ফতওয়া
খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৩)
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
এডমিন, ১৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২০ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

লম্বা বা কিস্তি টুপি: শরীয়তের দৃষ্টিতে লম্বা বা কিস্তি টুপি পরিধান করা হারাম। কারণ লম্বা টুপি কাফের, বেদ্বীন ও হিন্দু মারওয়ারীদের খাছ টুপি। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুফাস্সির তাজুল মুফাস্সিরীন, ইমাম ক্বাজী বায়জাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ তাফসীরে বায়জাবীর মধ্যে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার এ আয়াত শরীফ
(اِنَ الْذِيْنَ كَفَرُوْا سَوَاءُ عَلَيْهِمْ)-এর তাফসীরে উল্লেখ করেন,
لُبْسَ الْغَيَارِ وَشَدَ الْزِنَارِ وَنَحْوَهُمَا كَفَرَا.
অর্থ: “গিয়ার বা লম্বা টুপি পরিধান করা ও পৌতা বাধা এবং এতদুভয়ের অনুরূপ পোশাক পরিধান করা কুফরী।” (তাফসীরে বায়জাবী পৃষ্ঠা-২৩)
উল্লেখ্য, অন্যান্য কিতাবে গিয়ার (الغيار) শব্দের বিস্তারিত ব্যখ্যা ও আহ্কাম বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন তাফসীরে বায়জাবীর বিখ্যাত শরাহ্ “হাশিয়ায়ে মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ্ ১ম জিঃ ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
الغيار .............. هو قلئسوة طويلة كانت تليس فى ابتداء الاسلام وهى الان من شعار اهل الكفر مختصة بهم كالز نار المختصة بالنصرى.
অর্থ: “গিয়ার, তা হলো- লম্বা টুপি, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহার করা হতো এবং তা বর্তমানে কাফেরদের খাছ শেয়ার বা আলামত। যেরূপ নাছারাদের খাছ আলামত হচ্ছে- টাই।”
অনুরূপ হাশিয়াতুল শিহাব আল মুসাম্মাহ্ ইনায়াতুল ক্বাজী ওয়া কিফাইয়াত্তুর রাজী আলা তাফসীরিল বায়জাবী ১ম জিঃ ২৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
الغيار- قلنسوة طويلة كانت تلبس قبل الاسلام وهى من شعار الكفرة.
অর্থ: “গিয়ার হচ্ছে- লম্বা টুপি, যা ইসলাম পূর্ব যুগে ব্যবহার করা হতো। আর তা কাফেরদেরই শেয়ার বা আলামত।” অনুরূপ তাক্রীরুল হাবী ফী হল্লে বায়জাবী ২য় জিঃ ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
আর এ প্রসঙ্গে তাজুল মুফাস্সিরীন, মুফতিয়্যুল আ’যম, শায়খুল মিল্লাতে ওয়াদ্দীন, হযরতুল আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রণীত- বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আমীনিয়াতে” উল্লেখ করেন, “কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারিদের (হিন্দুদের) পোশাক ..........।”
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “আল মুর্শিদুল আমীন” কিতাবে লিখেন, ইবলীস যখন হযরত মুসা আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন ইবলীসের মাথায় লম্বা টুপি ছিল। লম্বা বা কিস্তি টুপি হিন্দুদের মাঝে বিস্তার লাভ করার বা লম্বা টুপির উৎপত্তি সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, বাদশা আকবরের সময় যখন হিন্দুরা তার দরবারে আসা-যাওয়া করতো, তখন তারা সাধারণতঃ ধুতি, পৈতা ও টিকলী পরিধান করেই আসতো। বাদশা দেখলো এরূপ পোশাকহীন বা উলঙ্গ অবস্থায় বাদশাহন দরবারে প্রবেশ করা বাদশাহর শানের খেলাফ। তাই বাদশাহ্ তাদেরকে পোশাক পরিধান করে আসার নির্দেশ দেয় এবং মুসলমানদের খেলাফ পোশাক ব্যবহার করতে বলে। হিন্দুরা তখন কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী, ধুতি ও লম্বা টুপি পরিধান করতে লাগলো। মুসলমানরা যেহেতু গোল টুপি ব্যবহার করতো সেহেতু তারা লম্বা টুপিকে গ্রহণ করলো, আর কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করার কারণ দু’টি- (১) মুসলমনদের কোর্তা গোল বিধায়, তারা কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে, যেন মুসলমানদের সাথে মিল না হয়। (২) তারা যেহেতু ধুতি পরিধান করে, আর ধুতির লেজকে পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে রাখে, তাই পাঞ্জাবীর কোনা যদি ফাড়া না হয় তবে ধুতির লেজ পকেটে ঢুকানো হলে পাঞ্জাবী উঠে থাকে তাই তারা কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী ব্যবহার করে। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, লম্বা বা কিস্তি টুপি ও কোনা ফাড়া পাঞ্জাবী হিন্দুদেরই পোশাক এবং তারাই এর উৎপত্তিকারক।