্চিমে রয়েছে মহাসাগর। অথৈই নীল পানিরাশির আটলান্টিক মহাসাগর।
গাম্বিয়া নদী থেকেই দেশটির নামকরণ। নদীটি দেশের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। আর এই নদীকে কেন্দ্র করেই মূলত গাম্বিয়া। সাগর উপকূল থেকে মহাদেশের প্রায় ৩২০ কিলোমিটার অভ্যন্তর পর্যন্ত চলে গেছে। তবে এর সর্বোচ্চ প্রস্থ মাত্র ৫০ কিলোমিটার। বন্দর শহর বাঞ্জুল দেশটির রাজধানী। সেরেকুন্দা দেশের বৃহত্তম শহর।
১৯ শতকে গাম্বিয়া নদীর নিম্নাংশে গ্রেট ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণ ছিল। সেসময় সেনেগালের নিয়ন্ত্রণ ছিল ফ্রান্সের হাতে। ঔপনিবেশিক সমঝোতার কারণেই ২৭ লাখ জনসংখ্যার দেশ গাম্বিয়ার এই অদ্ভুত গড়ন।
১৯৬৫ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে গাম্বিয়া। পরে ১৯৮২ সালে সেনেগালের সঙ্গে একত্র হয়ে ‘সেনেগাম্বিয়া’ নামের একটি কনফেডারেশন হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৯ সালে সে কনফেডারেশন ভেঙে যায়।
১৯৯৪ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গাম্বিয়ায় ক্ষমতায় আসেন লেফটেন্যান্ট ইয়াহিয়া জামেহ্। তিনি ২২ বছর দেশ শাসন করেন। ২০১৫ সালে গাম্বিয়াকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।
দেশটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাম্মেহ রমাদ্বান শরীফে মাসটির পবিত্রতা রক্ষায় গাম্বিয়ায় নাচ-গান এবং ড্রামসহ সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষিদ্ধ করেছিলেন।
শিক্ষার ক্ষেত্রে গাম্বিয়া খুব এগিয়ে না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই শিশুদের দ্বীনী শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও আরবী ভাষা ও কুরআন শরীফ শিক্ষা দেয়া হয়।
জানা যায়, নবম ও দশম শতাব্দীতে গাম্বিয়া অঞ্চলে আরব ব্যবসায়ীদের আগমণ ঘটে। দশম শতাব্দীতে, মুসলিম বণিক এবং আলেমগণ পশ্চিম আফ্রিকায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। তারা ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্য রুট স্থাপন করেছিলেন, যার ফলে এ অঞ্চল থেকে সোনা ও হাতির দাঁত রফতানি করা হতো। পাশাপাশি বিভিন্ন তৈরি পণ্য আমদানি করা হত।
দেশটির অধিকাংশ মানুষ সুন্নী মুসলমান। তারা মূলত মালেকী মাযহাবের অনুসারী। তবে কিছু শিয়াও রয়েছে।
জনসংখ্যা:
আফ্রিকার অন্য দেশগুলোর তুলনায় আয়তনে অনেক ছোট গাম্বিয়ার মোট জনসংখ্যা ২৭ লাখ, যা বাংলাদেশের ১৬ ভাগের এক ভাগ মাত্র। দেশটির ৬১.৩ শতাংশ মানুষ শহরে এবং ৩৮.৭ শতাংশ গ্রামে বাস করে। শহুরে জীবন মূলত রাজধানী বানজুলকে কেন্দ্র করেই।
৯৬ শতাংশ সুন্নি মুসলিম জনসংখ্যার দেশটিতে খ্রিস্টান ৩.৮ শতাংশ ও অন্যান্যদের সংখ্যা ০.২ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ও শিশু মৃত্যুর হার পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে গাম্বিয়াতেই সর্বোচ্চ। গাম্বিয়ায় স্বাক্ষরতার হারে পুরুষ ৬৩.৯ শতাংশ এবং নারী ৪৭.৬ শতাংশ।
সরকার ব্যবস্থা:
বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশ গাম্বিয়া। ১৯৯৬ সালে সংবিধানের সংশোধনী অনুযায়ী প্রেসিডেন্টই রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান।
অর্থনীতি:
গাম্বিয়া একটি কৃষিপ্রধান দেশ। গাম্বিয়ান কৃষিকে বলা যায়- একটি ক্লাসিক মনোকালচার ধরনের, অর্থাৎ একটা সময়ে এক ধরনের শস্যই চাষাবাদ করা হয়। বেশিরভাগ কৃষি জমিই গ্রামবাসীদের হাতে।
চীনাবাদাম এখানকার প্রধান উৎপাদিত শস্য এবং প্রধান রপ্তানি দ্রব্য। পর্যটন শিল্প থেকেও আয় হয়। আটলান্টিক সাগরের উপকূলের সমুদ্রসৈকতগুলিতে ঘুরতে এবং গাম্বিয়া নদীর বিচিত্র পাখপাখালি দেখতে পর্যটকেরা দেশটিতে আসেন। গাম্বিয়াকে শুধু পাখির দেশ বললেও ভুল হবে না।
শ্রমের ক্ষেত্রে বিভাজন রয়েছে, যেমন- পুরুষরা অর্থকরী ফসল রোপণ, চাষাবাদ ও সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত। আর নারীরা কাসাভা (ম্যানিক), ইয়াম, বেগুন, টমেটো, চাল এবং মসুরের মতো ফসল চাষ করে। নারীদের চাষাবাদের লক্ষ্য থাকে নিজেদের উৎপাদিত ফসল খেয়ে-পড়ে বাঁচা, বিক্রি ও লাভ সেখানে মুখ্য বিষয় নয়। দেশটির বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র।
