পবিত্র মুনজিয়াত বা নেক গুণাবলীর বিবরণ
ইলমে তাছাওউফ:
এডমিন, ২৪ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১২ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জনৈক বুযুর্গ কবি বলেন-
خواہی کہ شوی منزل قرب مکین.
بنیک چیز نفس خویش را فرما تعلیم
অর্থ: “যদি তুমি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নৈকট্য মুবারক লাভ করতে চাও, তবে তোমার নফ্স্ বা অন্তরকে নেক খাছলতসমূহ দ্বারা তা’লীম দাও। ”
আর ওই সকল নেক খাছলত মুবারক হচ্ছে-
১। তওবা (গুনাহ থেকে প্রত্যাবর্তন), ২। ছবর (ধৈর্য), ৩। শোকর (কৃতজ্ঞতা), ৪। তাওয়াক্কুল (ভরসা), ৫। ইখলাছ (একনিষ্ঠতা), ৬। খওফ (ভয়), ৭। রিদ্বা (সন্তুষ্টি), ৮। মুহব্বত (মহব্বত), ৯। মুরাক্বাবা (চিন্তা-ভাবনা) ১০। মুহাসাবা (আমলের হিসাব), ১১। ইনাবত (রুজু হওয়া), ১২। যুহদ (বিরাগী হওয়া), ১৩। অরা’ (পরহেযগারী), ১৪। ক্বনায়াত (অল্পে তুষ্ট), ১৫। তাসলীম (আত্মসমর্পণ করা), ১৬। তাফাক্কুর (সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা), ১৭। শওক্ব (আগ্রহ), ১৮। তাওহীদ (একত্ববাদ), ১৯। নিয়ত (সঙ্কল্প), ২০। ছিদ্ক্ব (সত্যবাদিতা), ২১। ফক্বর (মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহতাজী গ্রহন করা এবং স্বেচ্ছায় দারিদ্র্যতা গ্রহণ করা), ২২। যিকরুল মউত (মৃত্যুর স্মরণ), ২৩। আহওয়ালে আখিরাত (পরকালের অবস্থা), ২৪। সাখাওয়াত (দানশীলতা), ২৫। তাওয়াদ্বু’ (বিনয় বা নম্রতা), ২৬। রিদ্বা (আশা), ২৭। মুজাহাদা (চেষ্টা বা কোশেশ) ২৮। মুশাহাদা (দেখা), ২৯। ইলিম (জ্ঞান), ৩০। ইস্তিক্বামাত (দৃঢ়তা), ৩১। হায়া (লজ্জা), ৩২। ক্বিল্লাতুত ত্বয়াম (কম খাওয়া), ৩৩। আদব (শিষ্টাচার), ৩৪। ইছার (অপরের হক্বকে প্রাধান্য দেয়া). ৩৫। হুররিয়াত (স্বাধীনতা), ৩৬। হুযূরী ক্বল্ব্ (সর্বদা আন্তরে যিকির জারি থাকা বা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে সবসময় হাযির নাযির জানা), ৩৭। খিদমাতুল ফুক্বারা (ওলী আল্লাহগণ উনাদের খিদমত), ৩৮। উজলত (নির্জনতা) ৩৯। তাফউয়ীজ (ভার অর্পণ বা দায়িত্ব দেয়া), ৪০। ইহসান (পরোপকার), ৪১। শুজায়াত (বাহাদুরী), ৪২। আহ্দ্ (ওয়াদা), ৪৩। ক্বিল্লাতুল কালাম (কম কথা বলা), ৪৪। ক্বিল্লাতুল মানাম (কম ঘুমানো), ৪৫। ক্বিল্লাতুল ইখলাত মাআল আনাম (মানুষের সাথে কম মেলামেশা করা) ইত্যাদি।
উদাহরণস্বরূপ পবিত্র ইখলাছ উনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দী বা সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করার জন্য পবিত্র ইবাদত বা আমল করার নাম হচ্ছে পবিত্র ইখলাছ। পবিত্র ইখলাছ অর্জন করা বা পবিত্র ইখলাছ উনার সাথে আমল করা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলাদের জন্য ফরয। এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا اُمِرُوْا اِلَّا لِيَعْبُدُوْا اللهَ مُـخْلِصِيْنَ لَهُ الدّيْنَ
অর্থ: “তাদেরকে (ঈমানদার) শুধু এ নির্দেশ মুবারকই দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন খালিছভাবে অর্থাৎ পবিত্র ইখলাছের সাথে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করে। ” (পবিত্র সূরা বাইয়্যিনাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ اُمَامَةَ الْبَاهِلِىّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ اِلَّا َما كَانَ لَهُ خَالِصًا وَّابْتُغِىَ بِه وَجْهُهُ.
অর্থ: “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ওই আমল কবুল করবেন না, যা ইখলাছের সাথে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জনের জন্য করা না হয়। ” (নাসায়ী শরীফ, দায়লামী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের আকৃতি ও ধন-সম্পদের প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং তোমাদের অন্তরের (ইখলাছের) দিকে লক্ষ্য করেন। ” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ, শরহে নববী শরীফ, মিরকাত শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَخْلِصْ دِيْنَكَ يِكْفِيْكَ الْعَمَلُ الْقَلِيْلُ
অর্থ: “ইখলাছের সাথে ইবাদত বা আমল করো। অল্প আমলই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। ” (তারগীব, ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন, ক্বিমিয়ায়ে সায়াদাত)
সুতরাং, ইখলাছবিহীন কোনো ইবাদত-বন্দেগীই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট কবুলযোগ্য নয়।