আল ইহসান ডেস্ক:

১৩৫০/৫১ সালের ২০ জিলহজ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) দুপুরের (এপ্রিল, ১৯৩২ সাল) এক বিশেষ কারামতের ঘটনা। দুজন বিশিষ্ট হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের মাজার শরীফ খোলা হয় এক স্বপ্নের ইশারায়। ২০ জিলহজ মাজার শরীফদ্বয় মুবারক খোলার পর দেখা যায়, দুই হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের জিসিম (শরীর) মুবারক অক্ষত অবস্থায় বিদ্যমান। উনাদের জিসিম মুবারকের-কাফনে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, মনে হচ্ছিল যেন কিছুক্ষণ আগে যেন উনাদের দাফন মুবারক করা হয়েছে।

এইরকম একই ঘটনার অবতারনার হয়েছে খাগড়াছড়ির হাতিমুড়া এলাকায়। এলাকাবাসী তাকে ডাকতেন কামাল শিকদার ভাই হিসেবে। তবে আরেকটা বিশেষ পরিচয় তার ছিলো। তা হলো তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ হক্ব দরবার রাজারবাগ দরবার শরীফের খাস মুরিদ ছিলেন। তবে এক্ষেত্রেও মরহুম কামাল শিকদার ভাইয়ের অনন্যতা ছিলো। তিনি সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বতে মাতোয়ারা ছিলেন। জানা যায় রাজারবাগ শরীফ বিরোধী কিছু দুষ্ট লোক তাকে রাজারবাগ শরীফ ছাড়ার জন্য রাজারবাগ শরীফ উনার বিরুদ্ধে বলার জন্য অকল্পনীয় এবং নির্মম নিষ্ঠুর প্রহার করে। স্বজনদের ধারনা এই নিষ্ঠুর প্রহারের কারনেই তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বতে শহীদ হন। ঘটনাটি শ্রবনে সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম কামাল শিকদারের প্রতি একান্ত দয়াদ্র হন। সুবহানাল্লাহ!

তার বিষয়ে রূহানী নেক দৃষ্টি দেন। তখন সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে মহা সম্মানের সাথে ও বিনয়ের সাথে জানানো হলো- মহান সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বতের পরিক্ষায় গড়ক হয়ে বিছাল লাভ করার কারনে তাকে অনন্য মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, শাহদাতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এবং তার কবরকে ফেরশতাদের ইবাদতগার বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, আজ থেকে সাড়ে ৫ বছর আগে মরহুম কামাল শিকদার ভাইয়ের ইন্তেকালের পর সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এই মুবারক ক্বওল শরীফ পেশ করেছিলেন। আর তখন থেকে সাড়ে ৫ বছর পর এখন মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ক্বওল শরীফ জনসম্মুখে প্রকাশিত ও প্রমাণিত হয়ে উঠলো।

উনার ইন্তিকালের পর উনাকে উনার বাড়ী খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা থানার গুইমারা-মানিকছড়ি মহাসড়কের পাশে পাহাড়ী ঢালু জমিতে দাফন করা হয়। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর পর চলমান সপ্তাহে অতি বৃষ্টি হওয়ার কারণে কবরটি ভেঙ্গে মাটি সরে যায় গত ২৬/০১/১৪৪৫ হিজরী ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম তথা সোমবার। মাটি সরে যাওয়ার পর মরহুম সূফী মুহম্মদ কামাল শিকদার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকাবাসী প্রত্যক্ষ করেন মরহুম সূফী মুহম্মদ কামাল শিকদার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাফন মুবারক পচে যাওয়া তো দূরের কথা কাফনের কাপড়ে বিন্বদুমাত্র ময়লা লাগেনি। নতুন অবস্থায় যেমন ছিলো তেমনই আছেন। এমনকি মাথায় লাগানো সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ উনার ফিতাটাও পচে যাওয়া তো দূরের কথা পুরোনো পর্যন্ত হয়নি। অত:পর মুখ উন্মোচন করে দেখা যায় যে উনার মুখমন্ডল অক্ষত অবস্থায় রয়েছে এবং সজীব , সতেজ, সুন্দও, নূরে ঝলমল করছে।