দেশটির রপ্তানি পণ্য বাদাম, মাছ, পাম কার্নেল ও তুলা। আর খাদ্য, যন্ত্রপাতি, পরিবহন সরঞ্জাম, উৎপাদিত পণ্য, জ্বালানী তাদের আমদানি পণ্য।
গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেষত পশ্চিম আফ্রিকান এবং ইসলামিক বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। যদিও বিদেশে দেশটির সীমাবদ্ধ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এর আগে লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধের সমাধানে গাম্বিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গেল নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে গাম্বিয়া। মূলত এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারো দেশটির প্রসঙ্গ চলে আসে। ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডের দ্য হেগ শহরে চলছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম।
ছবি
গাম্বিয়া: যার মানচিত্র নদীর মতো
নদী ধরে শহর-নগর গড়ে ওঠা স্বাভাবিক এক ঘটনা, কিন্তু একটি নদী ধরে একটি দেশের মানচিত্র বিরল এক ঘটনা, আর সেই ঘটনাটিই ঘটেছে গাম্বিয়ার ক্ষেত্রে।
রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য গাম্বিয়া দেশটির নাম এখন বাংলাদেশে অনেকটাই জানা, তবে দেশটি সম্পর্কে জানতে গেলে সবার আগে চোখে পড়বে এর অদ্ভুত মানচিত্র।
উত্তর আটলান্টিকের পাড়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সেনেগালের ঠিক পেটের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে একটি নদী, যার দুই তীরে মাত্র ১১ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি আলাদা মানচিত্র, রিপাবলিক অব গাম্বিয়া।
দেশটির রাজধানী বানজুলের অবস্থান একেবারে পশ্চিমে, যেখান থেকে মূল গাম্বিয়া নদীর শুরু হয়েছে।
পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান এই নদীটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ১ হাজার ১২০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সেনেগালের প্রাচীর ভেদ করে পাশের দেশ গিনিতে পৌঁছে হারিয়ে গেছে। তবে নদীর সঙ্গে এঁকেবেঁকে কিছুদূর গিয়ে সীমানা প্রাচীর উঠেছে এক সময় সেনেগালের সঙ্গে থাকা গাম্বিয়ার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
১৩ বছরের অপেক্ষার পর দেখা মিললো বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ফুলের
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্তানের উচ্চতা স্বাভাবিকভাবে বাড়বে যে ৩ ফলের রসে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শুক্র গ্রহে একদিন পৃথিবীর এক বছরের চেয়েও দীর্ঘ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে মস্তিষ্ক -গবেষণা
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাম দিয়েই জমির মালিকানা যাচাই করবেন যেভাবে?
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হারিয়ে যাওয়া সুপারনোভার সন্ধান, পথ দেখালো ইসলামের স্বর্ণযুগের আরবি কবিতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোন বাদামের কেমন পুষ্টিগুণ, খাবেনই-বা কতটুকু?
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পৃথিবীতে প্রাণের প্রাচীনতম নিদর্শন আবিষ্কার!
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইসবগুলের ভুসি কতটা কার্যকর?
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাকাশে এক নীরব সহযাত্রী পেলো পৃথিবী, উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাওয়ার পর খোসা ফেলে দিচ্ছেন? ৪টি ফলের ক্ষেত্রে এই ভুল করবেন না
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মঙ্গল গ্রহে মিললো রহস্যময় পাথর
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












