নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নাম মুবারকে নাম রাখার ফযীলত ও বরকত মুবারক (৪)
, ৩রা রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৯ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৮ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ১৩ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
কিতাবে উল্লেখ আছে-
ويكره ان يرمز للصلوة والسلام على النبى عليه الصلاة والسلام فى الخط بان يقتصر من ذالك على الحرفين هكذا (عم) او نحو ذالك كمن يكتب (صلعم) يشير به الى (صلى الله عليه وسلم) ويكره حذف واحد من الصلاة والتسليم والاقتصار على احدهما. وفى الحديث (من صلى على فى كتاب لم تزل صلاته جارية له ما دام اسمى فى ذالك الكتاب) كما فى انوار المشارق لمفتى حلب.
অর্থ : নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত ও সালাম লিখতে সংক্ষেপ করা মাকরূহ তাহরীমী। যেমন : সংক্ষেপে দু’টি অক্ষর (عم) লেখার মাধ্যমে এবং অনুরূপ صلى الله عليه وسلم বাক্যকে ইঙ্গিতে বুঝানোর জন্য (صلعم) সংক্ষেপে লেখা। ছলাত ও সালাম শব্দ দুখানার যেকোন একখানা হযফ করা বা বাদ দেয়া এবং যেকোন একখানা শব্দকে সংক্ষেপ করা মাকরূহ তাহরীমী। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, (যে ব্যক্তি আমার উপর পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ লিখবে সর্বদায় আমার নাম মুবারক উনার সাথে ওই লিখায় পূর্ণ দুরূদ শরীফ লিখবে)। অনুরূপ বর্ণনা ‘আনওয়ারুল মাশারিক লিমুফতী হল্ব’ কিতাবে উল্লেখ আছে।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরও উল্লেখ আছে- “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক উল্লেখ করার সময় পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়ার হুকুম রয়েছে। পবিত্র দুরূদ শরীফ উনার স্থলে শুধুমাত্র (ص) অথবা (عم) অথবা (صلعم) অথবা (صللم) বলা কখনই যথেষ্ট নয়। বরং উক্ত শব্দ একেবারেই অর্থহীন।
“তাতারখানিয়া” কিতাবে এ ব্যাপারে আরও কঠিন ফায়সালা বর্ণিত রয়েছে এবং সংক্ষিপ্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ লেখাকে “শানে নুবুওওয়াত” খাটো করার অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। “তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার”-এর ১ম খন্ডের, ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “(ص) অক্ষর দ্বারা পবিত্র দুরূদ শরীফ লেখা মাকরূহ বরং পরিপূর্ণভাবে পবিত্র দুরূদ শরীফ লিখবে। ” “তাতারখানিয়া” কিতাবে অন্যত্র উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি হামযাহ এবং মীম দ্বারা পবিত্র দুরূদ শরীফ লিখলো সে কুফরী করলো। কেননা এটা ইহানত বা অবজ্ঞা। আর হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে ইহানত বা অবজ্ঞা নিঃসন্দেহে কুফরী। ” (মজমূয়ায়ে রাসায়েল-১০)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত কা’ব ইবনে উজরাতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন আমাদেরকে পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার নিকটবর্তী হতে বললেন। আমরা সকলে পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার নিকটবর্তী হলাম। অতপর তিনি পবিত্র মিম্বর শরীফ উনার প্রথম ধাপে আরোহণ করেই বললেন, “আমীন। ” দ্বিতীয় ধাপে আরোহণ করেও বললেন, “আমীন। ” তৃতীয় ধাপে আরোহণ করেও বললেন, “আমীন। ” এরপর খুতবা মুবারক এবং নামায শেষে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পবিত্র মিম্বর শরীফ থেকে অবতরণ করলেন, তখন আমরা বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজকে আমরা আপনার মহাসম্মানিত যবান মুবারক থেকে এমন কিছু পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনলাম যা আমরা আর কখনো শুনিনি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, (আমি যখন পবিত্র মিম্বর শরীফ-উনার প্রথম সিড়িতে মহাসম্মানিত ক্বদম মুবারক রাখলাম) তখন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আসলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস পাওয়ার পরও নিজেদের গুনাহ-খতাগুলো ক্ষমা করাতে পালো না সে ব্যক্তি হালাক বা ধ্বংস। আমি বললাম আমীন। অতঃপর দ্বিতীয় সিড়িতে যখন মহাসম্মানিত ক্বদম মুবারক রাখলাম, হযরত জিবরীল আলাইহি সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তির সম্মুখে আপনার মহাসম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করা হলো অথচ সে আপনার প্রতি ‘ছলাত-সালাম’ পাঠ করলো না সে ব্যক্তি হালাক বা ধ্বংস। আমি বললাম, আমীন। অতঃপর যখন তৃতীয় সিড়িতে মহাসম্মানিত ক্বদম মুবারক রাখলাম, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পিতা-মাতা দুইজনকে অথবা একজনকে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা অবস্থায় পেয়েও তাদের খিদমত করে জান্নাত হাছিল করতে পারলো না সে ব্যক্তি হালাক বা ধ্বংস। আমি বলালাম, আমীন। (মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনার মহাসম্মানিত নাম মুবারক উচ্চারণ করে এবং শ্রবণ করে যারা উনার প্রতি ছলাত সালাম পাঠ করবে না তারা নিশ্চিত হালাক। অর্থাৎ জাহান্নামী। নাঊযুবিল্লাহ!
তাই যখন তখন যেথায় সেথায় উনার নাম মুবারক উচ্চারণ না করে লক্বব মুবারক দিয়ে সম্বোধন করাই আদব ও নাজাতের কারণ।
তাছাড়া হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যেহেতু মহাসম্মানিত তাই বিনা জরুরতে উনাদের নাম মুবারক উচ্চারণ না করাটাই আদব ও শরাফত। কারণ কোন অবাধ্য সন্তানও বিনা জরুরতে তার পিতার নাম যখন তখন যেখানে সেখানে উচ্চারণ করে না। কারণ এটা পিতার প্রতি সন্তানের তা’যীম বা সম্মান। যদি তাই হয়ে থাকে তবে উম্মত কি করে হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক বিনা জরুরতে উচ্চারণ করতে পারে? হ্যাঁ জরুরতে যদি উচ্চারণ করতেই হয় তবে অবশ্যই আদবের সাথে উচ্চারণ করতে হবে। অর্থাৎ নাম মুবারক-এর শুরুতে কমপক্ষে ‘হযরত’ আর শেষে ‘আলাইহিস সালাম’ যুক্ত করতে হবে। কেননা, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি আদব রক্ষা করা সকলের জন্যই ফরয।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রয়োজনে ছুরি এবং চাকু দিয়ে খাবার কেটে খাওয়াও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘পনির’
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০১)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত খাছ সুন্নতী বিছানা মুবারক উনার বর্ণনা
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












