দারসবাড়ি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বাধীন বাংলার সুলতানী আমলে নির্মিত দেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় - একসময় বিশ্ববিদ্যালয়টি ছিলো সুশিক্ষিত আধুনিক মুসলিম সভ্যতার সূতিকাগার। - ছিলো প্রথম সিহাহ সিত্তাহর সমন্বিত পাঠক্রমের সূচনা স্থান - অস্তিত্ব হুমকির মুখে ঐতিহাসিক দ্বীনি স্থাপনাটি, রক্ষার্থে নেই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।
, ২০ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৬ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৫ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ৩১ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পাঁচ মিশালী
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ছোট সোনামসজিদ ও কোতোয়ালি দরজার মধ্যবর্তী স্থানে ওমরপুরের সন্নিকটে অবস্থিত বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যকীর্তির উল্লেখযোগ্য হলো দারসবাড়ি মাদরাসা, মসজিদ। মহানন্দা নদীর তীর ঘেঁষে ৩ কিলোমিটার দূরে বিজিবির সীমান্ত তল্লাশি চৌকি পেরিয়ে আরো কিছুদূর হেঁটে আমবাগানের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হলেই দারসবাড়ি মাদরাসা, মসজিদ।
আরবি দরস বা দারস অর্থ পাঠ, উচ্চারণ বিকৃতিতে শব্দটি হয়ে যায় দারাসবাড়ি বা দারসবাড়ি মসজিদ, মাদরাসা। স্বাধীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহের রাজত্বকালে ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ১লা রমাদ্বান সুলতানের আদেশে অখ- বাংলার আদি রাজধানী গৌড়ের ফিরোজপুরের দারসবাড়িতে একটি সুবিশাল আবাসিক মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদরাসাটি পাঠক্রম ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় ছিলো একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় তুল্য। বাংলাদেশে সন্ধানপ্রাপ্ত সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হলো এই দারসবাড়ি।
বিভিন্ন জনপদ থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত হতেন। এখানেই প্রথম সিহাহ সিত্তাহর সমন্বিত পাঠক্রমের সূচনা হয়। এখানেই মুহম্মদ বিন ইয়াজদান বখশ নামের একজন বুযূর্গ আলিম নিজ হাতে বুখারী শরীফ লিপিবদ্ধ করেন এবং তিনিই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন।
যদিও ঢাকার সোনারগাঁওয়ে শায়খ শারফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (মৃত্যু ৭০০ হিজরী ১৩০০ খ্রিস্টাব্দ) প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হাদীছ শরীফের আনুষ্ঠানিক পাঠদান শুরু করেন। দীর্ঘদিন দারসবাড়িতে মসজিদ, মাদরাসা জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় পড়ে ছিলো। ছিলো চারপাশ গাছগাছালি ঘেরা, পরিত্যক্ত ভূতুড়ে জনপদ। সত্তরের দশকের প্রথম ভাগে খনন কাজের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় দারসবাড়ি মাদরাসা, মসজিদ।
মূলত এলাকাটি ছিলো একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লেক্স। সুপ্রাচীন এই ইসলামী স্থাপত্য নিদর্শনটি ছিলো বর্গাকৃতির। সবগুলো বাহুর দৈর্ঘ্য ৫১.৫২ মিটার। কমপ্লেক্সের মাঝামাঝি অংশে ৩৭.৫ মিটার পরিমাপের বর্গাকার চত্বরের পশ্চিম বাহু ছাড়া অপর তিন বাহুতে এক সারি করে প্রকোষ্ঠ এবং তিন বাহুর মধ্যবর্তীতে ছিলো তিনটি নামাজের জায়গা বা ইমামের কক্ষ। তিনটি কক্ষেই রয়েছে আলাদা আলাদা তিনটি অবতল মেহরাব।
স্থাপনাগুলোর দেওয়াল পোড়ামাটির ফলক ও নকশায় অলংকৃত। দারসবাড়ি কমপ্লেক্সে আরো ৩৭টি কক্ষ ছিলো। ছিলো ওয়াক্তিয়া মসজিদ একটি, অফিস একটি। ছিলো তিনটি প্রবেশপথ। বাহ্যিকভাবে দারসবাড়ি ইসলামী কমপ্লেক্স বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষ সংখ্যা ৪০টি হওয়ার কারণে, দারসবাড়িকে চল্লিশ ঘর বা চল্লিশ বাড়িও বলা হতো।
দারসবাড়ি মসজিদের কাঠামো এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও ধসে গেছে ছাদ, গম্বুজ ইত্যাদি। নেই নামাজ আদায়ের পরিবেশ। ভগ্ন দেওয়াল ও ভূগর্ভস্থ ভীত প্রমাণ করছে, একদা এ অঞ্চলে ছিলো সুশিক্ষিত আধুনিক মুসলিম সভ্যতার সূতিকাগার। ভূ-কম্পন, অন্য কোনো কারণে হারিয়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব।
পরিশেষে বলতে হয়, শহীদ-গাজী, দরবেশ, বিজেতা, ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্বের আগমনে সম্মানিত ইসলাম বাংলাদেশের গ্রাম ও বিজন প্রান্তরে ছড়িয়ে গেছে। তারা ঘুমিয়ে আছেন এ দেশেরই মাটিতে। এমনি বাস্তবতার সাক্ষী দারসবাড়ি। বর্তমানে বিধ্বস্ত, প্রায় বিলুপ্ত।
কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত শিলালিপি মোতাবেক মসজিদটি ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে শামসুদ্দিন আবুল মুজাফফর ইউসুফ শাহ্ নির্মাণ করান। আমরা কি পারি না, পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের দারসবাড়ির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিচাপা ধ্বংসাবশেষের ওপর দাঁড় করাতে নতুন আরেক দারসবাড়ি মসজিদ, মাদরাসা।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবারও নতুন জীবন পেতে পারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব। শিবগঞ্জের দারসবাড়িতে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আফ্রিকা ভেঙে সৃষ্টি হচ্ছে এক নতুন মহাসাগর
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মৌমাছির বিষে এক ঘণ্টায় ধ্বংস স্তন ক্যানসার কোষ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
১৩ বছরের অপেক্ষার পর দেখা মিললো বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ফুলের
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্তানের উচ্চতা স্বাভাবিকভাবে বাড়বে যে ৩ ফলের রসে
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
শুক্র গ্রহে একদিন পৃথিবীর এক বছরের চেয়েও দীর্ঘ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকলে নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে মস্তিষ্ক -গবেষণা
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নাম দিয়েই জমির মালিকানা যাচাই করবেন যেভাবে?
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হারিয়ে যাওয়া সুপারনোভার সন্ধান, পথ দেখালো ইসলামের স্বর্ণযুগের আরবি কবিতা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কোন বাদামের কেমন পুষ্টিগুণ, খাবেনই-বা কতটুকু?
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পৃথিবীতে প্রাণের প্রাচীনতম নিদর্শন আবিষ্কার!
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইসবগুলের ভুসি কতটা কার্যকর?
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মহাকাশে এক নীরব সহযাত্রী পেলো পৃথিবী, উদ্বিগ্ন বিজ্ঞানীরা
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