এ সংবাদ মুজাদ্দিদে আযম হযরত সুলত্বানিন নাসির আলাইহিস সালাম উনাকে জানানো হলে তিনি বলেন, ঠিকই আছে। এলাকাবাসীকে দেখার সুযোগ দাও। অত:পর গত মঙ্গলবার সারাদিন গুইমারা, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গা থানার হাজার হাজার লোক মরহূম সূফী মুহম¥দ কামাল শিকদার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নূরানী লাশ মুবারক উনার দর্শন গ্রহণ করেন এবং প্রত্যেকেই সুবহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর পাঠ করেন। প্রত্যক্ষদর্শী মুহম¥দ শহীদুল ইসলাম তিনি জানান, নিশ্চয়ই তিনি মুজাদ্দিদে আযম রাজারবাগ শরীফ উনার মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বতে শহীদ হওয়ার কারেেণই আজ তিনি এই মর্যাদা লাভ করতে পেরেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী মুহম্মদ মঈনুল ইসলাম পারভেজ জানান, নিশ্চয়ই তিনি কোনো হক্ব পীরসাহেবের বাইয়াত ছিলেন, সকলেরই সেখানে যাওয়া দরকার। প্রত্যক্ষদর্শী মুহম্মদ আবু তাহের জানান, নিশ্চয়ই রাজারবাগ শরীফের মুরশিদ ক্বিবলার প্রতি উনার প্রগাড় মুহব্বত ছিলো। প্রত্যক্ষদর্শী মুহম্মদ খাইরুল ইসলাম জানান, এরকম ঘটনা আমি কখনো দেখিনি, শুধু মানুষের মুখেই শুনতাম। আজ তা বাস্তব দেখলাম। প্রত্যক্ষদর্শী মুহম্মদ দৌলত আলী জানান, কামাল শিকদার তিনি যে তলে তলে এতো উপরের মাকামে উঠে গেছেন আজ সেটা আমরা বুঝতে পারলাম। তারপর গত মঙ্গলবার বিকালে পুনরায় লাশটি মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, সাধারণভাবে সাধারন মৃতদেহকে কবর দেওয়ার ঠিক ২৪ ঘন্টা পরে মানুষের শরীরের ভিতরে এমন পোকার উৎপত্তি হয় যা মৃতদেহের পায়ু দ্বার দিয়ে বেরোতে থাকে। তৎসহ এমন দুর্গন্ধ ছড়ায় যা সহ্য করা অসম্ভব। আর ঐ দুর্গন্ধ পোকার সমগোত্রীয় পোকাদের আহবান করে।

দুর্গন্ধ পেয়ে সমস্ত পোকা, মাকড়, বিছে মানুষের মৃতদেহের দিকে যাত্রা শুরু করে আর সবাই মিলে মানুষের গোশত খাওয়া শুরু করে দেয়।

কবরস্থ করার তিনদিন পরে সবচেয়ে প্রথমে নাকের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে এবং পচন ধরে যায়।

ছয় দিন পরে নখ খসে পড়তে থাকে। নয় দিন পরে চুল খসে পড়া শুরু হয়।

মানুষের শরীরের সমস্ত লোম ঝরে পড়ে আর পেট ফোলা শুরু হয়ে যায়, ১৭ দিন পরে পেট ফেটে যায় আর শরীরের ভিতরের সমস্ত অংশ বাহিরে বেরিয়ে আসে। যেমনটি হচ্ছে বাংলা ইহুদী খ্যাত এক উলামায়ে ছূ এর।

৬০ দিন পরে মৃতদেহের শরীরের সমস্ত মাংস শেষ হয়ে যায়। মানুষের শরীরে একটু টুকরো মাংস অবশিষ্ট থাকে না। ৯০ দিন পরে সমস্ত হাড় একে অপরের থেকে পৃথক হয়ে যায়।

এক বছর পরে মানুষের শরীরের সমস্ত হাড় মাটির সঙ্গে মিশে যায়। আর যে মানুষের মৃতদেহ কবরস্থ করা হয়েছিল তার সমস্ত অস্তিত্ব মুছে যায়।

কিন্তু মরহুম কামাল শিকদারের লাশের কিছুই হয়নি। উনার দাফনের কাপর অক্ষত আছে। বিশেষ করে রাজারবাগ দরবার শরীফের সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফের যে ব্যাজ মুবারক উনার মাথায় লাগানো ছিলো তা যেনো এখন জ্বল জ্বল করছে। সুবহানাল্লাহ!

জানা গেছে, কামাল শিকদার ভাই অতি পরিচিত কোন বিশেষ পীর ভাই ছিলেন না। খুব যে বেশি করতেন না। কিন্তু সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে তিনি অসাধারন মুহব্বত করতেন। সে মুহব্বতে শহীদ হওয়াতেই উনার লাশ এভাবে অক্ষত রয়েছে। ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম তার কবরকে ইবাদতগার বানিয়েছে। সুবাহানাল্লাহ!

ঘটনা অবলোকন করে স্থানীয় বাসিন্দারা বলাবলি করছেন সবারই উচিত রাজারবাগ শরীফ সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে খাসভাবে মুহব্বত করা। তাহলেই এমন বেমেছাল ফজিলত পাওয়া যাবে। ইনশাল্লাহ!