পেরুতে দ্বীন ইসলাম উনার ক্রমবর্ধমান বিকাশ

, ২২ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) বিদেশের খবর

পেরুতে দ্বীন ইসলাম আগমন কিভাবে হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভিন্নতা আছে। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, লাতিন আমেরিকায় এমন কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা দ্বারা প্রমাণিত হয়, কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের দাবি করলেও তার জন্মেরও চার’শ বছর আগে মুসলিমরা আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেছিলেন। আফ্রিকা ও স্পেনের মুসলিমরাই সর্বপ্রথম সেখানে পদার্পণ করেছিলেন, বিশেষ করে ১১০০ থেকে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমেরিকা মহাদেশে মুসলিম আগমনের একাধিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। সেখানে পশ্চিমা বিশ্বে ভৌগোলিক আবিষ্কারের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে।

পেরুতে ইসলামী নিদর্শনগুলোর ভেতর অন্যতম রাজধানী লিমায় অবস্থিত আন্দুলুসীয় স্থাপত্য রীতিতে গড়ে ওঠা ভবনগুলো। লিমার কোনো কোনো সড়কে হাঁটলে মনে হতে পারে আপনি স্পেনের কর্ডোভা বা সেভিলে হাঁটছেন। এ ছাড়া মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির নানা উপাদান এখনো পেরুর সমাজব্যবস্থায় দৃশ্যমান। যেমন-স্থাপত্যরীতি, নির্মাণশৈলী, পোশাক ও খাদ্যরীতি ইত্যাদি।

মুসলিম স্পেনের পতনের পর বিপুলসংখ্যক মুসলিমকে লাতিন আমেরিকায় নির্বাসন দেওয়া হয় এবং সেখানে তাদের দাসের জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়। তাদের মাধ্যমেই আমেরিকা মহাদেশের বেশির ভাগ দেশে দ্বীন ইসলামের সূচনা হয়। যদিও মুসলমানদের দ্বীনি স্বাধীনতা ছিলো না। ইসলাম পালনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল।

পেরুতে কঠোর ইসলামবিদ্বেষের নমুনা:

ঐতিহাসিকরা লেখেন, ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে পেরুর ঔপনিবেশিক স্প্যানিশ শাসক লোপে ডে লা পেনাকে দ্বীন ইসলাম পালন ও প্রচারের অপরাধে পেরুর কুজকো শহর থেকে আটক করে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়। তাকে মুর (উত্তর আফ্রিকার মুসলিম জনগোষ্ঠী) আখ্যা দেওয়া হয়।

শুধু তাই নয়, কারাবাসের পুরো সময় তার গলায় সানবেনিতো (অপরাধীদের জন্য অপমানজনক পোশাক) পড়তে বাধ্য করা হয়। তার মতোই ইসলাম প্রচারের অপরাধে কারাভোগ করতে হয় স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত জুয়ান সোলানো এবং একজন আফ্রিকান মুসলিম নারীকে। এছাড়া এই পেরুতেই লুইস সোলানোকে দ্বীন ইসলাম প্রচারের অপরাধে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, কঠোর ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব ও মুসলমানদের উপর চরম জুলুম-নির্যাতনের কারণে পেরুতে ধীরে ধীরে মুসলমানদের সংখ্যা কমতে থাকে।

পরবর্তীতে ফিলিস্তিনে পরগাছা ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে ঘরবাড়ি হারানো মুসলিমদের একটি চৌকস দল ১৯৪৮ সালে পেরুতে আগমন করেছিলো। ফলে দেশটিতে আবারও দ্বীন ইসলাম প্রচার-প্রসারের মাত্রা বৃদ্ধি হয়। যার ফলে পেরুর নাগরিকরা দ্বীন ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী হয় এবং মুসলমান হয়।

১৯৯৩ সালে পেরুর মুসলমানরা রাজধানীর ‘জেসাস মারিয়া’ জেলায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে আর্থিক সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়। ভিলা এল সালভাদর জেলায় প্রতিষ্ঠিত অপর একটি মসজিদও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পেরুতে আটটি মসজিদ আছে এবং বেশ কিছু নামায কক্ষ আছে। বাবে ইসলাম দেশটির সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ। পেরুর মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সংকট ইসলামী শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণের অভাব। তবে শত বাধার মধ্যেও পেরুতে ইসলাম একটি বিকাশমান। ধীরে ধীরে এখানে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে।

ট্যাগসমূহঃ