প্রসঙ্গ: ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ: পাঠ্যবইতে কি, আর প্রকৃত ইতিহাসটা কি?
, ৩০ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আইন ও জিহাদ
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে করা হয়েছে ছলচাতুরি ও ইতিহাস বিকৃতি। এখানে যুদ্ধের কোনো ঘটনা উল্লেখ না করে বরং কৌশলে মূল ইতিহাস আড়াল করে মিথ্যাচার করে ভারতপ্রেম ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ ঐ যুদ্ধে বাঙালি সেনাদের বীরবিক্রম তীব্র প্রতিরোধের মুখে হানাদার ভারতীয় সৈন্যদের আগ্রাসন স্তব্ধ হয়ে যায়।
আসুন জেনে নেই ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস:
১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে নির্দেশ করে ভারতকে সহায়তা করতে। কিন্তু আইয়ুব খান উল্টো চীনকে সমর্থন দেয়। এতে আইয়ুব খানের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় আমেরিকা। পরিকল্পনা করা হয় আইয়ুব খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’কে এই দায়িত্ব দেয়া হয়।
মার্কিন কু-পরিকল্পনা অনুযায়ী, আইয়ুব খতম হলেই প্রেসিডেন্টের গদিতে বসবে পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্নর কালাবাগের আমির মোহাম্মদ খান। ‘সিআইএ’ নেমে পড়ে আইয়ুব উৎখাতে- একটি সামরিক চাপ ও অপরটি রাজনৈতিক চাপের প্ল্যানের মাধ্যমে।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধই হচ্ছে ‘সিআইএ’র সেই সামরিক চাপ।
পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি অনুযায়ী ওই সময় পাকিস্তানের সমরনীতি পরিচালনার দায়িত্ব ছিলো মার্কিন সমর বিভাগের হাতে, সংক্ষেপে যাকে বলা হতো ‘ম্যাগ’।
ম্যাগের পরামর্শে ১৯৬৫ সালে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে সূচিত হয় পাক-ভারত সর্বাত্মক যুদ্ধ। ভারতীয় হানাদার সেনাবাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তান সেনাদের প্রচ- আঘাতের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং আখনুর ও জারিয়ান পাকিস্তান উদ্ধার করে ভারতীয় অপদখল থেকে। এরপর তারা স্থির করে জম্মু উদ্ধার করার।
ম্যাগ-এর পরামর্শ অনুযায়ী আইয়ুব খান তার সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশকে শ্রীনগরের দিকে ধাবিত হতে নির্দেশ করে জম্মু উদ্ধারের উদ্দেশ্যে। এমনকি লাহোরের দিক থেকে ভারতীয় হানাদারদের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণ মোকাবিলার জন্য এই অংশে প্রয়োজনীয় সেনা ইউনিটও রাখেননি আইয়ুব খান। ম্যাগ আইয়ুবকে পরামর্শ দিয়েছিলো যে, এই অংশে ভারত আক্রমণ করবে না।
এদিকে কুচক্রী ‘সিআইএ’ এবার তার শেষ চালটি চালে। দিল্লিকে নির্দেশ দেয় খেমকারান সেক্টর দিয়ে অরক্ষিত লাহোরে ঢুকে পড়তে এবং ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় পাক-ভারত সর্বাত্মক যুদ্ধ। ৫ আগস্ট শ্রীনগরকে সামনে রেখে সিআইএ যে ষড়যন্ত্র রচনা করে, ৬ সেপ্টেম্বর তার চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
ম্যাগ ও সিআইএর চক্রান্ত বুঝতে পেরে আইয়ুব খান ঐসময়ই ম্যাগকে অপসারণ করে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে তুলে নেন এবং শ্রীনগর অভিমুখী সেনা ইউনিটকে পেছনে মুখ ঘুরিয়ে খেমকারান সেক্টরে এসে ভারতীয় হানাদার বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। শ্রীনগর অভিমুখী সেনা ইউনিটের সর্বপশ্চাৎ ইউনিটটি ছিলো ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’।
যুদ্ধের ইতিহাসে খেমকারান সেক্টরে ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’ তথা বাঙালি সেনারা তৈরি করে এক অমিত সাহস ও বীরবিক্রমের দৃষ্টান্ত। বাঙালি সেনাদের প্রচ- প্রতিরোধের মুখে লাহোরের উপকন্ঠে এসে স্তব্ধ হয়ে যায় ভারতীয় হানাদার বাহিনী। (তথ্যসূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং ‘সিআইএ’)
সুতরাং দেখা গেলো, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে যেখানে বাঙালি সেনাবাহিনীর দুর্বার আঘাত ও প্রতিরোধের ফলে ভারতীয় হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়, সেখানে বাঙালি সেনাদের অবদানের কথা উল্লেখই করা হয়নি।
স্বাভাবিকভাবে উচিত ছিলো- ঐ যুদ্ধে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান) মুসলমানরা বুকে মাইন বেঁধে কিভাবে ভারতীয় হানাদার ট্যাঙ্কের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো, কিভাবে যালিম বর্বর হানাদার ভারতকে নাস্তানাবুদ করেছিলো তার ইতিহাস তুলে ধরা। কিন্তু সেই ইতিহাসের ধারে কাছে না যেয়ে বরং পড়ানো হচ্ছে ভিন্ন জিনিস। এরপর ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের চ্যাপ্টারে নিয়ে আসা হলো সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ। যেমন-
-ইসলাম বিপন্ন হওয়া,
-রবীন্দ্র সংস্কৃতিকে হিন্দু সংস্কৃতি বলা,
-নজরুলের গানে হিন্দুয়ানীর অভিযোগে বন্ধ করার চেষ্টা করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই কারণে নাকি বাঙালিরা স্বায়ত্তশাসনের গুরুত্ব অনুধাবন করে! নাউযুবিল্লাহ!
পাঠক, পাঠ্যপুস্তকে কিভাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল ও বিকৃত ইতিহাস পড়িয়ে ভারতের দিকে আমাদের শিক্ষার্থীদের মানসিকতা ডাইভার্ট করানো হচ্ছে।
কি জঘন্য মিথ্যাচার! কি গভীর ষড়যন্ত্র! জেগে উঠো বাঙালি মুসলমান। তোমাদের স্বাধীনতা বিপন্নের পথে।
-মুহম্মদ আব্দুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত আবয়াদ্ব ইবনে হাম্মাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিকদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (৪)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২৩০০)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (৩)
২৩ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিভিন্ন জিহাদে ব্যবহৃত মহাসম্মানিত মহাপবিত্র সমরাস্ত্রসমূহ এবং বাহন মুবারক উনাদের পরিচিতি মুবারক (২)
১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু লাওলাক, ছাহিবু ক্বাবা কাওসাইনি আও আদনা, ছাহিবে কাওছার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে মুনাফিক্বদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রামাণ্য ইতিহাস (১)
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, ক্বয়িদুল মুরসালীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র জীবনী মুবারক (২২৯৯)
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
উসওয়াতুন হাসানাহ, খুলুকুন আযীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গাযওয়া বা অভিযান মুবারক
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












