গাছিদের ২০০ বছরের পেশা
, ০৫ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পাঁচ মিশালী
গাছি এই অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন পেশা। শীত এলেই তাদের কদর বাড়ে। খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুত করতে অগ্রহায়ণেই দম ফেলার সময় থাকে না গাছিদের। গাছের ছাল-বাকল তুলে গাছি হাঁড়ি বাঁধার ব্যবস্থা করেন। শীতের আমেজ যতই গাঢ় হয়, গাছিদের মাটির হাঁড়ি তত কম সময়েই ভরে ওঠে খেজুরের রসে।
শীতের সকালে এই খেজুরের রসের স্বাদ নিতে চায় বাঙালি। তাছাড়া এই মৌসুম যেন অনেকটা পিঠাপুলির উৎসব। বাংলার ঘরে ঘরে এই সময় তৈরি হয় নানা রকম পিঠা। সেই পিঠার অন্যতম উপাদান খেজুর রসের লালি (হালকা জ্বালানো রস) ও গুড়। এ ছাড়া খেজুর গুড়ের তৈরি রসগোল্লা, পায়েস, মোয়া ও সন্দেশ যেন অন্যরকম তৃপ্তি এনে দেয়।
তিন মাসের প্রক্রিয়া:
সারাদেশেই এখন খেজুর গাছ কমে গেছে। তারপরও তুলনামূলকভাবে যশোরে খেজুর গাছের সংখ্যা বেশ ভালো। খেজুর রসের স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি শীতে গাছিদের পুরো কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে জানতে যশোরের অভয়নগরে যেতে হবে। সেখানকার গাছিরা অধিকাংশই ৪০/৪৫ বছর ধরেই খেজুর রসের কারবার করছে।
গাছি আব্দুর রউফ জানান, অগ্রহায়ণের শুরুতে খেজুরের গাছ তোলা হয়। মানে হলো, গাছের মাথার দিকের এক পাশের ছাল-বাকল তুলে ফেলা হয়। এরপর কয়েক দিনে ছাল তোলা অংশটি শুকায়। অগ্রহায়ণের শেষে খেজুরগাছের ছাল তোলা অংশ চেঁছে ওপরের দিকে দু’টি চোখ কাটা হয়। তারপর ছাঁটা যে অংশে রস নিঃসরণ হয় সে অংশে ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা চিকন বাঁশের কঞ্চির আধা ইঞ্চি ঢুকিয়ে দিতে হয়। সর্বশেষ কাঠির মধ্যে দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় নির্গত রস গাছে ঝুলানো ছোট-বড় হাঁড়িতে সংগ্রহ করা হয়।
পৌষ-মাঘ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) এ দু’মাসেই সাধারণত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। গাছি জলিল আহমেদ জানান, গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তী সময়ে ৩ দিন শুকাতে হয়। এরপর আবার হালকা ছেঁটে পুনরায় রস সংগ্রহ করা যায়। একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে ৫ লিটার রস পাওয়া যায়। বর্তমানে এক লিটার রস বিক্রি করে গাছিরা গড়ে সর্বনিম্ন দাম পান ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
দুইশ বছরের ইতিহাস:
খেজুর রসের কারবার এ অঞ্চলের মানুষের অন্তত দুইশ বছরের প্রাচীন, তা বেশ কিছু বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। দ্য ডেট সুগার ইন্ডাস্ট্রি অব ইন্ডিয়া বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো খেজুরের গুড় ব্রিটেনে পাঠানো হয়। এই গুড়ের চাহিদা পশ্চিমা দেশগুলোতে বেশ রমরমা ছিল। ঐতিহাসিকদের যশোহর-খুলনার ইতিহাস বইতে পাওয়া যায়, ১৯০০-০১ সালে পূর্ববঙ্গে খেজুরের গুড় তৈরি হয়েছে প্রায় ২২ লাখ মণ, যা প্রায় ৮২ হাজার টনের সমান।
১৯৪০-এর দশকের প্রথম দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার হাওড়া, মেদিনীপুর এবং বাংলাদেশের ফরিদপুরে এ শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটে। তৎকালীন সময়ে প্রতিবছর মোট ১,০০,০০০ টন গুড় উৎপাদিত হতো। সেই সময়ে, ১ বিঘা জমিতে ১০০টি গাছ লাগানো হতো। সাত বছরের মধ্যে গাছগুলি ফল ও রস সংগ্রহের উপযোগী হতো এবং ত্রিশ/চল্লিশ বছর পর্যন্ত চলত ফল ও রস সংগ্রহ। এরপর আর ওভাবে খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ দেখা যায়নি। মূলত জমিতে খেজুর গাছ লাগালে আয় মাত্র তিন মাস, কিন্তু অন্য ফসল থাকে বারো মাস। এ জন্যই গাছের পাশাপাশি গাছিদের সংখ্যাও কমছে। কমছে খেজুর রসের উৎপাদনও।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে গেল বিশাল গ্রহাণু!
২০ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণী পরিচিতি : কুমির
১৯ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
২০৫০ সালের মধ্যে পুরোপুরি ব্রডগেজে যাবে রেল
১৯ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
২০৫০ সালের মধ্যে পুরোপুরি ব্রডগেজে যাবে রেল
১৯ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রোটিন সমৃদ্ধ চাল কি শরীরে মাছ গোশতের চাহিদা মেটাতে পারবে?
১৮ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অ্যান্টিবায়োটিক খেলে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে
১৭ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
কিভাবে একদিন বিদ্যুতের উৎস হয়ে উঠতে পারে ভেজা বাতাস
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সূর্যের চেয়ে ৩৩ গুণ ভারি কালোগহ্বর আবিস্কৃত
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাঁতের পাথর দূর করবেন যেভাবে
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
৫ মিনিটেই পরিষ্কার হবে রান্নাঘরের টাইলস
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কোন দেশে কি নিষিদ্ধ জানেন?
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট নদী, পার হতে লাগে ৫ মিনিট
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)